আঘাতটা এতই জোরে ছিল যে পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত পিওলা আর নড়তেই পারলেন না। তবে পুলিশ তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় গালাগালির তুবড়ি ছুটিয়ে গেলেন। রুম থেকে বের হওয়ার আগে দেখলেন জেমস স্যাভেকার নিজের হাতের গাট মালিশ করছেন আর মুচকি মুচকি হাসছেন। পিওলা চলে যেতেই স্যান্ডেকার আবার একটা চেয়ারে বসে পড়লেন। রুমের প্রায় সবাই-ই আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। শুধু স্যান্ডেকারের মুখেই সন্তুষ্টির হাসি।
ওনার সহযোগী টেরি কারুথার্স ওনার হাতে লাগানোর জন্যে এক বালতি বরফ নিয়ে এসেছে।
“ওটার ভেতর যদি শ্যাম্পেনের বোতল না থাকে তাহলে আমার কাছে আনার দরকার নেই।” বললেন স্যাভেকার।
কারুথার্স হতাশ হয়ে বালতিটা নামিয়ে রাখলো, “তা তো আনিনি স্যার।”
স্যাভেকার কাঁধ ঝাঁকালেন, “খুব খারাপ।” তারপর জ্যাকেটের পকেটে হাত দিয়ে নতুন একটা সিগার বের করে তার জিপ্পো লাইটারটা দিয়ে ধরাতে লাগলেন।
বরাবরের মতোই কারুথার্স বলল, “এখানে সিগারেট খাওয়া নিষেধ স্যার।”
স্যান্ডেকার তার চেয়ারে হেলান দিলেন, “আমি জানি।” তারপর প্রায় নিখুঁত গোলাকার একটা ধোঁয়ার রিং ছেড়ে বললেন, “আমি জানি।”
.
৬৯
পাম্পগুলো উল্টো চলার ফলে নীল নদ থেকে জলাধারগুলোয় পানির প্রবাহ কয়েকদিনের মধ্যেই এতো বেশি বেড়ে যায় যে ওটা মাটির নিচের প্রস্তর স্তরেও ফাটল ধরে যায়। ফলে কোটি কোটি বছর ধরে আটকে থাকা কয়েক বিলিয়ন গ্যালন পানি বের হয়ে পড়ে। লিবিয়ার শত শত শুকিয়ে যাওয়া লেক, পুকুর, কূপ, পানি সংরক্ষণাগার সব আবার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
লিবিয়ার গ্রিস্ত পাম্পিং স্টেশনটায় তেলের মতো করে পানি উঠতে শুরু করে। আর আশেপাশের এলাকাটা বৃষ্টিপাতের মতোই ভিজিয়ে দেয়। রেজা দেখতে আসার পর ওটা বন্ধ করা হয়। উনি এখন লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে পারেন। তারপর উনি বাচ্চা ছেলেদের মতো হৈচৈ করা আরম্ভ করেন। আর পল আর গামায় ট্রাউটকে তা ভিডিও করে করে পাঠান। সাথে আন্তরিক ধন্যবাদ তো আছেই।
পানির সরবরাহ ঠিক হতেই দ্রুত লিবিয়া আবার সহনশীল অবস্থায় ফিরে গেল। ফলে সরকারকে আর পদত্যাগ করতে হয়নি। তবে যারা ক্য করতে চেয়েছিল তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিউনিসিয়া আর আলজেরিয়ার সরকারও দ্রুত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। আর ব্লাক মিস্টের প্রতিষেধক সহজলভ্য হওয়ার পরপর যেসব মন্ত্রীকে তাদের মত বদলাতে বাধ্য করা হয়েছিল তারাও আবার আগের অবস্থানে ফিরে এসে সেসব সরকারকেই সমর্থন দিচ্ছেন।
মিসরের অবস্থা অবশ্য তুলনামূলক অস্থিতিশীল। নতুন নতুন নেতৃত্বের উদ্ভব হয়েছে। তাদের ইন্ধনে দাঙ্গা হাঙ্গামা লেগেই আছে। ইদোকে আবারো মিলিটারিতে পুনর্বহাল করে মেজর জেনারেল পদে ভূষিত করা হয়েছে।
