“গুতো খেয়েছি।” কার্ট বলল।
রেনাটার মনে পড়ল ও গুলির শব্দ শুনেছিল। কিন্তু তখন ভেবেছিল কল্পনা বোধহয়।
“গুলির শব্দ শুনেছিলাম। কেউ কী আপনাদের আক্রমণ করেছিল?”
কার্টের চেহারা কঠোর হয়ে গেল, “সত্যি কথা হলো, হ্যাঁ।”
“দেখতে কেমন? একা-ই ছিল?” রেনাটা জিজ্ঞেস করল।
কার্ট ডান-পা থেকে বাম-পায়ে দেহের ভার বদল করল। তারপর বলল, “এখন পর্যন্ত একজনকেই দেখেছি। আপনারা কী কোনো ঝামেলা আশা করেছিলেন?” কণ্ঠে বিন্দুমাত্র কোমলতা নেই এখন আর।
রেনাটা কেমন ইতস্তত করল। ইতোমধ্যেই অনেক বেশি বলে ফেলেছে ও। আর যদি বিপদ হয়ও তাহলে এই লোকটাই সম্ভবত ওদের একমাত্র ভরসা। অন্তত ইতালিয়ান বাহিনী আসার আগ পর্যন্ত একে দরকার।
“আমি আসলে…” বলতে গিয়ে থেমে গেল রেনাটা। তারপর কি মনে করে বলল, “পুরো ব্যাপারটাই আসলে খুব গোলমেলে।”
রেনাটা দেখলো লোকটা সরাসরি ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। যদিও লোকটার হেলমেটের কাঁচ ফাটা আর মাঝখানে দরজার কাঁচও আছে, কিন্তু তারপরও ও বুঝলো লোকটা ওকে আপাদমস্তক মেপে দেখছে। ঠিক যেন ওর ভেতরটা পর্যন্ত দেখে নিচ্ছে। রেনাটাও চেষ্টা করল কিন্তু লোকটার মুখের ভাব ঠিক মতো বোঝা গেল না।
“ঠিক বলেছেন। খুবই গোলমেলে। একেবারে শুরু থেকেই।” অবশেষে বলল লোকটা। কণ্ঠটা শুনেই রেনাটা বুঝলো, লোকটা আসলে তার দিকেই ইঙ্গিত করছে। কিন্তু চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া ওর আর কিছুই করার নেই। লোকটা ওর জীবন বাঁচিয়েছে ঠিক। কিন্তু এখনো তার পরিচয় সে জানে না।
.
১০.
রিগ্যান ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, ওয়াশিংটন ডি.সি.
ভোর ৫:৩০ মিনিট
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেমস স্যান্ডেকার নিজের রুপালি ‘জিপো’ লাইটারটা দিয়ে। ঠোঁটে ধরা সিগারেটটা জ্বাললেন। চল্লিশ বছর আগে হাওয়াই থেকে লাইটারটা কেনা। আরো বেশ কয়েকটা লাইটার আছে তার। এর মধ্যে কয়েকটা বেশ দামি। কিন্তু দীর্ঘ দিনের সঙ্গী এই মলিন হয়ে ক্ষয়ে যাওয়া লাইটারটাই তার সবচে প্রিয়। যতবারই হাতে নেন ততবারই মনে পড়ে যে কিছু কিছু টিকে থাকার জন্যেই তৈরি হয়।
বুক ভরে ধোয়া টেনে গলগল করে ছেড়ে দিলেন। সিগারের গন্ধটা বেশ ভালো। আশেপাশের সবাই তাকে আড়চোখে দেখছে। এয়ারফোর্স টু’তে (ভাইস প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান) ধূমপান নিষেধ। কিন্তু কেউই তাকে এটা বলার সাহস পাচ্ছে না। এই মুহূর্তে তাদের যাওয়ার কথা ছিল রোমে। একটা অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা। কিন্তু তারা অলস বসে আছে রানওয়েতেই।
সত্যি কথা হলো, মাত্র দশ বা পনের মিনিট বিলম্ব হয়েছে তাদের। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটি না হলে এয়ারফোর্স ওয়ান বা টু কখনোই রওনা দিতে দেরি করে না। আর সেরকম কিছু হলে সিক্রেট সার্ভিসের লোকজন ভাইস প্রেসিডেন্টকে বিমান থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। তারপর ঠিক হলে আবার নিয়ে আসে বিমানে। আজ তা হয়নি।
