“তোমার কী মনে হয় হাসান ওটা দেখতে পাবে?” জো জিজ্ঞেস করল।
কার্ট মাথা ঝাঁকালো; আশেপাশের দশ মাইলের মাঝে থাকলে ওর নজর এড়ানোর কথা না। আশা করি তাহলে ও ভাববে যে এখানে আর কেউ নেই।”
“হাসান এখানে আসবে বলে তোমার মনে হয়?”
“তুমি যদি হাসান হতে, আর তোমার শেষ অবলম্বনটা এই বিল্ডিংয়েই থাকতো তাহলে তুমি কী করতে?”
জো কাঁধ ঝাঁকালো, “আমি হলে ছুটি কাটাতে ফ্রান্সে চলে যেতাম। কিন্তু হাসান ছুটি কাটানোর লোক বলে আমার মনে হয় না।”
কার্ট জোর দিয়ে বলল, “ও হাল ছাড়বে না। আর ওর একমাত্র উপায় হলো পাম্পগুলো আবার আগের দিকে চালানো আর খরাটা অব্যাহত রাখা। আর তা যদি করতে পারে তাহলে কিছুটা অন্তত লাভ পাবে। কিন্তু আমাদের দুজনকে ও আশা করবে না মোটেও। এখন চলো ভালো কোথাও লুকানো যাক।”
ওরা আবার এলিভেটরে করে নিচে নেমে জায়গাটা আবার ভালো করে দেখতে লাগল।
“যতবারই ওদের মুখোমুখি হয়েছি ততোবারই একজন লোক আড়াল থেকে বেশ ঝামেলা বাধিয়েছে।”
“স্করপিয়ন।” বলল জো।
“আর হাসান যদি তাকে এখানে নিয়ে আসে, তাহলে বরাবরের মতো এবারও ওকে কোথাও লুকিয়ে থাকতে বলবে।”
“সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা হলো এলিভেটরটা। কিন্তু ওটার চারপাশ ঘেরা থাকায় গুলি করার জন্যে ওর চেয়ে ভালো জায়গা আর হয় না। সারা রুমেই যেদিকে খুশি গুলি করা যাবে।
কার্ট খাঁচার রডগুলো বেয়ে ওপরে উঠে গেল। তারপর পাথর আর এলিভেটরের মাঝে যে জায়গা সেখানটায় গিয়ে দাঁড়ালো। লুকানোর জন্যে যথেষ্ট জায়গা আছে। এমনকি এলিভেটর ওপরে উঠলেও সমস্যা হবে না। কার্ট পা ভাজ করে একটা জায়গায় বসতে বসতে বলল, “এটা ওপরে পাঠিয়ে দাও। খামাখা ওদেরকে অপেক্ষা করিয়ে রেখে লাভ নেই।”
জো “আপ” বোমটায় চাপ দিতেই ওটা সোজা ওপরে উঠে গেল। কার্ট আর এলিভেটরের মাঝখানে তখনও এক ফুট দূরত্ব।
“আমি কন্ট্রোল রুমে থাকবে। পাম্প উল্টাতে হলে ওরা ওখানেই প্রথম আসরে।” যেতে যেতে বলল জো।
.
৬৫.
