“হুম।” স্যান্ডেকার জবাব দিলেন। এখন আর কণ্ঠে রসিকতা নেই। কারুথার্সের স্বর শুনেই বোঝা যাচ্ছে ঘটনা এখানেই শেষ নয়। “আর কিছু?”
“তেমন কিছু না তবে ঘটনাটা জানিয়েছে আপনার সাবেক প্রতিষ্ঠান NUMA”। স্যান্ডেকার NUMA-র প্রতিষ্ঠাতা। ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি-ই প্রতিষ্ঠানটা পরিচালনা করতেন। “NUMA? ওরা কীভাবে এ ব্যাপারে প্রথম জানলো?”
“আমি সবটুকু জানি না, মি. ভাইস প্রেসিডেন্ট।”
“ধন্যবাদ টেরি। তুমি চলে আসো।” স্যান্ডেকার বললেন।
কারুথার্স ফোন রাখতেই স্যান্ডেকার বিমানের কমিউনিকেশন অফিসারকে ফোন করলেন, NUMA হেড কোয়ার্টারের সাথে কথা বলবো, লাইন লাগাও।”
কয়েক সেকেন্ডেই কলটা চলে গেল NUMA’র বর্তমান সহকারী পরিচালক রুডি গান-এর কাছে।
“রুডি, স্যান্ডেকার বলছি। ভূ-মধ্যসাগরে কি নাকি হয়েছে?”
“হ্যাঁ।”
“কার কাণ্ড এটা? ডার্ক?”
ডার্ক পিট NUMA’র বর্তমান পরিচালক। স্যান্ডেকার যতদিন পরিচালক ছিলেন পিট ছিল তার এক নাম্বার এজেন্ট। পরিচালক হওয়ার পরও অফিসের চাইতে সরাসরি অভিযানে নেমে পড়তেই বেশি ভালো লাগে পিটের।
“না। ডার্ক এখন সাউথ আফ্রিকায়। ঘটনা ঘটিয়েছে অস্টিন আর জাভালা।” রুডি বলল।
“জানতাম। একজন না হলে অন্যজন হবেই। খুলে বলো তো ঘটনাটা।”
রুডি যেটুকু জানে বিস্তারিত বলল। যা যা জানে না তা-ও বললো। ও ইতোমধ্যে ইতালিয়ান কোস্ট গার্ডের একজন অফিসার আর ইতালিয়ান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সীর একজন পরিচালকের সাথেও করা বলেছে। এর বাইরে আর কিছু জানা নেই।
“কার্ট বা জো-এর সাথে সরাসরি কথা হয়নি আমার। সী ড্রাগনের ক্যাপ্টেন বলে যে ওরা না ঘণ্টা খানেক আগে তীরে উঠেছে কেউ বেঁচে আছে কি-না দেখতে। তারপর আর খোঁজ নেই।” রুডি বলল।
অন্য কেউ হলে অবাক হতো যে লোক দুটো কি পাগল নাকি যে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এরকম বিষাক্ত একটা এলাকায় গেল। কিন্তু স্যান্ডেকার অস্টিন আর জাভালার ভেতর এই গুণটা ধরতে পেরেছিলেন বলেই ওদেরকে দলে নিয়েছিলেন।
“হুম। ওরাই পারবে যদি কেউ বেঁচে থাকে তত তাদের উদ্ধার করতে।” স্যান্ডেকার বললেন।
“জ্বী। আপনি চাইলে আপনাকে নিয়মিত খবর পাঠাতে পারি।” রুডি প্রস্তাব দিল।
“তাহলে তো ভালোই হয়।” স্যান্ডেকার কথাটা বলামাত্র ইঞ্জিন গর্জে উঠল।” বিমান ছেড়ে দিচ্ছে। কার্ট আর জো-এর সাথে কথা হলে বোলো আমি ওদিকেই আসছি। পিঠে ছালা বেঁধে রাখে যেন, নইলে চামড়া আর থাকবে না।”
ব্যাপারটা নিছকই ঠাট্টা, অবশ্যই। কিন্তু অন্যকে চাঙ্গা করতে জুড়ি নেই। স্যান্ডেকার এই ব্যাপারটা খুবই ভালো পারেন।
“অবশ্যই বলবো, মি. ভাইস প্রেসিডেন্ট।” স্পষ্ট বোঝা গেল রুডি এখন আগের চেয়ে বেশ খানিকটা প্রফুল্ল।
স্যান্ডেকার ফোন রাখতেই বিমান দৌড়ানো শুরু করল। মাইল দেড়েক পরই নাক উঁচু করে এয়ারফোর্স টু উঠে এলো আকাশে। যাবে রোমে। স্যান্ডেকারের মাথায় অবশ্য নোম নেই। তিনি তখন ভাবছেন কার্ট আর জো আবার নতুন কি ঝামেলায় জড়ালো। কিন্তু কল্পনাও করেননি যে সশরীরে তার উত্তর খুঁজে পাবেন।
১১. রোগী পরিবাহী জাহাজ নাটাল
১১.
