জো-র পিছন দিকটা দড়াম করে বাঁকানো মেশিনটার মুখে গিয়ে বাড়ি খেলো আর মাথা বাড়ি খেলো ওপরের অংশে।
চুম্বক ওকে সেখানেই আটকে রাখলো, ফলে ও এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঝুলে রইল সেখানে। এমনকি ওর পা-ও এটে আছে মেশিনের সাথে। পায়ের বুটে স্টিলের কাটা এজন্যে দায়ী। বাম হাতে স্টীলের ঘড়ি। সেটাও এটে আছে। কোনো মতে শুধু ডান হাতটাই মেশিনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে। শরীরের বাকি কোনো অংশই ও নাড়াতে পারছে না।
এর মধ্যেই আততায়ী জ্ঞান ফিরে পেয়েছে। উঠে দাঁড়িয়ে জো-কে দেখে এমনভাবে মাথা নাড়তে লাগল যেন খুব মজা পাচ্ছে। তারপর হাসতে হাসতে পিস্তল তুললো গুলি করার জন্যে। কিন্তু সেটা ওর হাত থেকে ছুটে উড়ে গিয়ে জো-এর পাশে গিয়ে আটকে গেল।
জো মোচড়া মুচড়ি করে বন্দুকটা হাতানোর চেষ্টা করল কিন্তু হাত পিস্তল পর্যন্ত পৌঁছালোই না।
লোকটা প্রথমে অবাক হলেও দ্রুত সামলে নিলো। ওর হাতে উঠে এলো আরেকটা অস্ত্র। একটা ছোট ত্রিকোণাকায় ছুরি। সেটাকে মুঠো করে ধরেও এগুলো জো-এর দিকে।
“আরে আরে কথা শোনেন। আপনার বোধহয় কোনো সাহায্য দরকার, তাই না? আরেকটু ভালো চিকিৎসা, আরেকটু ভালো পাগলা গারদে থাকলেই আপনি ঠিক হয়ে যাবেন।” জো বলল।
“নিজের ভাগ্যকে মেনে নাও। কষ্ট কম পাবে।” লোকটা বলল।
“নিজের চরকায় তেল দাও বাছা।”
লোকটা সামনে এগুলো আর জো হঠাৎ এক টানে ওর পা ছুটিয়ে দিল এক লাথি। মুখের একপাশে লাগল সেটা।
লাথি খেয়ে লোকটা পিছিয়ে গেল খানিকটা। মারাত্মক রেগে গেল সে। গজরাতে গজরাতে ছুরিটা ওপরে তুলে সোজা জো-র বুক বরাবর এগোতে যাবে, তখনই পিছনের দরজাটা খুলে গেল। কার্ট সেখানে দাঁড়ানো হাতে একটা স্যালাইন ঝুলানোর রড। ও ওটা ছেড়ে দিতেই ধাতব দণ্ডটা প্রচণ্ড বেগে MR মেশিনের দিকে ছুটলো। যাত্রা পথে ওটা লোকটার শরীরকে একটা বর্শার মতো ফুটো করে ওর লাশটা নিয়েই জোর পাশে মেশিনের গায়ে গিয়ে পড়ল।
জো সেদিকে তাকাতেই দেখলো লোকটার চোখের আলো নিভে যাচ্ছে। তারপর কার্টের দিকে ফিরে বলল, “সময় মতই এসেছ। আমিতো ভাবতাম তুমি বুঝি সারাদিনই মরার ভান করে উল্টে পড়ে থাকবে।”
জো খেয়াল করল কার্টের হেলমেটের ওপর দিকটা দেবে গেছে। আর সেই জায়গা থেকে চেহারা বেয়ে রক্ত পড়ছে। হেলমেটের সামনের কাঁচেও ফাটল ধরেছে।
“আসলাম ধীরে সুস্থে। জানতাম-ইতো যে এসে তোমাকে কোথাও না কোথাও ঝুলতেই দেখবো।”
জো’র চেহারায় একটা আত্মতৃপ্তির হাসি…
“যাই হোক, আর কাছে এসো না, নাহলে তোমাকে আমার পাশেই রেফ্রিজারেটর হয়ে ঝুলে থাকতে হবে।”
কার্ট দরজার ওখানেই দরজার হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকল। যাতে টান পড়লে আটকাতে পারে। আশেপাশে তাকাল ও। বাম দিকেই প্লোক্সি গ্লাসে ঘেরা MRI কনট্রোল রুম।
“এটা অফ করবো কীভাবে?”
