“আপনাদের স্বাগতম। কার্ট অস্টিন আর জো জাভালার বন্ধু মানে আমাদের বন্ধু। তা আপনাদের আগমনের কারণটা কী জানতে পারি?” বললেন ইটিয়েন।
“ও আমাদেরকে একটা ছবি দেখতে বলে দিয়েছে। ওর নাকি খুব পছন্দ হয়েছিল ওটা,” বলল গামায়।
“হা হা! এমিলের আঁকা একটা ছবি।” ইটিয়েন জবাব দিলেন।
“আবুকির উপসাগরের।”
ইটিয়েন ফায়ার প্লেসের সামনে থেকে সরে দাঁড়ালেন। তার পেছনেই আবুকির উপসাগরের ছবিটা দেখা গেল।
“আমরা কী ছবিটা একটু নামিয়ে দেখতে পারি?” পল জিজ্ঞেস করলেন। ইটিয়েনের চেহারায় ভাজ পড়ল, “কেন?”
“কারণ আমরা ধারণা করছি যে এমিল তার ভাষান্তর করার কাগজপত্র এটার পিছনে লুকিয়ে রেখেছেন। পরে হয়তো ভিয়েনেভকে পাঠাতেন। এটা এমন একটা ছবি যেটা কোনো ফ্রেঞ্চ নাগরিকই নিজের কাছে রাখতে চাইবে না। তাই এটা ওনার কাছে রাখাটাও ছিল নিরাপদ।”
“আমার বিশ্বাস হয় না।” বললেন ইটিয়েন।”
“সত্য না মিথ্য খুঁজে বের করার এই একটাই উপায় আছে।”
খুবই সতর্কতার সাথে ছবিটা ধরে নামানো হলো। তারপর একটা ব্লেড দিয়ে ক্যানভাসের পিছনের অংশটা আলাদা করা হলো। তারপর গামায় সাবধানে ওর হাতটা ঢুকিয়ে দিল ভেতরে। নিচের দিকে হাত নামাতেই আঙুলের মাথায় একটা ভাজ করা কাগজের অস্তিত্ব টের পেল ও। তারপর নখের সাহায্যেই চেপে ধরে হলুদ হয়ে যাওয়া এক টুকরো কাগজ টেনে বের করল। তারপর একটা ডাইনিং টেবিলের ওপর রেখে অত্যন্ত যত্নের সাথে ভাজ খোলা হলো।
শুরুতেই কিছু হায়ারোগ্লিফিক আঁকা। তার নিচেই ওটার অনুবাদ। ব্লাক মিস্ট, অ্যাঞ্জেলস ব্ৰেথ, মিস্ট অফ লাইফ। কোণায় একটা তারিখও আছে।
“ফ্ৰিমায়ের চৌদ্দ, মানে ডিসেম্বর ১৮০৫,” বললেন ইটিয়েন। তারপর আবার কাগজটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললেন, “এখানেই ছিল….শুরু থেকেই।”
“একশো বছর পার হলেও এমিলের অবদান এখন সবার কাছেই স্বীকৃত হবে বলেই আশা করি। ছবি আঁকার তারিখ আর ভিয়েনেভের সাথে যোগাযোগের ব্যাপারটাতেই প্রমাণ হবে যে এমিলই সর্বপ্রথম হায়ারোগ্লিফ অনুবাদ করতে সক্ষম হন। আর এই আবিষ্কারটাও পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়েই থাকবে। নেপোলিয়নের বিজ্ঞসভার সবচেয়ে বিদ্বান ব্যক্তি হিসেবেই উনি পরিচিতি পাবেন।” বলল গামায়।
.
৬৮.
