“আগেই ভেবেছিলাম যে তুমি যাবে। ডাইভ কেবলগুলো চেক করে দেখেছি। তুমি, জো আর মিশেলি উঠে আসতে পারো ওপরে। বাকিদের ডিপ্রেশন ট্যাংক হয়ে আসতে হবে।” রেনল্ডস বলল।
‘কার্টও সেটাই ভেবেছিল। ও খবরটা বাকি সবাইকে জানিয়ে দিল। সবাই দ্রুত লাইটগুলো নিভিয়ে, জিনিসপত্র রেখে ধীরে ধীরে পানির ওপরে উঠতে লাগল। দড়ি দিয়ে ডিপ্রেশন ট্যাংকটা নিচে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। সেটাতে করেই তাদেরকে ওপরে তুলে আনা হলো।
কার্ট, জো আর মিশেলি প্রপালসন ইউনিট ব্যবহার করে ওপরে উঠে এলো। ওপরে উঠে স্যুট খুলতে না খুলতেই রেনল্ডস আবারো খারাপ খবর দিল, ল্যাম্পেডুসার থেকে আর একটা শব্দও শোনা যায়নি। কোনো সামরিক বা কোস্টগার্ড বাহিনীর কাছ থেকেও কোনো সাড়া নেই।
“সিসিলি থেকে দুটো হেলিকপ্টার পাঠাবে বলেছে। তবে আরো আধাঘণ্টার আগে ওরা রওনা দেবে না। আর এখানে আসতে আরও ঘণ্টাখানেক লাগবে।”
“ততক্ষণে আমরা দ্বীপে পৌঁছে, নাস্তাপানি সেরে বোতল নিয়ে বসে পড়তে পারবো।” জো বলল।
“সে জন্যেই ওরা আমাদেরকেই একটু দেখতে বলছে যে কি হয়েছে। কারণ এই এলাকায় আমরাই একমাত্র সরকারি লোক। যদিও আমাদের সরকার আটলান্টিকের ঐ পাশে।” রেনল্ডস বলল।
“সেটাই ভালো। আমাদের কারো কাছে কৈফিয়ৎ দিতে হবে না। চাইলেই ভেগে যেতে পারবো।”
“আমি তাহলে জাহাজ ছেড়ে দিচ্ছি।” রেনল্ডস বলল।
কার্ট মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল।
.
০৪.
সী ড্রাগন ল্যাম্পেডুসার কাছে পৌঁছাতেই প্রথমে যে জিনিসটা নজরে পড়ল তা হলো ঘন, কালো তৈলাক্ত ধোঁয়ার একটা স্তর। দ্বীপের অনেক ওপরে স্থির হয়ে আছে। কার্ট শক্তিশালী একটা বাইনোকুলার দিয়ে সেটা দেখার চেষ্টা করল।
“কি দেখা যায়?” জো জিজ্ঞেস করল।
“জাহাজ মতো মনে হচ্ছে। তীরের কাছেই।” কার্ট বলল।
“ট্যাঙ্কার (তেলবাহী জাহাজা?)”
