ওরা পাম্পগুলো পার হয়ে এগুলো। ল্যাবরেটরিটা খুঁজছে। একটা দরজা দিয়ে ঢুকে ওরা একটা কন্ট্রোল প্যানেল খুঁজে পেল। ডিসপ্লে দেখে বোঝা গেল যে পাম্পগুলো এখনো উল্টো দিকেই পানি পাঠাচ্ছে।
“ওরা পাম্পগুলো আবার ঠিক করে দেয়নি দেখে অবাক হচ্ছি।” বলল জো কার্টও একই কথা ভাবছে। ও কীবোর্ড টিপে কিছু একটা করতে চাইলো কিন্তু স্ক্রিনে একটা পাস ওয়ার্ড চাইলো। ও কয়েকটা উল্টো-পাল্টা সংখ্যা প্রবেশ করালো কিন্তু কাজ হলো না। তারপর আরেকটা মেসেজ বক্স উদয় হলো যেখানে লেখা, “সিস্টেম লক। ওসাইরিসের কমান্ড কী প্রয়োজন।”
“এটা অনেক দূরের একটা স্টেশন আর পাম্পের দিক বদলানো হয়েছে একেবারে মেইন কন্ট্রোল রুম থেকে। এরা সম্ভবত ওখানকার পাস ওয়ার্ড জানে না, তাই দিক বদলে দিতে পারেনি।”
ওরা রুমের আশপাশটা দেখতে লাগল।
“এটা দেখো।” বলল জো।
কার্ট ওর দিকে এগুলো। জো আর ইদো একটা বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সমাধিক্ষেত্রের ভেতরের ল্যাবেও ওরা এরকম একটা দরজাই দেখেছিল। পাশেই একটা কীপ্যাড লাল রঙে জ্বলজ্বল করছে।
“এটাই তো খুঁজছি,” বলল কার্ট।
“কিন্তু ঢুকবো কীভাবে?” জিজ্ঞেস করল জো।
আমিও সেটাই ভাবছি।” বলে কার্ট গোলনারকে যে পাসওয়ার্ড টিপতে দেখেছিল সেটাই টিপলো।
কীপ্যাডটা এক মুহূর্তের জন্যে কালো হয়ে গেল। তারপর সেখানে ব্রাডগোলনারের নাম দেখা গেল কিন্তু দরজা খুললো না। তারপর আবার কীপ্যাড আবার লাল হয়ে গেল।
“ইস! ভেবেছিলাম কাজ হবে।” বলল জো।
“গোলনারের নাম আছে কিন্তু সে সম্ভবত এখানে ঢুকতে পারে না।”
কার্টের বলা শেষ না হতেই কীপ্যাড সবুজ হয়ে গেল আর হিস শব্দ তুলে দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে গেল। দুজন লোক আর একজন মহিলা বের হয়ে এলো ভেতর থেকে। প্রত্যেকের পরনে ল্যাব কোট। প্রথম লোকটা বেটে, ঘন জ্ব, চশমার ওপর দিয়ে বেরিয়ে আছে।
“ব্রাড?” ইতিউতি তাকিয়ে ডাকলো লোকটা।
“দুঃখিত! উনি আমাদের সাথে নেই।” বলল কার্ট।
ওরা এবার ওদের দিকে ভালো করে খেয়াল করল। তারপর ইদোর ইউনিফর্মের দিকে খেয়াল হতেই না জিজ্ঞেস করা প্রশ্নটার উত্তর পেয়ে গেল ….”আপনারা মিলিটারির লোক।”
ইদো বললেন, “আপনারা ভেতরে লুকিয়ে আছেন কেন?”
ওরা একজন আরেকজনের দিকে তাকাতে লাগল। তাদের ভীত দৃষ্টি দেখেই বোঝা গেল যে কাজটা করতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। লম্বা জওয়ালা লোকটা মুখ খুললো শেষমেশ,” ওসাইরিসের বিল্ডিংয়ে হামলার খবর পেয়ে এখানকার লোকেরা খুব নার্ভাস হয়ে পড়ে। কি করবে না করবে সেজন্যে বারবার ওখানে ফোন করতে থাকে কিন্তু কোনো জবাব আর আসে না। এরপর হঠাৎ পাম্পগুলো আবার উল্টোদিকে চলা আরম্ভ করে। ওরা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ঠিক করার কিন্তু কাজ হয়নি। তারপরই রেডিওতে ওরা তল্লাসীর খবর পায়। তখন ওরা আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যায়। ওরা ল্যাবটা ধ্বংস করে ফেলতে চেয়েছিল কিন্তু আমরা ভেতরে ঢুকে বসে ছিলাম। আমরা জানি ওরা আমাদেরকে দিয়ে কি করিয়েছে। তাই প্রতিষেধকটা ধ্বংস হোক সেটা আমরা চাইনি।”
“তার মানে এখানেই ওটা বানান আপনারা?” জিজ্ঞেস করল কার্ট। লোকটা মাথা ঝাঁকালো।
“এটা কাজ করে কীভাবে?”