রোম
গত চব্বিশ ঘন্টা ধরে এক মুহূর্তের জন্যেও আলবার্তো পিওলা টিভির সামনে থেকে নড়েননি। প্রতি মুহূর্তেই কায়রোতে ওসাইরিস পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের নানান খবর প্রচারিত হচ্ছে। ওটার ভেতরটা এখন পুলিশ আর সেনাবাহিনীর লোকজনে গিজগিজ করছে। একটা হেলিকপ্টার থেকে ভিডিও করে দেখানো হচ্ছে যে নদীর একটা জায়গায় পানি প্রবল স্রোত সমেত আবার পাইপে ঢুকে জলাধারগুলোয় ফেরত চলে যাচ্ছে। কমপক্ষে একশো সৈনিক আশে পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পার্কিং লট ভরা, জিপ, ট্রাঙ্ক আর সেনাবাহিনীর ট্রাক।
ল্যাম্পেডুসার দুর্ঘটনা আর উত্তর-আফ্রিকার খরার জন্যে যে ওসাইরিস দায়ী একথা চারদিকে চাউর হয়ে গিয়েছে। সাকির আর হাসান মারা যাওয়ার খবর পেয়ে পিওলা ভেবেছিল ওসাইরিসের সাথে তার সম্পৃক্ততার খবর বোধহয় আর ফাস হবে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে মনটা কেমন কেমন করছে। তাই ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পালিয়ে যাবে। দেরাজ খুলে একটা নাইন মিলিমিটার পিস্তল আর কয়েক তাড়া টাকা বের করল। বিশ হাজার ইউরো আছে ওখানে। তারপর ওর সেক্রেটারির ডেস্ক থেকে একটা চাবি নিয়ে নিলেন। ওটা নম্বর প্লেট বিহীন একটা ফিয়াট গাড়ির চাবি। এটা ওনার সেক্রেটারিই চালায়। এই গাড়িতে তাকে কেউ খুঁজবে না।
অফিস থেকে বের হয়ে বারান্দা দিয়ে এগুলেন সামনে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন শান্ত থাকার। সিঁড়ি বেয়ে অর্ধেক নামার পরই সিঁড়ির গোড়ায় কয়েকজন পুলিশ চোখে পড়ল। উনি ঘুরে উল্টোদিকে হাটা আরম্ভ করলেন।
“সিনর পিওলা, আর আগাবেন না। আপনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে।” একজন চিৎকার করে ডাক দিল।
পিওলা ঘুরেই গুলি করলেন।
পুলিশগুলো ছিটকে দূরে সরে গেল আর পিওলা বারান্দা ধরে দৌড় দিলেন। প্রথমেই যে রুমটা চোখে পড়ল উনি সেখানেই ঢুকে পড়লেন। তারপর রুমের লোকজনকে ধাক্কা মারতে মারতে অন্যপাশের দরজাটার দিকে ছুটলেন। একজন সামনে থেকে সরতে দেরি করায় তাকে ঘুসি মেরে ফেলেই দিলেন। এদিকে পুলিশ এসে পড়েছে পিছু পিছু। সেদিকেও গুলি ছুড়লেন আবার।
পিওলা দরজাটা খুলে হুড়মুড় করে মেইন কনফারেন্স রুমে ঢুকে পড়লেন। “সরো সরো আমার সামনে থেকে।” চিৎকার করে বললেন সবাইকে।
উদ্যত পিস্তল হাতে তাকে দেখে লোকজন সবাই লোহিত সাগরের মতোই দুই ভাগ হয়ে সরে গেল দুদিকে। শুধু খাটো করে ছাটা লাল চুল আর ছাগুলে দাড়িওয়ালা এক লোক দাঁড়িয়েই থাকল। লোকটা সামনে এগিয়ে পাশে সরে যাওয়ার ভান করে পিওলাকে ল্যাঙ মেরে ফেলে দিল।
পিওলার হাতের টাকাগুলো চারপাশে উড়ে গেল। কিন্তু বন্দুকটা তখনও হাতছাড়া হয়নি। আবার উঠে দাঁড়িয়ে গুলি করার জন্য সেটা ওপরে তুললো। কিন্তু তার আগেই সেই একই লোক তার হাতে থাবা দিয়ে ওটা ফেলে দিল।
পিওলা এতোক্ষণে লোকটাকে চিনতে পারলেন : জেমস স্যান্ডেকার, আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট। এক মুহূর্ত পরেই স্যান্ডেকারের ডান মুষ্ঠি তার চোয়াল স্পর্শ করল আর উনি আবার মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন।