জো একটা ভ্রূ সামান্য তুলে এমন ভঙ্গিতে কফিতে চুমুক দিল, যার অর্থ দাঁড়ায়, বুঝেছি! বুঝেছি!’
“সত্যি! আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দরকার,” কার্ট বলল।
“তা তো বটেই। প্রথম প্রশ্ন হলো আপনার নাম্বারটা? তারপরই জিজ্ঞেস করবে আপনার কেবিনে যাবেন নাকি আমারটায় আসবেন?” জো ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল।
কার্ট হেসে দিল। “আরে ধুর! আমি অপারেশন রুমে যাওয়ার পর উনি এমন কিছু কথা বলেছে যেগুলো খুবই গোলমেলে। যে লোকটা আমাদেরকে মারতে চেয়েছিল মহিলা তার সম্পর্কে কিছু একটা জানে। আর খেয়াল করেছে ভদ্র মহিলা একদম শুরু থেকেই এই ঘটনাটাকে আক্রমণ… আক্রমণ বলে আসছে। একদম সেই রেডিও কল থেকেই।”
জো’র চেহারা থেকে রসিকতা মুছে গেল, “কি বলতে চাচ্ছ তুমি?”
কার্ট কাঁধ ঝাঁকালো, “সমুদ্রতীরে একটা জাহাজ পুড়ছে, সেখান থেকে রহস্যময় কালো ধোঁয়ায় শহর ছেয়ে গেল, টপটপ মানুষসহ সব প্রাণী জায়গায় পড়ে মরতে লাগল। তুমি এটাকে একটা বিপদ বলতে পারো, দুর্ঘটনা বলতে পারো বা দুর্যোগও বলা চলে। কিন্তু আক্রমণ বলো কোন হিসাবে?”
“কথাটা কিন্তু মারাত্মক।” জো বলল।
“এই কফিটার মতোই মারাত্মক।” কার্ট বলল।
জো কিছুক্ষণ দূর দিগন্তে তাকিয়ে থেকে বলল, “তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ তা একটু একটু ধরতে পারছি। সে কথা ভাবতে ভাবতেই আরেকটা কথা মাথায় এলো। সে এত দ্রুত কীভাবে জানালো যে বাঁচতে হলে সবাইকে নিয়ে রুম সিল করে থাকতে হবে। আর কেউ তা জানে না। ডাক্তার হোক আর যা ই হোক এত দ্রুত তো এটা জানার কথা না।”
কার্ট মাথা ঝাঁকালো, “যদি কেউ আগে থেকেই জানে যে এ ধরনের বিপদ আসছে শুধু তখনই এটা সম্ভব।”
“জরুরি অবস্থা মোকাবেলা।”
“কিংবা সবসময় এভাবেই ওরা অপারেশন চালায়।”
কার্ট চারদিকে তাকাল। তিনজন ইতালিয়ান সৈন্যকে রাখা হয়েছে ওদেরকে খেয়াল করার জন্য। দায়সারা একটা কাজ। কারোর-ই তাই ওদের দিকে মনোযোগ নেই। দুজন একদম শেষ মাথায় রেলিং-এ ত্র দিয়ে ঝুঁকে গল্প করছে। তৃতীয়জন অবশ্য কাছেই। একটা ক্রেন-এর পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। “গার্ডগুলোর মনোযোগ একটু অন্যদিকে সরাতে পারবে?”