“কোলা ব্যাঙগুলো থেকে নিতে হয়। লোকটা বলল।
“ওদের চামড়া থেকে সম্ভবত।” বললো কার্ট।
“হ্যা! আপনি কীভাবে জানেন?”
‘ব্রাড গোলনার আমাকে বলার চেষ্টা করেছিল। তবে পুরোটা বলার আগেই সাকির তাকে গুলি করে। কিন্তু সেও আপনার মতোই অপরাধবোধে ভুগছিল। শেষ চেষ্টা হিসেবে তাই আমাদের যা যা জানা দরকার সেসব জানিয়ে দিয়ে যান। উনি বলছিলেন ব্যাঙের চামড়া নাকি কন্টেইনারে করে কোথায় কোথায় পাঠানো হচ্ছিলো।”
লোকটা মাথা ঝাঁকালো, “যখন ঐ শুকনো চামড়াটা বৃষ্টির পানি পায় তখুনি ওটা থেকে একটা রাসায়নিক পদার্থ বের হয় যেটা ব্যাঙের স্নায়ুতন্ত্রকে আবার জেগে ওঠার জন্যে সংকেত দেয়। ফলে ব্যাঙের শীতনিদ্রা শেষ হয়। তবে মানুষের ওপর কাজ করার জন্য সংকেতটা একটু উন্নত করা লেগেছে। তবে কাজ একই রকম করে।”
“এখন কী পরিমাণ প্রতিষেধক আছে আপনাদের কাছে?”
“প্রচুর।”
“পাঁচ হাজার লোকের জন্য হবে?”
“ল্যাম্পেডুসার জন্যে? আমরা জানি ওখানে কি হয়েছে। হ্যাঁ, পাঁচ হাজার লোকের জন্যেও হয়ে যাবে।” বলল লোকটা।
“আশা করি পাঁচ হাজার একজনের জন্যেও হবে।” বলে কার্ট ইদোর দিকে ফিরলো।
“আপনি কী এদেরকে আর প্রতিষেকধটা আবার কায়রো নিয়ে যেতে পারবেন?
“আমরা কী থেকে যাবো নাকি?” জিজ্ঞেস করল জো।
কার্ট মাথা ঝাঁকালো, “তবে বেশিক্ষণ এখানে একা থাকতে হবে না।”
ইদো বুঝলেন ব্যাপারটা। তারপর থেকে তিনজনের দিকে ফিরে বললেন, “আপনাদের কী প্রতিষেধকটা নেয়ার জন্যে বিশেষ যন্ত্রপাতি কিছু লাগবে?”
“না। কক্ষ তাপমাত্রাতেই প্রতিষেধকটা টিকে থাকতে পারে।”
“তাহলে যত দ্রুত সম্ভব রওনা দেয়াই ভালো,” বললেন ইদো।
লোকগুলো সাথে সাথে প্রাস্টিকের খাঁচাগুলো একটা চাকা লাগানো ট্রেতে তুলতে লাগলো। ওগুলোর মধ্যে প্রতিষেধকের ভায়াল ভরা।
ইদো জো আর কার্টের দিকে ফিরে বললেন, “রেনাটাকে কায়রো পৌঁছা মাত্রই প্রতিষেধক দেয়ার ব্যবস্থা করবো, চিন্তা করবেন না।”
“ধন্যবাদ” বলল কার্ট।
.
কিছুক্ষণ পরেই ইদো প্রতিষেধক, বৈজ্ঞানিক আর আরো প্রতিষেধক তৈরির মালামালসহ হেলিকপ্টারটা নিয়ে উড়াল দিলেন। কার্টের অনুরোধে ইদো আগে হেলিকপ্টারটা দরকারের চাইতে বেশি ওপরে উঠিয়ে তারপরে পূর্বে কায়রোর দিকে রওনা দিলেন।