“আমাদের ধারণা সেরকমই। তবে পুরোপুরি ওরকম না। ছেলেটার বেলায় যা হয়েছে তা হলো ঠাণ্ডা পানি ওর শরীরে যে প্রভাব শুরু করেছিল, সাধারণ তাপমাত্রায় ফিরতেই তা আবার চলে যায়। কিন্তু এই লোকগুলোর তো আর তাপমাত্রা পরিবর্তন হয়নি, এটা হয়েছে কোনো একটা বিষের প্রভাবে। আর, এতক্ষণ পর্যন্ত গরম করা বলেন, ঠাণ্ডা করা বলেন, কারেন্ট থেকে শুরু করে এড্রেনালিন কোনো কিছুই বিষটার প্রভাব কাটাতে পারছে না।”
“বিষটা কোন ধরনের সেটা কি জানা গেছে?” কার্ট জিজ্ঞেস করল।
“না।”
“জিনিসটা নিশ্চয়ই ঐ জাহাজটার ঐ ধোয়া থেকে এসেছে।”
“সেরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আমরা ধোয়াটা নিয়ে পরীক্ষা করেছি। পোড়া জ্বালানি বাদে ওতে আর কিছুই নেই। সামান্য সীসা আর অ্যাসবেসটস অবশ্য আছে। কিন্তু যে কোনো জাহাজে আগুন লাগলেই এগুলো পাওয়া যায়।” রেনাটা জবাব দিল।
“তার মানে জাহাজে আগুন লাগা আর ঘন ধোয়ার আস্তরণে পুরো দ্বীপ ঢেকে যাওয়া একটা কাকতাল মাত্র? আমার বিশ্বাস হয় না। কার্ট বলল।
“আমারও না। কিন্তু ঐ মেঘটাকে দোষ দেয়ার মতো কিছু সেটার মধ্যে পাওয়া যায়নি। এটা বড়জোর চোখের জ্বলুনি, কাশি বা হাপানির সৃষ্টি করতে পারে।”
“যদি জাহাজের ধোয়া-ই না হয়, তাহলে কি?”
রেনাটা প্রথমেই জবাব দিল না। থেমে কিছুক্ষণ কার্টকে দেখলো ভালো করে। তারপর বলল, “আমাদের ধারণা এটা একটা নার্ভ টক্সিন। বিস্ফোরণটার সময় কোনোভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সেটা ইচ্ছাকৃত কি-না তা বলা যাচ্ছে না। অনেক নার্ভ গ্যাসই খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ঝামেলাটা হলো আমরা মাটি, বাতাস বা রক্ত বা কোষ কোথাও বিষটার কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাইনি। তার মানে জিনিসটা যা-ই হোক সেটার আয়ু মাত্র কয়েক ঘণ্টা।”
কার্টের যুক্তিটা মনে ধরল, কিন্তু তারপরও কিছু জিনিসের ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু ল্যাম্পেডুসায় কেন?”
“কেউ জানে না, এ কারণেই ব্যাপারটাকে দুর্ঘটনা বলতেই আমরা বেশি আগ্রহী।” রেনাটা জবাব দিল।
কার্ট ভাবতে ভাবতে রুমের চারপাশে চোখ বুলালো। রেনাটার ডেস্কের পেছনেই দুটো সাদা বোড়। তাতে নানান মেডিকেলের কঠিন কঠিন শব্দ লেখা। পাশে একগাদা ওষুধের নাম। যেগুলো ইতোমধ্যে ব্যবহার করে দেখা হয়েছে সেগুলো কেটে দেয়া। পাশেই ভূমধ্যসাগরের একটা মানচিত্র। সেটার বিভিন্ন জায়গায় পিন গোঁজা। একটা পিন লিবিয়ার, একটা পিন উত্তর সুদানের একটা জায়গায়। মধ্যপ্রাচ্য আর পশ্চিম ইউরোপেও অনেক পিন দেখা গেল।
বোর্ডের দিকে ইঙ্গিত করে কার্ট বলল, “রেডিও মেসেজে আপনি একটা আক্রমণের কথা বলেছিলেন। আমার ধারণা এরকম ঘটনা আরো ঘটেছে। এবারই প্রথম না।”
রেনাটা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো। “আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা একটু বেশি-ই ভালো। উত্তর হচ্ছে~~ হ্যাঁ। ছয় মাস আগে লিবিয়ার একদল প্রগতিবাদী বিদ্রোহীরও একই অবস্থা হয়। কেউ জানে না কীভাবে হয়েছে। তারা মারা যায় আট দিন পর। ইতালির সাথে লিবিয়ার সুসম্পর্ক থাকায় ইতালি ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে রাজি হয়। তদন্ত করতে গিয়েই দেখা যায় যে লিবিয়ার আরো কিছু জায়গায় একই ঘটনা ঘটেছে। তারপর খোঁজ পাওয়া যায় যে শুধু লিবিয়া না ম্যাপের এসব জায়গাতেও একই অবস্থা। প্রতিটা ক্ষেত্রেই হয় কোনো, বিদ্রোহী দল বা কোনো শক্তিশালী ব্যক্তি এরকম আজব কোমায় চলে যায় আর মারা যায়। আমরা একটা টাস্কফোর্স গঠন করি। তারপর এই জাহাজটায় আমাদের ভাসমান ল্যাব বানিয়ে উত্তর খোঁজা শুরু করি।”
কার্ট মনে মনে ব্যাপারটার প্রশংসা না করে পারলো না। এসব কিছুতে আপনার ভূমিকা কি?”
