হাসানের হাতে একটা নাক-বোচা পিস্তল, স্করপিয়নের হাতে লম্বা নলের স্নাইপার রাইফেল।
“মনে তো হচ্ছে কেউ নেই,” পিস্তল হোলস্টারে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল হাসান।
“তবে বেশিক্ষণ এরকম থাকবে না।” বললো স্করপিয়ন।
হাসান মাথা ঝাঁকালো, “কোথাও লুকিয়ে অপেক্ষা করো যাতে মিলিটারি বন্ধুরা আবার ফিরে আসলে আটকানো যায়। আমার বেশিক্ষণ লাগবে না।”
করপিয়ন রুমের চারপাশে তাকাল। কার্ট আর জো-এর মতো ও-ও একই সিদ্ধান্তে পৌঁছালো : পুরো রুমটাই একসাথে কভার করার সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো এলিভেটরের খোল। তারপর রাইফেলটা কাঁধে ঝুলিয়ে কার্ট যেখানে ছিল সেখানে উঠে এলো।
কার্ট চাইলে দুজনকেই মেরে ফেলতে পারতো, কিন্তু ওর দুজনকেই জ্যান্ত ধরার ইচ্ছা। কিন্তু তারপরও অন্ধকারে বসে সোজা স্করপিয়নের মাথার দিকে পিস্তল তাক করে রেখেছে।
হাসান সামনে বাড়লো আর স্করপিয়ন কার্টের ঠিক দশ ফুট নিচে অবস্থান নিলো। ওখান থেকে ও কন্ট্রোল রুমের ভেতরটাসহ পুরো রুমটাই দেখতে পাবে। তবে ও একটা বারের জন্যও ওপরে তাকায়নি। তাকালেও অবশ্য কার্টকে দেখতে পেতো না। কারণ মাত্রই হোয়াইট ডেজার্টের চোখ ধাঁধানো বালির মধ্যে গাড়ি চালিয়ে এসে এখন এই অন্ধকারে ওর চোখ এখনো সয়ে আসেনি।
স্করপিয়ন দণ্ডটার ওপর সিধে হয়ে রাইফেলটা কাঁধের ওপর ফেলে বসে থাকল।
হাসান কন্ট্রোল রুমের দরজার সামনে একবার থেমে আবারো আশপাশটা একবার পরীক্ষা করল, তারপর ঢুকে পড়ল ভেতরে। তারপর ভেতরে উধাও হয়ে গেল দৃষ্টি থেকে।
স্করপিয়ন বসেই থাকল। একজন স্নাইপারের কাজই হলো চুপচাপ স্থির অবস্থায়, ধৈর্য ধরে বসে থাকা। কিন্তু ওর মন স্থির না। বারবার আগের কথা মনে পড়ছে। কণ্ঠস্বর মাথায় ঘুরছে। সাকির তাকে মরুভূমিতে হাঁটার আদেশ করছেন সেটা মনে পড়ছে। অস্টিন নামের আমেরিকানটা ওকে গোজো দ্বীপের সাগরে রাইফেলটা ফেলে দিতে বলছে সেটা মনে পড়েছে। আর একটু হলেই ও গুলি করতে গিয়েছিল তখন। এখন মনে হচ্ছে ওর আসলে কথা না শুনে গুলি করা উচিত ছিল। তখনই মেরে ফেলা উচিত ছিল। বা হ্যাঁগেনের বদলে ওকে মারলেই ভালো হতো। কিন্তু ওকে সে আদেশ দেয়া হয়েছিল না। তবে আগের দুবার বাঁচলেও তৃতীয়বার আর রক্ষা নেই।
চারপাশের নিস্তব্ধতার কারণেই ওর ইন্দ্রিয়গুলো আরো সজাগ হয়ে গিয়েছে। পাম্পের গুনগুন শুনতে ভালোই লাগছে। কিন্তু এতোক্ষণে তো ওটা পাল্টে যাওয়ার কথা। হাসান করছেটা কী?
