“আত্মসমর্পণ করো।” আদেশ দিল কার্ট।
স্করপিয়ন সে কথায় পাত্তা না দিয়ে পকেট থেকে আরেকটা অস্ত্র বের করল। একটা তিনকোণা ছুরি বসানো নাকল। হাসান ওকে এটা দিয়েছিল উপহার। তিনকোণা আকৃতিটা হচ্ছে পিরামিড আর ফারওদের পুনর্জন্মের ক্ষমতার প্রতীক। ওসাইরিসের প্রত্যেক গুপ্তঘাতককেই এটা দেয়া হয়।
ও ওটা আঙুলের মধ্যে পরে মুঠো করে ফেলল হাত।
“থামো।” চেঁচিয়ে উঠল কার্ট।
কিন্তু স্করপিয়ন সামনে ঝাঁপ দিল আর কার্ট আবারো গুলি করল। এবার গুলি লাগলে অন্যপাশের কাঁধে। স্করপিয়ন টালমাটাল হয়ে একপাশে হেলে পড়ল। ভারসাম্য রাখতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও আরো একবার আঘাত করার চেষ্টা চালালো ও। কার্ট এবার গুলি করল পায়ে।
তারপরও দাঁতে দাঁত কামড়ে স্করপিয়ন ঝুলে রইল ওখানে। একটা বার শুধু অস্টিনকে ধরতে পারলেই হয়, তারপর দুজনই একসাথে মরতে পারবে।
কার্ট স্করপিয়নের চেহারার একগুয়ে ভাবটা পড়তে পারলো, “কখন হাল ছাড়তে হয় জানা নেই নাকি তোমার?”
দাঁত বের করে হাসলো স্করপিয়ন, “কখনোই না।”
আবার আঘাত করার চেষ্টা করল ও। কার্ট নির্দ্বিধায় গুলি চালালে আবার। এবার অন্য ঊরুটায়। স্করপিয়ন এবার আর ভারসাম্য রাখতে পারলো না। খোলটা থেকে সোজা এলিভেটরের ওপর গিয়ে আছড়ে পড়ল। তারপর সেখান থেকে গড়িয়ে গুহার মেঝেতে পড়ে গেল।
অন্ধকারের দিকে চোখ মেলে ও মারা গেল।
.
৬৬.
জো আর কার্ট কায়রো পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওসাইরিস ইন্টারন্যাশনালের গোপন কার্যকলাপের সবটাই ফাঁস হয়ে গেল সবার কাছে। ওটার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের একটা ডাটাবেস খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। টাকা-পয়সার লেনদেন, ঘুষ, হুমকি কাদেরকে দেয়া হয়েছে সব আছে। সেই সাথে সব লোকের নাম বা বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের নামও আছে ওতে।
ওসাইরিস এর বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে তবে এটা আর ব্যক্তিগত থাকবে না, জাতীয়করণ করা হবে। কারণ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী- ই সন্ত্রাসী।
কার্ট রেনাটাকে নিয়ে বেশ টেনশনে ছিল। ওকে পাওয়া গেল একটা হাসপাতালে। জ্ঞান ফিরেছে তবে এখনও চেতনা আসেনি পুরোপুরি।
“মনে হলো যেন একটা কুমির স্বপ্নে দেখলাম।” বলল রেনাটা।
“ওটা কোনো স্বপ্ন ছিল না।” বললেন কার্ট। তারপর ও কীভাবে প্রতিষধকটা খুঁজে পেল আর কীভাবে ওটা কাজ করে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলো রেনাটার কাছে। কিছুক্ষণ পর একটা ইতালিয়ান মেডিকেল টীম এসে ওকে নিয়ে গেল। ওরা ওকে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্যে ইতালি নিয়ে যাবে।
এরপর ট্রাউট দুজনের সাথে দেখা করল। ফ্রান্সে ওদের কি ঝামেলা হয়েছে তা সবিস্তারে খুলে বলল ওরা।
“গামায় তো ভিয়েনেভের ছবিগুলো ছিঁড়ে ফেলা আরম্ভ করেছিল। কারণ ওর ধারণা ছিল উনি এগুলোর ভেতরেই গোপন জিনিসটা লুকিয়ে রেখেছিলেন। প্রথম দুটো ছবিতে কিছুই ছিল না। তৃতীয়টা দেখার আগেই স্করপিয়ন নামের একজন ছবিটা আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়।” বলল পল।
“দারুণ কাজ দেখিয়েছ তোমরা। কিন্তু দ্য চ্যাম্পিয়নের ভাষান্তর করা কাগজগুলো ছবির মধ্যে লুকানো বলে মনে হয়েছিল কেন?” জিজ্ঞেস করল কাট।
“আসলে দ্য শ্যাম্পেনকে লেখা ভিয়েনেভের চিঠিগুলো পড়ে মনে হয়েছিল যে ছবির মাঝেই বোধহয় উনি কোনো সূত্র রেখে যাচ্ছেন।”
“চিঠি?”