“আমি একজন ডাক্তার।” আহতস্বরে বলল রেনাটা। “আমি একজন নিউরোবায়োলজী বিশেষজ্ঞ। কাজ করি ইতালিয়ান সরকারের হয়ে।”
“তাহলে আক্রমণটা যখন হলো তখন-ই আপনি ল্যাম্পেডুসায় ছিলেন কেন?” রেনাটা শব্দ করে শ্বাস ফেলল, “আমি ওখানে ছিলাম আমাদের একমাত্র সন্দেহভাজনকে চোখে চোখে রাখতে। ঐ হাসপাতালেরই একজন ডাক্তার।
“হুম! তাইতো বলি, আর কেউ জানে না কিন্তু আপনি কীভাবে জানেন যে কীভাবে বাঁচতে হবে।”
রেনাটা মাথা ঝাঁকালো। “আমার মতো যদি আপনিও সিরিয়া, ইরাক এসব জায়গায় ঘুরতেন আর দেখতেন কীভাবে চোখের সামনে মানুষ ঠাসঠাস করে মরে যাচ্ছে, যদি সারাক্ষণই ভয় লাগতো যে এক অদৃশ্য গ্যাস আপনাকে শেষ করার জন্য বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে তাহলে আপনিও আমার মতো অতি সতর্ক হয়েই থাকতেন সারাক্ষণ। সারাক্ষণ ভয়। প্রায় পাগলের মতো অবস্থা। তাই যখনই দেখলাম যে ঐ কালো মেঘটা যার কাছেই যাচ্ছে সে-ই জায়গায় পড়ে যাচ্ছে তখনই বুঝলাম যে কী হচ্ছে। বহুবার এসব দেখা আমার।”
কার্ট আবারো মনে মনে মহিলার সাহস ও বুদ্ধির প্রশংসা করল। “তা ঐ যে ঐ লোকটা যে আমাদেরকে মারতে চেয়েছিল, সে-ই কি আপনার সন্দেহভাজন?”
“না। আসলে আমরা জানি না কে সে। তার কোনো পরিচয়ই বের করা যায়নি। তার কোনো সনাক্তকরণ চিহ্ন আমরা পাইনি। সমস্ত ফিঙ্গার প্রিন্ট মুছে ফেলা। সম্ভবত ইচ্ছাকৃত কাজ সেটা। শুধু ক্ষত থেকে কিছু কোষ পেয়েছি। দ্বীপে আগত কোনো লোকের বর্ণনার সাথেই তার দৈহিক গঠনের মিল নেই। আপনি হয়তো ভাবছেন এটাতো হওয়ারই কথা, কিন্তু ল্যাম্পেডুসায় বেড়াতে বা থাকতে যে-ই আসুক প্রত্যেকেরই পুংখানুপুংখ বর্ণনা লিপিবদ্ধ থাকে। এয়ারপোর্ট, বন্দর বা কোনো ভাঙ্গা কাঠে করেও যদি দ্বীপে এসে ওঠেন এটা করা হবে।”