ও আবার কেবিনের ভেতরে ঢুকে বলল, “আরো মাইলখানেক পিছনে চলে যাও, আর ঐ ধোয়াটার দিকে নজর রেখো। যদি বাতাসের দিক বদল হয় তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভাগতে হবে।”
রেনল্ডস মাথা ঝাঁকালো। থ্রটল ঠেলে হুইলে হাত দিল আবার। জাহাজটা গতি পেতে পেতে রেডিওতে জো-এর কথাও শেষ হলো।
“কি খবর?”
“ওদেরকে বললাম যে আমরা কি দেখেছি। গত রাতের AIS (Autometic Identification System) ডাটা অনুসারে ওদের ধারণা এটা একটা মালবাহী জাহাজ। নাম এম. ভি. তোরিনো।”
“ছিল কি ওটায়?”
“এই যন্ত্রপাতি আর কাপড়-চোপড়-ই ছিল বেশিরভাগ। বিপজ্জনক কিছু ছিল না।”
“কাপড়-চোপড়? তোমার মাথা।” ঐ হেলিকপ্টারগুলো কদ্দূর?” কার্ট জিজ্ঞেস করল।
“দুঘণ্টা তো লাগবেই আরো। তিন ঘণ্টাও লাগতে পারে।”
“আধা ঘন্টার মধ্যে না রওনা দেয়ার কথা ছিল?”
রওনা দিয়েছিল কিন্তু আমাদের রিপোর্ট পেয়ে আবার ফেরত গেছে। দরকারি রসদপাতি আর মানুষজন নিয়ে ফেরত আসবে।”
“ওদের আর কি দোষ দেবো।” কার্ট মুখে বলল। কিন্তু ওর মন পড়ে রয়েছে NUMA-টীমের সদস্য আর ঐ ডাক্তার মহিলার কি হলো সেই চিন্তায়। আর ওরা কেউই আর সাড়াশব্দ করেনি। আর বাকি পাঁচ হাজার মানুষের কথা নাহয় বাদই দিল। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো কার্ট, এই মুহূর্তে ওর বিবেকে এটাই একমাত্র সমাধান মনে হচ্ছে।
“জোডিয়াকটা (রাবারের তৈরি এক ধরনের স্পিড বোর্ড। সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহৃত হয়।) “রেডি করো। আমি দ্বীপে যাব কি হয়েছে দেখতে। পাশ থেকে রেনল্ডস শুনতে পেয়ে সাথে সাথে বলে উঠল, “মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি?”
“হলে হয়েছে। আমাদের লোকেরা কেউ এখনো বেঁচে আছে কি-না জানিনা। কিন্তু আরো তিন ঘণ্টা বসে থাকলে যে কেউ আর থাকবে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। সেই ঝুঁকি আমি নিতে পারবো না। হয়তো ওরা সাহায্যের আশাতেই বসে আছে এখন।”
“আমি যাব তোমার সাথে।” জো বলল।
রেনল্ডস পরাজিত চোখে ওদের একবার দেখে বলল, “তা যে বিষে দ্বীপের সবাই মারা পড়ল সেটা থেকে বাঁচবে কীভাবে?”
“হেলমেটগুলো পরে নিলেই হবে। সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার তো আছেই। সমস্যা হবে না।”
“কিছু কিছু নার্ভ টক্সিন কিন্তু চামড়ার ওপরেও কাজ করে।” রেনল্ডস মনে করিয়ে দিল।
“ওয়াটার প্রুফ স্যুটগুলো পরে নিলেই হবে। চামড়াতেও কিছু লাগবে না।” কার্টও সাথে সাথে সমাধান দিয়ে দিল।
“হুম। হাতে গ্লোভস আর টেপ দিয়ে বাকি জায়গাগুলো মুড়ে দিলেই হয়ে যাবে।” জো বলল পাশ থেকে।
“টেপ? একটা টেপের ওপর তুমি তোমার জীবন বাজি ধরতে চাও?”