ইতালি থেকে ল্যাম্পেডুসার আক্রান্তরা সবাই চিকিৎসা পেয়ে এখন সুস্থ হয়ে গিয়েছে। বেশিরভাগই আবার ওখানেই ফিরে গিয়েছে। তবে যারা আর ওখানে না গিয়ে সিসিলিতে থেকে যেতে চেয়েছে তাদেরকে ইতালির নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে।
ব্লাক মিস্টের কবল থেকে বেঁচে যাওয়া একজন ব্যক্তিগতভাবে কার্টকে ধন্যবাদ জানাতে এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খেয়ে গিয়েছে। ওরা তখন ছবির মতো সুন্দর গ্রিক দ্বীপ মাইকোনোমে মাছ ধরে বেড়াচ্ছিলো।
“এরচেয়ে সুন্দর পুরস্কার আর হয় না।” বলল কার্ট।
ওর পরনে কালো রঙের সাঁতারের পোশাক। আর রেনাটা পরেছে লাল রঙের বিকিনি। দুজনেই রোদে পুড়ে বাদামি হয়ে গিয়েছে। বহুদিন পর একটু শান্তিতে সময় কাটাচ্ছে ওরা। কার্টের হাতে একটা বিলে কার্ট-স্যালমন ব্রুই রিজার্ভ শ্যাম্পেনের বোতল।
রেনাটা মাছ ধরা নৌকাটার ওপর ঝোলানো জালের দোলনটায় হেলান দিল। কার্ট এটা ওর জন্যে বসিয়েছে ওখানে। “এত বছর আগে মিসরীয়রা ব্লাক মিস্ট বের করার পদ্ধতি কীভাবে বের করল সেটা ভেবে আজও অবাক লাগে।”
শ্যাম্পেনের গ্লাসে চুমুক দেয়ার ফাঁকে বলল রেনাটা।
“শত শত বছরের পর্যবেক্ষণের ফল। এমিল যে অংশটুকু অনুবাদ করেছিলেন তাতে দেখা যায় যে ওসাইরিসের পুরোহিতরা লক্ষ করেন যে যেসব বাচ্চা কুমির কোলা ব্যাঙ ধরে খাচ্ছে তারা কেমন একটা সম্মোহিত অবস্থায় চলে যাচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বের করেন যে এটা মানুষকেও একইভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তারপর থেকেই তারা অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তাদের মন্দিরের ভেতর ব্যাঙ চাষ শুরু করেন আর তাদের নির্যাস ব্যবহার করে নানান তন্ত্রমন্ত্র দেখানো শুরু করেন। ব্যাখ্যা করল কার্ট।
“কিন্তু তাহলে প্রতিষেধক বের করল কীভাবে?”
এটা অবশ্য পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে ব্যাঙের চামড়া-ই যে আসল জিনিস সেটা ওরা জানতে পেরেছিল। যে এনজাইমটা ব্যাঙগুলোকে জাগিয়ে তুলতে সেগুলোই বাম্পাকারে বা ধোয়ার সাহায্যে প্রবাহিত করা হতো। একবার আক্রান্ত মানুষ সেটা গ্রহণ করলেই আবার তার স্নায়ুতন্ত্র কাজ করা শুরু করতো। তবে যেটুকু জেনেছি, তাতে তাদের পুরোপুরি সুস্থ হতে কয়েক মাস লেগে যেতো।”
রেনাটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, “পদ্ধতিটাকে অনেক উন্নত করে দেয়ার জন্যে ওসাইরিসের বিজ্ঞানীদের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত আমার।”
কার্ট মাথা ঝাঁকালো, “ভালো খবর হচ্ছে ওরা এই নির্যাসটার আরো বেশি কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে ব্যাপারে গবেষণা করে যাচ্ছেন। দুর্ঘটনায় আঘাত প্রাপ্ত রোগীদেরকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক ওষুধ দিয়ে কোমায় পাঠানোর বদলে এটা দিয়ে এখন চেষ্টা করা হচ্ছে। নভোচারীদেরকে দীর্ঘ সময় ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য নাকি এই ওষুধটা ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা চলছে।” বলল কার্ট।