স্করপিয়নই ল্যান্ড রোভারটা চালাচ্ছে। এই মরুভূমি ধরেই ওকে জ্বলন্ত সূর্যের মাঝে হাঁটতে বাধ্য করা হয়েছিল। প্রায়ই সেদিনের কষ্ট আর যন্ত্রণার কথা মনে পড়ছে ওর। মাঝে মাঝেই দূরে মানুষের মরীচিকা দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই ভূতের মতো হারিয়ে যাচ্ছে।
একটু পরই আবার আমেরিকানগুলোর কথা মনে পড়ল ওর। NUMA’র। লোক দুটো মাত্র ক’দিনেই পুরো সংস্থাটাই গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলা যায়। ও ওদেরকে একটা শিক্ষা অবশ্যই দেবে। এমনকি যদি ওসাইরিস ধ্বংস হয়ে যায় আর হাসানের শেষ চেষ্টাটাও যদি ব্যর্থ হয় তবুও সে ওদেরকে খুঁজে বের করবেই। ওর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে ও দরকার হলে।
হাসান চুপচাপ একঘেয়ে বালিয়াড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। পাশের সিটেই ও বসা। মাঝে মাঝেই বাতাস দিচ্ছে আর SUy-টা হালকা বালির আস্তরণে ঢেকে যাচ্ছে। ওপরে গনগনে সূর্য।
পাম্পিং স্টেশনটা চোখে পড়তেই স্করপিয়ন গাড়ি থামিয়ে দিল।
“কি হল? গাড়ি থামালে কেন?” হাসান জিজ্ঞেস করল।
“দেখেন।”
হাসান একটা বাইনোকুলার বের করে বিল্ডিংটার দিকে তাকাল। ওর চোখ এখন আর স্করপিয়নের মতো তীক্ষ্ণ নেই। তবে বাইনোকুলারটা দিয়ে ঠিকই গ্যাজেল হেলিকপ্টার চোখে পড়ল।
“ওটা তো আমাদের,” বলল হাসান।
“এখানে কী করছে?”
বাকিরা ওখান থেকে পালিয়ে এখানে চলে এসেছে এমনটা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সে গ্লোভ বক্স থেকে একটা রেডিও টেনে নিয়ে ওসাইরিসের ফ্রিকোয়েন্সি ডায়াল করলো। কল করতে যাবে তখনই দেখে ল্যাবের লোকজন একটা ট্রলি নিয়ে বিল্ডিং থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে প্রাস্টিকের বেশ কয়েকটা খাঁচা ওরা হেলিকপ্টারে তুলে দিল।
কাজ শেষ করে চারজনই হেলিকপ্টারে উঠে পড়ল আর হেলিকপ্টার চালু হয়ে গেল। তারপর ওপরে উঠে সোজা পূর্ব দিকে চলে গেল।
ওরা প্রতিষেধকটা নিয়ে গিয়েছে। তবে চলে যে গিয়েছে সেটাই বাঁচোয়া।” বলল হাসান।
“ওরা আবার ফিরে আসবে।” বলল স্করপিয়ন।
“পাম্পগুলো আবার আগের দিকে ফেরাতে আমার মাত্র কয়েক মিনিট লাগবে। আর একবার সেটা করতে পারলে জীবনেও আর ওরা ওটা আর উল্টো দিকে ফেরাতে পারবে না। চালাও এখন।”
স্করপিয়ন আবার গিয়ার ঠেলে রোভারটা চালানো শুরু করল।
মাটির নিচের ঘরটায় কার্ট অপেক্ষা করছে ধৈর্য ধরে। আশেপাশে পাম্পের ধুপধুপ শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। জো লুকিয়ে আছে কন্ট্রোল রুমে।
হঠাৎ কার্টের চমক ভেঙে দিয়ে এলিভেটরের খোলটা কাঁপতে আরম্ভ করল। ওপরে তাকিয়ে দেখে এলিভেটরটা নামছে ধীরে ধীরে। এখান থেকে ওটাকে ছোট্ট একটা চতুর্ভুজ মনে হচ্ছে। মাঝামাঝি এসে ওটা একটা লাইট পেরিয়ে এলো, চতুর্ভুজটার একটা পাশ কিছুক্ষণ আলোয় জ্বলজ্বল করল, তারপর আবার অন্ধকার।
কার্ট আরো খানিকটা পিছিয়ে গেল। একটুপরই এলিভেটরটা ওকে পেরিয়ে আরো তিরিশ ফুট নিচে নেমে থামল।
কার্ট ওর AR-15-টা নামিয়ে রেখে একটা বেরেটা কুঁগ্যার পয়েন্ট ফোরটি ফাইভ তুলে নিয়েছে হাতে।
টং করে একটা শব্দ হয়ে সামনের দরজাটা খুলে গেলে। দুজন লোক বেরিয়ে এলো। কার্ট সাথে সাথে হাসানকে চিনতে পারলো। অন্যজন সম্ভবত তাহলে স্করপিয়ন। দুজনেই বন্দুক উঁচিয়ে রেখেছে, যেন ঝামেলার আশংকা করছে।