স্করপিয়ন বেশ কয়েকবার চোখ কচলে আঁধারের সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু চোখে অন্ধকারের মাঝেও সবুজ সবুজ ঝলক দেখতে লাগল। মরুভূমির সূর্যের রেশ এখনো কাটেনি। ও মাথা কয়েকবার ঝাঁকি দিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়ার চেষ্টা করতে লাগল। ওর হাসানকে রক্ষা করতে হবে। মন অন্য দিকে গেলে চলবে না।
ও জোর করে সব চিন্তা সরিয়ে কন্ট্রোল রুমের দিকে নজর দিল। অবশেষে ও একটা অবয়বকে দেখতে পেল ভেতর থেকে এগিয়ে এসে কন্ট্রোল রুমের সিটের ওপর বসতে। প্রথমে কেমন ঝাপসা দেখাচ্ছিলো সব। একটু পর সেটা স্পষ্ট হলো। আরে ওটা তো হাসান না, ওটা অস্টিন।
“সেটা কীভাবে সম্ভব?” ভাবলো স্করপিয়ন।
ও আরো ভালো করে তাকিয়ে রাইফেলটা কাঁধে তুললো।
হঠাৎ বুঝতে পারলো ও সব। হেলিকপ্টারটা দিয়ে অস্টিন আবার ওদেরকে বোকা বানিয়েছে। সে আগেই এসে কন্ট্রোল রুমে লুকিয়ে ছিল। হাসান মনে হয় এতোক্ষণে মরেই গিয়েছে।
স্করপিয়ন শক্ত করে রাইফেলটা চেপে ধরলো। ওর ঠাণ্ডা মাথাটা আজ আর ঠাণ্ডা রাখতে পারছে না। ও রাইফেলটা চোখের সামনে আনলো তারপর সেটা অস্টিনের রুপালি চুলগুলোর ওপর স্থির হতে একটা লম্বা দম ফেলল। তারপর শরীরটা স্থির হতেই ট্রিগার টেনে দিল।
ছোট্ট একটা কাশি দিয়ে গুলিটা ছুটে গেল তারপর সোজা সেটা অস্টিনের পিঠে গিয়ে বিধলো আর ও মুখ থুবড়ে চেয়ারের ওপর পড়ে গেল। মারা গিয়েছে সাথে সাথে।
স্করপিয়ন একটা বড় শ্বাস নিয়ে অস্টিনের সঙ্গীর খোঁজ করল চারপাশে। কাছে পিঠেই কোথাও আছে সে ও নিশ্চিত। চোখের সাথে সাথে রাইফেলও ঘুরছে এদিক সেদিক।
হঠাৎ কন্ট্রোল রুমের দরজাটা ধড়াম করে খুলে গেল। কেউ একজন সেদিক দিয়ে একটা চেয়ার ছুঁড়ে মেরেছে। চেয়ারটা পাথুরে মেঝেতে উল্টে-পাল্টে পড়তেই স্করপিয়ন ওর ভুল বুঝতে পারলো। অস্টিন না, ও আসলে হাসানকে গুলি করেছে।
ও চেয়ার ঠেলে দেয়া লোকটার দিকে বন্দুক তাক করল কিন্তু ততোক্ষণে সে লাফ দিয়ে একপাশে সরে গিয়েছে।
হঠাৎ কেউ একজন ওকে ধাক্কা দিয়ে একপাশে নিয়ে ফেলল। স্করপিয়ন তাকিয়ে দেখে লোকটা অস্টিন। ও রাইফেলটা তোলার চেষ্টা করল কিন্তু নলটা কোণার দিকের একটা দেয়ালে আটকে গেল। জায়গাটা খুবই হোট। ও তাই সামনে লাফ দিয়ে অস্টিনের পেটে গুতো দিল। তারপর রাইফেলটা ফেলে দিয়ে একটা ছুরি তুলে নিলো।
স্করপিয়ন মাত্রই হাসানকে গুলি করে মেরেছে আর এখন কোণঠাসা একজনের মতো যুদ্ধ করা লাগছে।
কার্ট ওর শরীরের কাছ থেকেই হাত না বাড়িয়েই গুলি করল। আর স্করপিয়ন ছুরিটা বাগিয়ে ধরে কার্টকে আঘাত করার চেষ্টা করল।
কার্টের গুলিটা স্করপিয়নের ছুরি ধরা হাতটাতে গিয়ে লাগল। স্করপিয়ন উল্টে পড়ে গেল, আর হাত থেকে ছুরিটা গেল খসে। সুস্থ হাতটা দিয়ে কোনো মতে দণ্ডটা ধরে থাকল ও। ছুরিটা নিচে মাটিতে পড়ে ঝনঝনিয়ে উঠল।