“পারবো, তবে কথা দিতে হবে যে তুমি ওদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এমন কোনো গোলমাল পাকাবে যাতে আমরা মহা বিপদে পড়ি আর ওরা আমাদেরকে জাহাজ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, জো বলল।
কার্ট শপথ করার ভঙ্গিতে হাত তুলে বলল, “তোমার নামে শপথ করলাম।”
“ঠিক আছে তাহলে। শুরু করা যাক।” কফির মগে শেষ চুমুকটা দিয়ে বলল জো।
কার্ট দেখলো জো অলস ভঙ্গিতে তৃতীয় সৈন্যটার দিকে এগিয়ে গেল। এই একজনের মনোযোগ সরাতে পারলেই হবে। বাকিরা অনেক দূরে। জো কিছু একটা নিয়ে কথা বলা শুরু করল। কিছুক্ষণ পরেই তুমুল আলোচনা জমে উঠল। জো কথা বলার সাথে সাথে প্রচুর হাত নাড়ছে। ফলে সৈন্যটার পুরো মনোযোগ জো-এর দিকে।
কার্ট উঠে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ সামনে বাড়লো। তারপর একটা বন্ধ হ্যাঁচওয়ের পাশে বসে পড়ল। কথা বলতে বলতে জো আকাশের দিকে কিছু একটা দেখলো আর সৈন্যটা সেদিকে তাকাতে গিয়ে সূর্যের আলোর কারণে চোখের ওপর হাত দিল। এই সুযোগে কার্ট ঝট করে হ্যাঁচটা খুলে ভেতরে ঢুকে আবার নীরবে লাগিয়ে দিল।
ভাগ্য ভালো যে সামনের বারান্দাটা খালি। অবাক হলো না কার্ট। জাহাজটা ভালোই বড়। ছয়শো ফুট লম্বা কিন্তু ক্রুসহ আরোহী মাত্র দুশো জনও হবে না। তাই জাহাজের বেশিরভাগ জায়গা খালিই পড়ে থাকে। এখন ওকে রোগী রাখার জায়গাটা খুঁজে বের করতে হবে। সম্ভবত ওখানেই পাওয়া যাবে ডা. আমব্রোসিনিকে।
ও প্রথম বারান্দাটা ধরেই এগুলো। জাহাজের সামনের দিকে যাচ্ছে। ওখানেই ওদেরকে গোসল আর মেডিকেল টেস্ট করা হয়েছে। রোগী রাখার জায়গাটাও ওটার কাছেই হওয়ার কথা। যদি খুঁজে পায় তাহলে কোনো একটা অসুখের ভান করে ঢুকে পড়তে হবে। কাশি বা পেট ব্যথা কিছু একটা বলতে হবে। ক্লাস এইটে স্কুল পালানোর পর এমন অজুহাত আর কোথাও দেয়ার প্রয়োজন পড়েনি।
রাস্তার পাশেই একটা জিনিসপত্র ঠাসা বক্স পড়ে থাকতে দেখে তুলে নিলো কার্ট। নৌবাহিনী আর তারপর NUMA-তে কাজ করার সুবাদে ও জানে, যদি তুমি চাও যে যাত্রাপথে তোমাকে কেউ না আটকাক, তাহলে হাঁটতে হবে দ্রুত, কারো চোখের দিকে তাকানো যাবে না আর সবচে ভালো হয় হাতে কিছু একটা নিয়ে এমনভাবে হাঁটো যে জিনিসটা যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছে দিতে হবে।
কৌশলটা এখানেও দারুণভাবে খেটে গেল। একটু পরই একদল নাবিক ওকে পাশ কাটালো কিন্তু দ্বিতীয় বার ফিরেও তাকাল না। কার্ট কিছুদর এগোতেই দেখে নিচে নামার সিঁড়ি। কি মনে করে নেমে এলো নিচে।
নিচে এসে এদিক সেদিক ঘুরে-টুরে টের পেল ও রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। মেডিকেল সেন্টারের নাম গন্ধও নেই আশে পাশে। এদিকে শুধু স্টোর রুম আর তালাবদ্ধ কেবিন।
“সাব্বাস ব্যাটা।” নিজেকেই নিজে শোনালো কার্ট। এবার কোন দিকে যাবে ভাবতে ভাবতেই ও দেখে সামনে দিয়ে ল্যাব কোট পরা দুজন নেমে আসছে। একজন পুরুষ অপরজন মহিলা। নিজেদের মধ্যে আলাপে মগ্ন।
কার্টকে পাশ কাটাতেই পিছু নিলো। “রাস্তা খুঁজে পাওয়ার ১০১টি উপায়ের প্রথম উপায় হলো : জায়গাটা চেনে এমন কারো পিছু পিছু যাওয়া।” নিজেকেই বলল আবার কার্ট।