“বোঝা যাচ্ছে না। ধোঁয়ায় ঘিরে আছে চারপাশ। শুধু মোচড়ানো একটা ধাতব কাঠামো মতো দেখা যাচ্ছে।” কার্ট জানালো। তারপর রেনল্ডসের দিকে ফিরে বলল, “ওটার দিকেই যাও তো আগে। দেখে আসি।”
সী ড্রাগন দিক বদলে সেদিক এগুলো। যতই কাছে যাচ্ছে ধোয়ার আস্তরণ ততোই পুরু হচ্ছে।
“বাতাসে ভেসে ভেসে জাহাজের ধোয়াটা সোজা দ্বীপের দিকে উড়ে যাচ্ছে।” জো বলল।
“খোদা-ই জানে ওটায় কি আছে। বিষাক্ত কিছু হলে….রাক্যটা শেষ করল না কার্ট। তবে বাকিরা ভাবার্থ ঠিকই বুঝতে পেরেছে।
“ডাক্তার মহিলাটা বলছিল যে তারা আটকা পড়েছে আর অক্সিজেনও শেষ হয়ে আসছে। আমি ভেবেছিলাম কোনো ভূমিকম্প বা বিস্ফোরণে হয়ত হাসপাতাল ভবনটা ধসে পড়ছে, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি মহিলা সম্ভবত এই ধোয়ার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।” জো বলল।
কার্ট আবারো বাইনোকুলারে চোখ পাতলো। জাহাজের সামনেটা দেখে মনে হচ্ছে বিশাল কোনো আংটা দিয়ে বোধহয় টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। ভালো করে তাকাতেই বোঝা গেল যে জাহাজের অর্ধেকটাই নেই। বাকিটুকুও কালি-ঝুলিতে ঢাকা পড়েছে।
“কোনো ডুবো পাহাড়ে আটকা পড়েছে বোধহয়। নাহলে তো ডুবে যাওয়ার কথা।” কার্ট বলল। “নাম-ধামও চোখে পড়ছে না। কেউ একজন পালের্মোতে ফোন দিয়ে ব্যাপারটা জানাও। ওরা যদি জাহাজটার হদিস বের করতে পারে তাহলেই জানা যাবে এটায় কি ছিল।”
“ঠিক আছে, জানাচ্ছি।” রেনল্ডস বলল।
“আর গ্যারি।” কার্ট ডাক দিল বাতাসের উল্টোদিকে থেকো।”
রেনল্ডস মাথা ঝাঁকালো, “সেটা আর বলতে হবে না।” তারপর গতি কমিয়ে খবরটা জানাতে ফোন করল। জাহাজটা থেকে পাঁচশো গজের মতো দূরে থাকতেই সী ড্রাগনের একজন ক্রু চেঁচিয়ে উঠল, “আরে আরে দেখে যাও সবাই।”
রেনল্ডস থ্রটল ঠেলে সী ড্রাগনকে থামিয়ে দিল পুরোপুরি। কার্ট বেরিয়ে এলো ব্যাপার কি তা দেখতে। কুটা ওকে পানির দিকে আঙুল তুলে দেখালো। সেখানে আধা-ডজন অদ্ভুত আকৃতির কিছু একটা ভাসছে। জিনিসগুলো ১৫ ফুটের মতো লম্বা, দেখতে অনেকটা টর্পেডোর মতো, গায়ের রঙ কুচকুচে কালো।
“পাইলট তিমি, চারটা বড়, দুটো বাচ্চা।” –টা বলল। প্রজাতিটা চিনতে পেরেছে।
“এদিকে তো এরা আসে না, তার মানে দ্বীপে যা হয়েছে তাতে সাগরের পানিতেও তার প্রভাব পড়েছে। কার্ট বলল।
আসলেও তাই, তিমিগুলোর চারপাশে গাদা গাদা সামুদ্রিক আগাছা, মরা মাছ, স্কুইড বা প্রাণী ভাসছে। এগুলোর লোভেই ওরা এদিকে এসেছে।
“আমি নিশ্চিত ঐ জাহাজটার জন্যেই এসব হয়েছে। কেউ একজন বলল। কাটেরও সে রকই-ই ধারণা, কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করল না। ও তাকিয়ে তাকিয়ে ভাসমান মৃতদেহগুলো দেখছে। হঠাৎ শুনতে পেল জো রেডিওতে ইতালিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলছে। ওরা কি কি দেখেছে। সেসব জানাচ্ছে। কার্ট খেয়াল করল সব স্কুইড-ই মারা যায়নি। কয়েকটাকে দেখা গেল একসাথে গুড় দিয়ে একে অন্যকে পেচিয়ে রেখেছে।
“আমাদের মনে হয় এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত।” একজন ক্রু বলে উঠল। বলতে বলতে সে পরনের গেঞ্জি টেনে তুলে নাক-মুখ ঢেকে দিলো। ভাবটা এমন যে বাতাসে যে বিষ-ই ভেসে আসুক ওর নাকে আর ঢুকতে পারবে না।
কার্ট জানে যে এখানে ওদের কোনো সমস্যা নেই। ওরা এখন বাতাসের উল্টো দিকে প্রায় সিকি মাইল দূরে। আর বাতাস একেবারেই নির্মল, এক ফোঁটা গন্ধ পর্যন্ত নেই। তারপরও সাবধানের মার নেই।