দরজার হাতল মুচড়ে জো বলল, “তালা মারা।”
কার্ট এক কদম পিছিয়ে দাঁড়ালো তারপর সজোরে সামনে এগিয়ে লাথি চালানো কাঠের দরজায়। দরজা ভেঙে একপাশে ছুটে গেল।
জো সাথে সাথেই ভেতরে ঢুকে চেঁচালো, “লারিসা? কডি?”
কার্টও চেঁচালো। তবে এই পুরু হেলমেট ভেদ করে কতটা আওয়াজ বের হচ্ছে সন্দেহ। ওর কানেই আর ফিরে আসছে বলে মনে হচ্ছে।
“পিছনের ঘরগুলোতে চলো। যদি ওরা টের পায় যে বিপদটা আসছে এক রাসায়নিক বাষ্প থেকে, তাহলে সবচে বুদ্ধিমানের কাজ হলো সবচে ভেতরের রুমে ঢুকে দরজা জানালা বন্ধ করে লুকিয়ে থাকা।”
ওরা ত্রস্ত পায়ে পিছনের দিকে ছুটে গেল। প্রথম রুমটা খালি। জো দৌড়ে অফিস রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল। কিছু একটা দেখতে পেয়ে চেঁচালো, “এখানে।”
কার্ট জো-এর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। এখানে থাকা পাঁচজনের মধ্যে চারজনকেই দেখা গেল টেবিলের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। সামনে একটা ভোলা ম্যাপ। মারা যাওয়ার আগ মুহূর্তে হয়তো এটা নিয়েই গবেষণা করছিল ওরা। একটু দূরেই কাত হয়ে পড়ে আছে কডি উইলিয়াম। যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। কড়ি ছিল রোমান পুরাকীর্তি বিশেষজ্ঞ। এই গবেষণা দলের প্রধান।
“সকালের মিটিং।” কার্ট বলল। “একবার চেক করে দেখতে বেঁচে আছে কি-না।”
“কার্ট, ওরা কেউ….”
“তাও দেখো একবার। সিওর হয়ে নাও।” গম্ভীর মুখে বলল কার্ট। জো টেবিলের কয়জনকে চেক করল আর কাট চেক করল কডিকে। তারপর চেয়ার থেকে নামিয়ে মেঝেতে শুইয়ে দিল। প্রচণ্ড ভারি লাগছে শরীরটা। কার্ট শরীরটা ধরে বহুক্ষণ ঝাঁকাঝাঁকি করল। কিন্তু কাজ হলো না কিছুই। “পালস্-টালস তো কিছুই টের পাচ্ছি না। অবশ্য এই মোটা গ্লোভস পরা থাকলে পাওয়ার কথাও না।” বলে জো গ্লোভস খুলতে গেল।
“উঁহু!” কার্ট মাথা নেড়ে নিষেধ করল।
তা দেখে জো থেমে গেল। কার্ট উঠে একটা ছুরি নিয়ে এসে ফলাটা কডির সামনে ধরলো। “নাহ! ওরা নিশ্বাস নিচ্ছে না।”
ও ছুরিটা ছুঁড়ে ফেলে দিল, “শালার জাহাজটায় ছিলটা কি?” প্রচণ্ড রাগে গজরাতে গজরাতে বলল কার্ট।.”কি এমন জিনিস যে পুরো একটা দ্বীপের প্রতিটা প্রাণীকে মেরে ফেলতে পারে। সৈন্যবাহিনীর কাছে এরকম কিছু নার্ভগ্যাস আছে বলে শুনেছি। কিন্তু এরা পাবে কোথায়?”