রোগী পরিবাহী জাহাজ নাটাল
ভূমধ্যসাগর
কার্ট, জো আর উদ্ধারকৃত বাকিরা একটা ইতালিয়ান মালবাহী জাহাজের ডেক এ বসে আছে। এটার মাস্তুলে একটা বিশাল লাল রঙের ক্রস আঁকা। ওদেরকে রাসায়নিক প্রতিরোধী সুট পরিয়ে একটা মিলিটারি হেলিকপ্টারে করে পূর্ব দিকে নিয়ে আসা হয়েছে। সবচে কষ্ট হয়েছে জো-কে MRI মেশিনটা থেকে ছোটাতে। কিন্তু ওর কাপড়ের সাথে লাগানো ধাতব অংশগুলো কেটে ফেলতেই সহজে ওকে ছুটিয়ে ফেলা যায়।
তারপর বিশেষ সাবান দিয়ে গোসল করে দূষণমুক্ত হয়ে, কয়েকটা মেডিকেল টেস্ট করার পর এখন স্বাভাবিক কাপড় পরার সুযোগ পেয়েছে। তারপর থেকেই ডেক-এ বসে আছে আর কফি খাচ্ছে। এতো ভালো এসপ্রেসো শেষ কবে খেয়েছে কার্ট মনে করতে পারে না।
দ্বিতীয় কাপ খাওয়ার পর কার্টের কেমন যেন অস্থির লাগতে লাগলো। আক্ষরিক অর্থেই বসে থাকতে পারছে না।
“তোমাকে কেমন যেন লাগছে।” জো বলল।
“মনটা কেমন খুঁতখুঁত করছে।”
“ক্যাফেইনের জন্যে এমন হচ্ছে। এত কফি খেলে তো হাতীও শুয়ে পড়বে।”
কার্ট একবার ওর হাতের খালি কাপটার দিকে নজর বুলিয়ে আবার জো এর দিকে তাকাল, “আশেপাশে ভালো করে দেখতে একবার। অন্যরকম কিছু চোখে পড়ছে?”
“আচ্ছা বলছি।” জো জবাব দিল। তারপর চারপাশে একবার মাথা ঘুরিয়ে বলল, “নীল আকাশ, ঝিকিমিকি পানি। নতুন জীবন পাওয়ায় সবাই খুশি। তবে আমি নিশ্চিত এর মধ্যেও তুমি কোনো একটা ঘাপলা ঠিকই খুঁজে পেয়েছ।”
“হুম। আমরা সবাই এখানে। ওখান থেকে বেঁচে আসা সবাই। কিন্তু একজন নেই। আমি যার সাথে সবচে বেশি কথা বলতে চাচ্ছি সেই মানুষটাই নেই : ড. আমব্রোসিনি।”
“জাহাজে ওঠার সময় দেখলাম মহিলাকে।” কফিতে চিনি ঢালতে ঢালতে বলল জো। “তার সাথে দেখা করার জন্য উতলা হওয়ায় তোমাকে দোষ দেয়া যায় না। এমন ডাক্তারের রোগী হতে কে না চায়।”
মহিলা যে দারুণ আকর্ষণীয় সে কথা কার্ট অস্বীকার করে না মোটেও, তবে ওর দেখা করতে চাওয়ার কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। “বিশ্বাস করবে না জানি, তবে আমার আগ্রহ অন্য কারণে।”