“হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাহলে চলবে। মেডিকেল সাপ্লাই তিন তলায়। প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি করুন।”
কার্ট ফোন কেটে এলিভেটরের দিকে এগুলো। দরজা খুলতেই দেখা গেল একজন ডাক্তার আর নার্স কাত হয়ে পড়ে আছে।
জো তাদেরকে তুলে বসাতে গেল কিন্তু কার্ট হাত তুলে না করল, “সময় নেই।” ৩ লেখা বোতামটা টিপতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে পিং করে আওয়াজ হতেই দরজা খুলে গেল আর কার্ট নেমে গেল। আর জো ডাক্তারটাকে টেনে অর্ধেক দরজার বাইরে এনে রেখে দিল।
“দরজায় ঠেকা দিলে?” কার্ট জিজ্ঞেস করল।
“আশা করি লোকটা কিছু মনে করবে না, জো জবাব দিল।
“নাহ! কি আর মনে করবে।”
শেষ মাথায় ওরা সাপ্লাই রুমটা খুঁজে পেল। দরজা ভেঙে ঢুকতেই দেখে পিছনে মেডিকেল অক্সিজেন লেখা এক খাঁচা অক্সিজেনের বোতল। কার্ট গুনে দেখলো আটটা বোতল। আশা করল এতেই কাজ হয়ে যাবে।
জো একটা ট্রলি এনে বলল, “এর ওপর উঠিয়ে দাও। তাহলে আর আমাদেরকে টানতে হবে না।”
কার্ট বোতলগুলো ট্রলিতে তুলতেই জো সেগুলো বেঁধে ফেলল যাতে গড়িয়ে না পড়ে।
তারপর ঠেলে দরজা দিয়ে বের করার চেষ্টা করল কিন্তু মাথাটা বেঁকে দেয়ালে গিয়ে ঠেকলো।
“গাড়ি চালানো শিখেছ কোত্থেকে?” কার্ট জিজ্ঞেস করল।
“আরে এগুলো দেখতে সহজ হলেও চালানো আসলে অনেক কঠিন।”
জো জবাব দিল।
আবার সোজা করে আবার ঠেলা দিল। এটুকুতেই একেবারে ঘাম ছুটে গেল ওদের।
কিছুদূর এগুতেই শোনে এলিভেটরের পিংশব্দ। বিঙ্কিয়ের দ্বিতীয় এলিভেটরের দরজাটা খুলে যাচ্ছে।
“আমি নিশ্চিত এই হাসপাতালে ভূতের আসর আছে।” জো বলল। “পুরা বিল্ডিংয়ে থাকলেও কারেন্টের লাইনে আছে সিওর।” কার্ট জবাব দিল।
এলিভেটরের কাছে পৌঁছাতেই, রোদে পোড়া চামড়ার একটা মানুষ দ্বিতীয় এলিভেরটা থেকে বের হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
“বাচান” হাসফাস করতে করতে বলল লোকটা, “প্লিজ…”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কার্ট দ্রুত ট্রলিটা ছেড়ে লোকটার পাশে বসে পড়ল। লোকটার চোখ এতোক্ষণ বন্ধ ছিল। কিন্তু কার্ট তার মুখের কাছে ঝুঁকতেই লোকটার চোখ খুলে গেল তারপর অপলক তাকিয়ে থাকল কার্টের চোখের দিকে। সেই চোখে কোনো মৃত্যুভয় বা ঘোর নেই, শুধুই জিঘাংসা। সেটা প্রমাণ করতেই লোকটা ছোট্ট পিস্তলটা বের করেই গুলি করল।
.
০৮.
