“কে জানে, জম্বিও হতে পারে।”
“তাহলে তো আর তোমার চিন্তা করার কিছু নেই। জম্বিরা শুধু ঘিলু খায়।” কার্ট বলল।
“মজা পেলুম, তবে সত্যি কথা হলো যদি কেউ সত্যিই বেঁচে থাকে আর আমাদেরকে এই অবস্থায় দেখে তাহলে সামনে আসার আগে দশবার ভাববে।” জো বলল।
“হতে পারে। তবে সম্ভবত আমার মনেরই ভুল। বাদ দাও। ভেতরে চলো,” কার্ট সামনে এগুলো।
ঢোকার দরজার কাছে পৌঁছাতেই অটোমেটিক দরজা সুউ-শ করে খুলে গেল। ওয়েটিং রুমে প্রায় ডজন খানেক লাশ পড়ে আছে। বেশির ভাগই যে চেয়ারে বসে ছিল সেখানেই কাত হয়ে আছে। ফ্রন্ট ডেস্কে একজন নার্স এলিয়ে পড়ে আছে।
“সবাইকে তো চেক করার দরকার আছে বলে মনে হচ্ছে না।” জো বলল।
“চেক করবোও না। আমার ট্যাঙ্কের অক্সিজেন তিনভাগের একভাগ কমে গেছে। তোমারটারও একই অবস্থা হওয়ার কথা। জায়গাটাও অনেক বড়। প্রতিটা রুমের সবাইকে ধরে ধরে চেক করা সম্ভব না।”
কার্ট একটা ডাইরেক্টরি খুঁজে পেল। খুলে নামগুলোর ভেতর খুঁজতে লাগল। প্রথম পাতাতেই পাওয়া গেল অ্যামব্রোসিনির নাম। তবে বাকি সব নাম টাইপ করা হলেও এই নামটা হাতে লেখা। “মহিলা সম্ভবত নতুন জয়েন করেছে। কোনো অফিস নাম্বার বা কয়তলায় বসে কিছুই লেখা নেই।”
“এটা ব্যবহার করলে কেমন হয়?” একটা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে জো বলল। জিনিসটা সম্ভবত একটা PA (Public address : মাইক) সিস্টেমের সাথে লাগানো।
“ডাক শুনলে সাড়া দিতেও পারে।”
“ভালো বুদ্ধি।”
জো সিস্টেমটা চালু করে। “অল কল’ লেখা বোতামটা টিপে দিল। সম্ভবত এটা দিলেই সারা হাসপাতালে আওয়াজ পৌঁছায়।
কার্ট মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে হেলমেটের কাঁচের সাথে চেপে ধরলো। তারপর যথাসম্ভব পরিষ্কার আওয়াজে বলার চেষ্টা করল, “ড, অ্যামব্রোসিনি অথবা জীবিত আর কেউ যদি বেঁচে থাকে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমি কার্ট অস্টিন। আমরা আপনার সাহায্যের আবেদন শুনে এসেছি। যদি আপনি এই মেসেজটা শুনতে পান তাহলে ফ্রন্ট ডেস্কে ফোন করুন। আমরা আপনার খোঁজে এসেছি কিন্তু কোথায় খুঁজবো বুঝে পাচ্ছি না।”
মেসেজটা PA সিস্টেম হয়ে সারা হাসপাতালেই ছড়িয়ে পড়ল। কিছুটা কাঁপা কাঁপা তবে পরিষ্কার বোঝা যায়। কার্ট আবারো বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই অটোমেটিক ডোরটা আবারো সুউশ করে খুলে গেল।
জো আর কার্ট চকিতে ঘুরে গেল, কিন্তু দরজা খালি কেউ নেই ওখানে। দুই সেকেন্ড পরে আবার বন্ধ হয়ে গেল সেটা।
“যত তাড়াতাড়ি পারি এখান থেকে ভাগতে চাই বাবা।” জো বলল।
“আমিও।”
ডেস্কের ফোনটা বাজতে আরম্ভ করল আর একটা সাদা বাতি জ্বলতে আর নিভতে শুরু করল।
“লাইন ওয়ানে আপনার জন্য একটা ফোন এসেছে ড. অস্টিন।” জো বলল। কার্ট স্পিকার লেখা বোতামটা টিপে দিল।
“হ্যালো, একজন মহিলার কণ্ঠস্বর,” কেউ আছেন? আমি ড, অ্যামব্রোসিনি।” কার্ট স্পিকারের একদম কাছে হেলমেট ঠেকিয়ে বলল, “আমার নাম কার্ট অস্টিন। আপনার রেডিও কল শুনে সাহায্য করতে এসেছি।”
“ওহ! থ্যাঙ্ক গড! আপনার কথা শুনে আমেরিকান মনে হচ্ছে। আপনি কি NATO-র কেউ?”