“হ্যাঁ, ওনার শেষ চিঠিটায়। ওটায় ভিয়েনেভ নেপোলিয়ন ব্লাক মিস্ট হাতে পেলে কি করে বসবেন সে ব্যাপারে নিজের ভয় তুলে ধরেন। “সম্ভবত সত্যটা প্রকাশিত না হওয়াই মঙ্গল। ওটা আপনার কাছে আপনার ঐ ছোট্ট নৌকাটাতেই লুকানো থাক। যে নৌকায় করে আপনি গুইলামে টেল-এ আশ্রয় নিতে ছুটেছিলেন। আমি আর পল যখন ভিয়েনেভের আঁকা ছবিগুলো দেখলাম তখন ওর মধ্যে একটা ছোট্ট সাম্পানের ছবিও ছিল। প্রাণপণে কয়েকজন সেটা বাইছে। আমরা ভেবেছিলাম ওটার ভেতরেই বোধহয় লেখাগুলো লুকানো আছে।” ব্যাখ্যা করল গামায়।
“কিন্তু ওটা খুলে দেখার আগেই লোকটা আমাদের কাছ থেকে ওটা কেড়ে নেয়।” বলল পল।
“অবশ্য ওটার ভেতর কিছু আছে বলে আমি টের পাইনি। শুধু ভেবেছিলাম যে আছে বোধহয়।” বলল গামায়।
কার্ট কান ওদের দিকে থাকলেও ও আসলে খেয়াল করে কথাগুলো শুনছিল না। ওর মাথায় চলছে অন্য চিন্তা, “চিঠিতে কী লেখা আর একবার বলো তো।”
গামায় আবার বাক্যগুলো বলল, “সম্ভবত সত্যটা প্রকাশিত না হওয়াই মঙ্গল। ওটা আপনার কাছে আপনার ঐ ছোট্ট নৌকাটাতেই লুকানো থাক। যে নৌকায় করে আপনি গুইলামো টেল-এ আশ্রয় নেয়ার জন্যে ছুটছিলেন।”
“আপনার কাছে আপনার ঐ ছোট্ট নৌকাতেই” কার্ট বিড়বিড় করল। হঠাৎই ব্যাপারটা ধরতে পারলো ও, “গামায় তুমি একটা জিনিয়াস।”
“জিনিয়াস? কীভাবে?” জিজ্ঞেস করল গামায়।
“সবভাবেই। তোমরা দ্রুত মাল্টা চলে যাও। ওখানে গিয়ে দ্য চ্যাম্পিয়নের সাথে দেখা করবে। ইটিয়েনকে বলবে উনার পূর্বপুরুষের আঁকা আবুকির উপসাগরে যুদ্ধের ছবিটা দেখাতে। ওটা দেখলেই সব বুঝতে পারবে।” বলল কার্ট।
.
৬৭.
গোজো দ্বীপ, মাল্টা
রাত ৯টা
গামায় আর পল দ্য শ্যাম্পেনদের সাথে দেখা করতে এসেছে। নিকোল এসে ওদের ভেতরে নিয়ে গেলেন।
“কিছু মনে করবেন না। এখনও সব এলোমেলো হয়ে আছে।” বললেন উনি।
ইটিয়েন ওদের সাথে ফায়ার প্লেসের ওখানটায় দেখা করলেন। ওটা অবশ্য এখন নেভানো।