“এখন দ্বিগুণ খেসারত দিতে হবে। টাকাও যাবে, মালপত্রও যাবে। আবার যদি আমাদেরকে মেরে অন্যদেরকে শিক্ষা দিতে চায় তাহলে তো হয়েছেই।”
ফার্স্ট মেট মাথা ঝাঁকালো, আরেকজনের তেল বাঁচাতে নিজের জান খোয়াতে মোটেও রাজি নয় সে। “আমি বন্দুক বের করছি।” বলল সে।
ব্রাকো তার দিকে একটা চাবি ছুঁড়ে দিয়ে বলল, “সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা। হয় মারো নয় মরো পরিস্থিতি এখন।”
ফার্স্ট মেট অস্ত্রাগারের দিকে ছুটলো। তার আগে নিচের ডেকের সবাইকে ঘুম থেকে তুলবে। সে বের হতেই হুইল হাউজে আরেকজনকে দেখা গেল। একজন যাত্রী। অদ্ভুত নাম তার আম্মন তা। ব্রাকো আর ওর লোকেরা মিসরী বলে ডাকে।
লিকলিকে গড়ন লোকটার। চোখ জোড়া গভীর, মাথা কামানো। গায়ের রং গাঢ় বাদামি। চেহারায় উল্লেখযোগ্য কোনো বৈশিষ্ট্য লোকটার নেই। ব্রাকো ভেবে পায় না কোন দুঃখে লোকটা মাত্র কয়েক ব্যারেল হাশিস/(ভভাংগাঁজার শরতে) বা অন্য কোনো সস্তা মাদক নিয়ে এই ভয়ানক রাস্তায় ভ্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
“জাহাজের বাতি সব নিভানো যে? আর আমরা আরেক দিকে যাচ্ছি কেন?” কোনো ভনিতা না করেই আম্মান তা জিজ্ঞেস করল।
“সেটাও কী বুঝিয়ে বলতে হবে?”
কিছুক্ষণ চিন্তা করেই মিরীয় দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে পারলো। তারপর কোমর থেকে একটা নাইন মি. মি. পিস্তল বের করে হাতে ঝুলিয়ে বেরিয়ে গেল। জাহাজের কিনারে গলা লম্বা করে অন্ধকারে দেখার চেষ্টা করতে লাগল।
“এদিকে না, পিছন দিকে,” ব্রাকো বলল।
বলামাত্রই ব্রাকো বুঝলল ওর ধারণা ভুল। কারণ সামনে থেকে দুটো লাইট এসে পড়েছে তেরিনোর ওপর। একটার ঝলকে ব্রিজে দাঁড়ানো সবার চোখ ধাধিয়ে গেল, অপরটা জাহাজের রেলিং ধরে ঘুরতে লাগল।
দুটো রাবারের ডিঙ্গিও দেখা গেল পানিতে। ব্রাকো সাথে সাথে জাহাজের মুখ সেদিকে ঘুরিয়ে দিল। কিন্তু কাজ হলো না। তারা দূরে সরে গিয়ে আবার জাহাজের পিছু নিলো। ধরে ফেলবে সহসাই। ডিঙ্গি থেকে হুক বাঁধা দড়ি ছুঁড়ে মারলো কেউ। জাহাজের রেলিং-এ সেটা আটকাতেই কয়েক সেকেন্ড পরই দুই দল অস্ত্রধারী লোক উঠে এলো তোরিনোর ডেকে।
“মাথা নামান,” ব্রাকো চিৎকার করে উঠল।
সাথে সাথে শুরু হলো গুলি। ব্রিজের জানালা আর দেয়াল ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো মুহূর্তেই। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো মিসরীয় লোকটা একচুলও নড়েনি। এমনকি কোনো কিছুর আড়ালও নেয়নি। গুলি থামতেই সে হুইল হাউজের আড়ালে সরে গেল, তারপর হাতের পিস্তল তুলে পরপর কয়েকটা গুলি করল।
ব্রাকো অবাক হয়ে দেখে একটাও মিস হয়নি। ঢেউয়ের তালে জাহাজ দুলছে, তারপরও আম্মন তা দুরূহ কোণ থেকে গুলি করে দুজন লোকের একেবারে ঘিলু বের করে দিল। তৃতীয় গুলিতে ওদের দিকে তাক করা একটা স্পটলাইট ভেঙে চুর চুর হয়ে গেল।
গুলি করেই মিসরীয়টা পিছনে সরে দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল। পরমুহূর্তেই সেদিকে অটোমেটিক পিস্তল গর্জে উঠল।
ব্রাকো তখনও মেঝের ওপরেই পড়ে আছে। কারণ গুলি হুইল হাউজের দিকেও করা হচ্ছে। একটা বুলেট ওর বাহু ছুঁয়ে চলে গেল। আরেকটা মামবুকার একটা বোতল গড়িয়ে দিল। সৌভাগ্যের জন্য ব্রাকো রেখে দিয়েছিল ওটা। কিন্তু ভাঙ্গা বোতল থেকে তরল গড়িয়ে পড়তেই ব্রাকো বুঝলো আজ ভাগ্য বেশি সুবিধার না। বোতলে তিনটা কফি বীজ ছিল। একটা হলো উন্নতি, একটা স্বাস্থ্য আরেকটা শান্তির বাহক হিসেবে। কিন্তু তিনটার কোনোটাই এখন চোখে পড়ল না।
রেগেমেগে ব্রাকো ওর পিস্তল বের করল। একবার মিসরীয়টার দিকে তাকাল। এখনও বহাল তরিয়তে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার সাহস আছে বটে। আর নিশানাও মারাত্মক। লোকটার সম্পর্কে ধারণা আমূল পাল্টে গেছে ব্রাকোর। লোকটা যে কে তা ব্রাকো জানে না, তবে মিসরীয় লোকটা-ই যে এই জাহাজের সবচেয়ে মারাত্মক লোক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভাগ্য ভালো। লোকটা আমাদের দলেই আছে। মনে মনে ভাবলো ব্রাকো।
“ফাটাফাটি শুটিং। আপনি যে এই জিনিস, আগে বুঝিনি।”
“আমি বুঝতে দেইনি তাই,” মিসরীয় বলল।
আবার ভেসে এলো গুলির শব্দ। এবার জাহাজের পিছন দিক থেকে। জবাবে ব্রাকোও সেদিকে গুলি ছুড়লো এক পশলা।
“খামাখা গুলি নষ্ট করছেন, মিসরীয় বলল।
“হোক, কিছুটা সময় তো অতিরিক্ত পাবো,” ব্রাকো জবাব দিল।
“সময় সব ওদের হাতে। ওদের কমপক্ষে এক ডজন লোক আছে এখন জাহাজে। আরো একটা রাবারে ভিঙ্গি এদিকেই আসছে।” মিসরীয় জানালো।
পিছন দিকে আরো এক পশলা গুলি বিনিময়ের শব্দে বোঝা গেল যে মিসরীয়র কথা মিথ্যা নয়।
“ঝামেলা হয়ে গেল দেখছি। পিস্তল-টিস্তল তো সব পিছন দিকেই রাখা। আমার লোকেরা যদি ওগুলো আনতে না পারে তাহলে তো খেলা এখানেই শেষ।” ব্রাকো বলল।
মিসরীয় হুইল হাউজের দরজার দিকে এগিয়ে বাইরে তাকাল। তারপর ঘুরে বলল, “আপনার আশংকাই সত্যি।”
বাইরে ভারি পদশব্দ শোনা গেল। ব্রাকো পিস্তল হতে গুলি করার জন্যে রেডি হয়ে গেল। কিন্তু মিসরীয় দরজা খুলতেই কাঁপতে কাঁপতে এক আহত ক্রু মুখ থুবড়ে পড়ল ঘরটায়।
“ওরা নিচের ডেকের দখল নিয়ে নিয়েছে। কোনো মতে উঠে বসে বলল সে।
“রাইফেলগুলো কই?”
ক্রু মাথা নাড়লো, “ওগুলোর কাছেও যেতে পারিনি।”
লোকটা পেট চেপে ধরে আছে। বুলেটে ফুটো হয়ে গেছে জায়গাটা। রক্ত পড়ছে চুঁইয়ে চুঁইয়ে। কাত হয়ে পড়ে গেল একদিকে, নড়ছে না।