গুলির শব্দ ফাঁকা করিডোরে প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে গেল চারপাশে, আর কার্ট পিছন দিকে উল্টে পড়ে গেল। বেকায়দাভাবে মুচড়ে আছে শরীর। যেভাবে পড়েছে ওভাবেই পড়ে থাকল আর নড়লো না।
অবাক হলেও রিফ্লেক্সের বশেই জো সামনে ঝাঁপ দিল। অর্ধেক জীবন বক্সিংয়ের রিং-এ কাটানোর সুফল। জো-র হাতের ধাক্কায় লোকটার হাত ঘুরে গেল আরেকদিকে। ফলে পরের গুলি দুটো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গিয়ে লাগলো দেয়ালে। জো হেলমেট পরা মাথা দিয়ে লোকটার মাথায় একটা গুতো দিল, সাথে সাথে লোকটা চিৎপটাং। হাতের পিস্তলও ছিটকে পড়ল দূরে।
দুজনেই হামাগুড়ি দিয়ে পিস্তলের দিকে এগুলো। জো-ই আগে পৌঁছুলল। হাতে নিয়েই উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু ঝামেলা পাকালো হাতের গ্লোভস। কিছুতেই আঙুল ট্রিগারে ঢোকে না। এই সুযোগে আততায়ী লোকটা ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল আর দুজনেই পাশের দরজাটায় আছড়ে পড়ল, দরজার ওপরে লেখা সাবধান MRI.
দুজনেই শক্ত মেঝের ওপর পতিত হলো আর ধাক্কায় একজন আরেকজনের কাছ থেকে ছুটে গেল। হেলমেট পরে থাকার কারণে জো দুইপাশে ঠিকভাবে দেখতে পারছে না, ফলে বন্দুক আর আততায়ী দুটোর হদিসই ও হারিয়ে ফেলল। আশেপাশে ঘুরে ঘুরে তাকাতে বন্দুকটা কোথাও দেখতে পেল না তবে লোকটাকে দেখলো বিশ ফুটের মতো দূরে পড়ে আছে। সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে গেছে।
জো ওঠে দাঁড়িয়ে এক পা আগে বাড়াতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল। মনে হচ্ছে কেউ যেন ওকে পিছন থেকে টেনে শুইয়ে দিতে চাচ্ছে। আরেক পা আগে দিতেই প্রায় উল্টেই পড়ে গেল। প্রথমে ভাবলো সম্ভবত বিষাক্ত গ্যাস ওর ফুসফুসে গেছে। কারণ আসলেই ও সামনে এগোতে পারছে না। মনে হচ্ছে যেন কেউ ওর কাঁধে রশি বেঁধে টানছে।
তবে খুব দ্রুতই কারণটা ধরতে পারলো। ওরা এখন আছে হাসপাতালের MRI-রুমে। ওর বিশ ফুট পেছনেই একটা ছোট গাড়ির সমান একটা মেশিন। ওটার ভেতর আছে খুবই শক্তিশালী চুম্বক। চুম্বকগুলো সব সময়ই ক্রিয়াশীল একবার কয়েকমাস হাসপাতালে কাজ করেছিল জো। ফলে MRI মেশিন সম্পর্কে ভালোই জানা আছে ওর। ওটার আশেপাশে লোহা নির্মিত কিছু আসলেই হয়। সোজা টেনে নিয়ে আটকে ফেলবে। আর জোর পিঠে স্টিলের ট্যাংক, মাথায় স্টিলের হেলমেট। ওকেতো আটকাবেই। জো তিরিশ ডিগ্রি কোণে সামনের দিকে বাঁকা হয়ে গেল। প্রাণপণ চেষ্টা করছে চুম্বকের টান উপেক্ষা করতে। ওভাবেই কয়েক পা এগুলো দেখে মনে হচ্ছে কেউ বুঝি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের বিপরীতে হাঁটছে। কিন্তু এগুতে পারছে না।
জোর প্রতিপক্ষ মাত্র দশ ফুট দূরে পড়ে আছে। এখনও জ্ঞান ফেরেনি। কিন্তু এত চেষ্টা করেও জো তার কাছে পৌঁছুতে পারছে না।
জো আরো খানিকটা বাঁকা হলো, আরেক পা আগালো কিন্তু পা পড়ল মেঝের পিচ্ছিল একটা অংশে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হলো। ওর পা পিছলে পিছনে সরে গেল আর সমস্ত প্রতিরোধ এক মুহূর্তে গেল হারিয়ে। ব্যস! পরের মুহূর্তেই সে বাতাসে উড়ে MRI মেশিনটার দিকে ধেয়ে গেল।