“না। আমি আর আমার বন্ধু NUMA নামের একটা প্রতিষ্ঠনে কাজ করি। পানির নিচে ডুবে যাওয়া জিনিসপাতি উদ্ধার করি আরকি।”
কিছুক্ষণ নীরবতা। “আপনাদের কিছু হয়নি কীভাবে? যারা-ই বিষটার সংস্পর্শে এসেছে তার-ই তো মারা পড়েছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি।”
“বলতে পারেন আমরা ঠিকঠাক কাপড় পরেছি, তাই কিছু হয়নি।”
“একটু বেশিই কাপড় পরা হয়ে গেছে।” জো ফোড়ন কাটলো।
“ঠিক আছে। আমরা চার তলায় আটক পড়েছি। প্রাস্টিকের শীট আর সার্জিক্যাল টেপ দিয়ে রুমের দরজা সীল করে রেখেছি। কিন্তু আর বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না। অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে।”
“ইতালিয়ান সৈন্যবাহিনীর একটা ইউনিট ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ নিষ্ক্রিয়কারী টীম নিয়ে রওনা দিচ্ছে। আপনাদের আরো দুয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।” কার্ট জানালো।
“সম্ভব না। এখানে আমরা উনিশজন আছি। তাজা বাতাসের দরকার সবার যত দ্রুত সম্ভব। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।”
কার্ট সাথে করে দুটো অতিরিক্ত স্যুট আর একটা অক্সিজেন ট্যাঙ্ক নিয়ে এসেছে। পরিকল্পনা ছিল প্রথমে যাকে পাবে তাকে সী ড্রাগনে নিয়ে যাবে, তারপর বাকিদেরকে নিতে আসবে। কিন্তু এখানে প্রায় বিশজন লোক আটকা…
…
…
…
“কি বলছেন?” ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন।
“আমরা আপনাদেরকে বের করতে পারবো না।” কার্ট জবাব দিল।
“আমরা এখানে আর বেশিক্ষণ টিকবো না, কয়েকজন বয়স্ক রোগী এর। মধ্যেই জ্ঞান হারিয়েছে।” জবাব দিল ডাক্তার।
“হাসপাতালে কি ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্য নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা আছে? ওখানে খুঁজলে কিছু স্যুট পাওয়া যেতে পারে।” কার্ট জিজ্ঞেস করল।
“না, এরকম কিছুতে নেই।”
“অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। সব হাসপাতালেই তো থাকার কথা।” জো বলল পাশ থেকে।
কার্ট মাথা নাড়লো, “এই সপ্তাহে তোমার বেতন কাটা মাফ করলাম যাও।”
“এ আর নতুন কি?”
কার্ট এক হাত উঁচু করে তর্জনী নেড়ে না করল।
তা দেখে জো মারাত্মক কষ্ট পাওয়ার ভান করল আর কার্ট আবার স্পিকারের কাছে মুখ নিয়ে বলল, “সাপ্লাই রুম কয় তালায়? আমরা আপনাদেরকে কিছু অক্সিজেনের বোতল এনে দিচ্ছি। আশা করি ইতালিয়ান সৈন্যবাহিনী আসার আগ পর্যন্ত থাকতে পারবেন।”