“এবারই প্রথম না। এর আগে একবার টেপ দিয়ে বিমানের পাখা আটানোর চেষ্টা করেছিলাম। অবশ্য সেবার জিনিসটা ঠিকমতো কাজ করেনি।” জো স্বীকার করল।
“ফাজলামো না। খামাখা তোমরা তোমাদের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছ। ওখানে কেউ বেঁচে আছে কি-না সে কথা-ই কেউ জানে না।” বিরক্ত মুখে বলল রেনল্ডস।
“উঁহু। একটা ব্যাপার ভুলে যাচ্ছ তুমি। রেডিও কলের ব্যাপারটা। কলটা অবশ্যই ঘটনাটা ঘটার পরে করা হয়েছিল। তার মানে ঐ ডাক্তার আর আরো কয়েকজন অন্তত তখন পর্যন্ত বেঁচে ছিল। কোনো একটা হাসপাতালেই সম্ভবত। অক্সিজেন কমে আসছিল বলেছে। তার মানে কোনো বদ্ধ জায়গাতে নিজেদের আটকে রেখেছিল যাতে বিষ তাদের কাছে না পৌঁছায়। অন্যরাও হয়তো একই কাজ করেছে। আমাদের লোকেরাও হয় এভাবে কোথাও লুকিয়ে আছে। তার ওপর পানিতে দেখলাম কয়েকটা স্কুইড এখনো মরেনি। ওগুলো শুড় নাড়ছে, জড়াজড়ি করছে, হালকা হালকা নড়ছেও।” কার্ট বলল।
“যা-ই বলল, এসব সম্ভাবনা একদমই ক্ষীণ।” রেনল্ডস বলল।
কিন্তু কার্টের জন্য এতটুকু সম্ভাবনা-ই অনেক। “আমি এখানে এখন বসে থাকবো আর পরে দেখবো যে আমি সময়মতো কিছু একটা করলেই লোকগুলোকে বাঁচানো যেতো তা আমি মেনে নিতে পারবো না।”
রেনল্ডস মাথা নাড়লো। ও আগে থেকেই জানতো যে কার্টকে ফেরাতে পারবে না, “আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা নাহয় গেলে, আর আমরা কি করবো?”
“রেডিওতে কান পেতে বসে থাকো। আর ঐ বয়াগুলোর ওপর বসা পেলি-কানগুলোর ওপর নজর রেখো।” ইঙ্গিতে চ্যানেলের প্রবেশপথ দেখানো বয়ার ওপর বসা পাখি দেখলো। “যদি ওগুলো মরে ওখান থেকে মরে নিচে পড়ে যায় তাহলে এক মুহূর্ত দেরি না করে এখান থেকে চলে যাবে।”
.
০৫.
কয়েক মাইল দূরেই একটা ছোট জোডিয়াক নৌকায় ডিমে তা দেয়ার ভঙ্গিতে একজন বসে আছে। লোকটা আম্মন তা–জোডিয়াকটা এম, ভি. তোরিনোর। পালানোর সময় জাহাজের পিছন দিকে এটা পেয়েছে সে। একটা রেডিও আছে এটায়। তোরিনোর কু-রা জাহাজের পাশের কাঠামো পরীক্ষা করার জন্য। এটা ব্যবহার করতো। যখন বিস্ফোরণটা হয় তখন সে জাহাজটা থেকে মাত্র একশো ফুট দূরে ছিল। খুবই কাছে, বিস্ফোরণের দমকে ছাই না হলেও শক ওয়েভের ধাক্কায় মারা পড়ার কথা অন্তত। কিন্তু বিস্ফোরণের শব্দে চমকে ওঠা ছাড়া তার আর কিছুই হয়নি। ও যেভাবে চেয়েছিল সেভাবে জাহাজটা ধ্বংস হয়নি।
কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে। সাথে সাথেই আবার জাহাজে উঠে দেখতে চেয়েছিল ব্যাপারটা। কিন্তু জাহাজটা তখনো পূর্ণ গতিতে চলছিল। ফলে তার এই স্বল্প গতির রাবারের নৌকায় সেটাকে ধরা সম্ভব ছিল না। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া লোকটা তাই আর কিছুই করতে পারেনি। তবে কিছুক্ষণ পরেই তার আশা পূরণ হয়। সে যেভাবে চেয়েছিল সেভাবেই জাহাজটা বিস্ফোরিত হয়।