জোর মাথাতেও এসব চিন্তাই ঘুরছিল। “ধরলাম তুমি একজন সন্ত্রাসী আর তোমার কাছে এরকম কোনো গ্যাস আছে। কিন্তু কোন দুঃখে তুমি সেটা এই দ্বীপে ছড়াতে যাবে? সমুদ্রের মাঝের এই দ্বীপটা তো ম্যাপেও দেখা যায় না। এখানে থাকে কিছু মাঝি, ডুবুরি আর ছুটি কাটাতে আসা মানুষ।”
কার্ট আরো একবার মৃত সহকর্মীদের দিকে তাকাল, “জানিনা। তবে আমি এর পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করবোই। আর যখন করবো, এমন ছাচা দেবো শালাদের যে এই জায়গার নামও কোনোদিন মুখে আনতে চাইবে না।
জো কার্টের এই কণ্ঠটাকে খুব ভালো মতোই চেনে। এটা হলো সদাহাস্য, সদাচঞ্চল কার্টের ঠিক উল্টো রূপ। অন্যভাবে বলা যায় মুদ্রার অপর পিঠ, কার্টের অন্ধকার চরিত্র। সোজা বাংলায় যাকে বলে, ধরে নারে ধরে না, ধরলে কিন্তু ছাড়ে না।
অন্য সময় হলে জো হয়তো কার্টকে এসব জেদ থেকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করতো, কিন্তু এই মুহূর্তে ওর নিজেরও ঠিক একই ইচ্ছে করছে।
“সী ড্রাগনে খবর দাও। আমি গাড়ির চাবিটা খুঁজে বের করি। হাসপাতালটায় যেতে হবে। আর হাঁটতে পারবো না।” বলে কার্ট চাবির খোঁজে বেরিয়ে গেল।
.
০৭.
জিপ গাড়ির ভি-এইট ইঞ্জিন গর্জে উঠল। নিস্তব্ধ দ্বীপে সেই শব্দটাই কানে লাগল।
কার্ট চাবি মুচড়ে বার কয়েক গাড়ি চালু বন্ধ করল। যে মায়ার প্রভাবে ওদের চারপাশের সবকিছু ঘুমিয়ে পড়েছে, সেটা যদি ভাঙ্গে সেই আশায়।
গিয়ার বদলে জিপ চালানো আরম্ভ করল কার্ট, জো একটা ম্যাপের দিকে তাকিয়ে। হাসপাতাল খুব বেশি দূর না কিন্তু রাস্তায় ডজনকে ডজন গাড়ি এলো-মেলো হয়ে থেমে আছে, কোনোটার রেডিয়েটর থেকে এখনও ধোয়া বেরুচ্ছে। স্কুটারগুলো কাত হয়ে পড়ে আছে, সেগুলোর আরোহী পড়ে আছে আরো কয়েক হাত দূরে। প্রতি রাস্তার মোড়ে গাড়িগুলো একটার ওপর অন্যটা উঠে তূপ হয়ে আছে। পথচারীরাও যেখানে ছিল সেখানেই মরে পড়ে আছে।
“দেখে মনে হচ্ছে কেয়ামত হয়ে গেছে। এতে পুরো মৃতদের শহর।” জো বলল শুকনো মুখে।
হাসপাতালের কাছেও বিশাল একটা স্তূপ দেখা গেল। পুরো রাস্তাই আটকে ফেলেছে। একটা ট্রাক উল্টে ওটার সমস্ত মালামাল রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে। উপায় না দেখে কার্ট গাড়ি রাস্তার পাশের একটা বাগানে নামিয়ে দিল। তারপর ঘুরে মেইন গেটে পৌঁছালো।
“হাসপাতালটাতে ভালোই আধুনিক,” ছয়তলা দালানটার দিকে তাকিয়ে বলল জো।
“লিবিয়া আর তিউনিসিয়া থেকে আসা রিফিউজিদের জন্য এটা বড় করা হয়ছে।”
কার্ট জিপ বন্ধ করে নেমে এগুতে গিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালো। ওর কিছু একটা চোখে পড়েছে।
“কি হল?” জিজ্ঞেস করল জো।
কার্ট আবার গাড়ির কাছে ফিরে গেল, “কি যেন নড়তে দেখলাম।”
“কি সেটা?”
“জানিনা, ভাঙ্গা গাড়িগুলোর ওপরে।”
কার্ট আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, কিন্তু কিছুই দেখা গেল না।
“চলো দেখে আসি।”
কার্ট মাথা নাড়লো, “থাক। চোখের ভুল সম্ভবত। ছায়া-টায়া হবে।”