“অফ করা যায় না। চুম্বকগুলো সবসময়ই ক্রিয়াশীল। আমি এল পায়ের যে হাসপাতালে কাজ করতাম সেখানে একবার একটা হুইল চেয়ার আটকে গিয়েছিল। ছয়জন লোক লেগেছিল সেটা ছাড়াতে।
কার্ট মাথা ঝাঁকিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। তবে তাকিয়ে আছে আততায়ী লোকটার দিকে।
“কিছু প্রশ্ন হলো এই ব্যাটার সমস্যা কী?”
“আমিতো বুকের মধ্যে গাথা বর্শাটা বাদে আর সমস্যা দেখছিনা।”
“ওটা বাদে।” কার্ট বলল।
“জানিনা। তবে এটাই আমাকে অবাক করছে যে এই দ্বীপের একমাত্র নড়নক্ষণ জিনিস হলো এক বদ্ধ উন্মাদ যে কি-না কোনো দৃশ্যত কারণ ছাড়াই আমাদের খুন করতে চাচ্ছিলো।” জো জানালো।
“তুমি এখনও অবাক হও। আমার তো এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। সবসময়ই এমনটা হয়। আমি অবাক হচ্ছি ব্যাটার পোশাক পরিচ্ছদ দেখে। বা বলতে পারো নেই দেখে। আমরা ঘেমে গোসল করে ফেলছি আর লোকটার নাকে একটা মুখোস পরারও দরকার হয়নি।”
“হয়তো বাতাস পরিষ্কার হয়ে গেছে। তার মানে আমি এখন…. জো বলল।
“ঝুঁকি নেয়ার দরকার নেই।” হাত বাড়িয়ে নিষেধ করল কার্ট।” “সিওর হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব খোলার দরকার নেই। আমি অক্সিজেনের বোতলগুলো ড, অ্যামব্রোসিনিকে দিয়ে আসি। উনি হয়তো কিছু বলতে পারবেন।”
“আমি তোমার সাথে আসতাম। কিন্তু….”।
কার্ট হাসলো। “বুঝেছি। আমি জানি তুমি আটকা পড়েছে।”
“হুস। এর কারণ হলো আমার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব।” জো বলল। কার্ট হাসলো। তবে কিছু না বলেই ঘুরে বেরিয়ে এলো রুমটা থেকে।
.
০৯.
রেনাটা অ্যামব্রোসিনি অপারেশন রুমের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে আছে। নড়াচড়ার শক্তিও আর অবশিষ্ট নেই। জীবনেও সে এরকম কোনো পরিস্থিতিতে পড়েনি আগে। যদি বেঁচে থাকে তাহলে আর পড়তেও চায় না।
খুবই ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিচ্ছে সে। যতটা সম্ভব কম অক্সিজেন খরচ করতে চায়, অস্থির লাগছে খুব। প্রচণ্ড ইচ্ছে করছে দরজার প্লাস্টিক সিলের বাইরে বেরিয়ে বুক ভরে অক্সিজেন নিতে। মরলে মরুক আর সহ্য হচ্ছে না। মনোযোগ সরাতে চুলে হাত বুলালো, পনিটেল করা চুলের ব্যান্ড খুলে আবার রাখলো। তারপর গায়ের ল্যাব কোট প্রথমে ভাজ করে আবার সোজা করতে লাগল। আর কতক্ষণ সহ্য করতে পারবে তা জানেনা।
অক্সিজেনের প্রভাব কমে গেলে শরীর-মন দুটোর ওপরই প্রভাব পড়ে। কোনোটাই নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তারপরও রেনাটা সহ্য করে আছে কারণ এখানে কষ্ট হলেও বেঁচে আছে। বাইরে বেরুলেই স্রেফ মারা পড়বে।