স্যান্ডেকার মুখ থেকে সিগার নামিয়ে পাশেই তার সহকারী টেরি কারুথার্সের দিকে তাকালেন। টেরির জন্য প্রিন্সটনে। মাথায় তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। আদেশ পালনে সদা তৎপর। তাকে বলা হয়েছে কিন্তু কাজটা বাস্তবায়িত হয়নি এমন নজির নেই। এই ব্যাপারে তার কোনো জুড়ি-ই নেই। কিন্তু নিজ থেকে সে কিছুই করতে পারে না।
“টেরি,” স্যান্ডেকার ডাকলেন।
“জী, মি, ভাইস প্রেসিডেন্ট।”
“টিকিট কেটে বিমানে চড়া বাদ দেয়ার পর থেকে আর কোনোদিন আমাকে রানওয়েতে এতোক্ষণ বসে থাকতে হয়নি। শেষবার যখন এমন হয়, তখন এই বিমানবন্দর বানানোই হয়নি।”
স্যান্ডেকার কাটা কাটাভাবে বললেন। “তাই নাকি?” টেরি বলল।
“হ্যাঁ।” স্যান্ডেকারের গলার সুরেই বোঝা গেল যে তিনি যেটা বোঝাতে চেয়েছেন টেরি সেটা বোঝেনি। “আরে ব্যাটা আমাদের দেরি হচ্ছে কেন? আবহাওয়া খারাপ?”
“না, না! আবহাওয়া একদম ঠিক! আমি একটু আগেই চেক করেছি।”
কারুথার্স জবাব দিল।
“তো কি? পাইলটরা চাবি ভুলে বাসায় ফেলে এসেছে?”
“সেরকম তো মনে হয় না।”
“তাহলে…মনে হয় ওরা ইতালি যাওয়ার রাস্তা ভুলে গেছে?”
কারুথার্স হেসে ফেলল, “ওদের কাছে তো ম্যাপ আছে স্যার।”
“তাই? তাহলে বলো দেখি আমেরিকার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কেন বসে বসে রানওয়েতে হাওয়া খাচ্ছে যেখানে তার এতোক্ষণ উড়াল দেয়ার কথা?”
“এ্যা….আমি কীভাবে বলবো স্যার, আমিতো শুরু থেকে আপনার সাথেই বসে আছি।” কারুথার্স বলল।
“হুম, বসেই আছো। খুব ভালো।”
স্যান্ডেকার কি বুঝাচ্ছেন সেটা বুঝতে কারুথার্সের আরো কিছুক্ষণ লাগল। বুঝতেই লাফ মেরে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “আমি এক্ষুনি ককপিট থেকে খবর নিয়ে আসছি।”
ককপিটেই যাও। নাহয় আমি এতোটা রেগে যেতে পারি যে তোমাকে দেশের সব অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহন সিস্টেমের সমীক্ষা করতে পাঠিয়ে দেবো।
গুলির বেগে ছুটে গেল কারুথার্স। স্যাস্তেকার আরো একবার ধোঁয়া টেনে ছাড়লেন। ধোঁয়া সরতেই দেখেন রুমের সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্ট দুজন হাসি চাপার চেষ্টা করছে।
“এটা হলো ফার্স্ট ক্লাস পাঠদান পদ্ধতি।” স্যান্ডেকার বললেন।
কিছুক্ষণ পরেই স্যান্ডেকারের চেয়ারের হাতলে লাগানো ফোনের বাতি জ্বলা-নেভা শুরু করল।
ফোনটা ধরতেই শোনেন কারুথার্সের গলা, “মি. ভাইস প্রেসিডেন্ট। ভূ মধ্য সাগরে নাকি একটা ঝামেলা হয়েছে। ওখানকার ইতালির একটা ছোট্ট দ্বীপে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তার জন্য নাকি এলাকায় কি একটা বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ওখান দিয়ে বিমান চলাচল পুরো বন্ধ।”