“জিনিসটা কি?” কার্ট জিজ্ঞেস করল। “ওটা হলো একটা বায়স, জো বলল।
বায়স মানে হলো কাক। লোহার কাটাটা প্রায় হুবহু দেখতে কাকের ঠোঁটের মতো। নামকরণও তাই এরকম।
জো আবার শুরু করল, “ইতিহাস নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি। রোমানরা খুবই দক্ষ যোদ্ধা হলেও পানির কাছে এরা ছিল অসহায়। অপর দিকে কার্থজিনিয়ানরা ছিল এদিক দিয়ে রোমানদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। রোমানরা তাই বিকল্প চিন্তা করল। জাহাজের সামনের দিকে এই রকম কাটা লাগিয়ে নিলো যাতে প্রতিপক্ষের জাহাজকে ফুটো করে আটকে ফেলা যায়। আটকে গেলেই ওরা দড়ি বেয়ে বা লাফিয়ে অন্য জাহাজে চড়ে বসতো, তারপর শত্রুদেরকে কচুকাটা করতো। এই কৌশলে ওরা প্রায় প্রত্যেকটা সামুদ্রিক যুদ্ধকেই শেষ পর্যন্ত সম্মুখ যুদ্ধে পরিণত করতে সক্ষম হয়।”
“তার মানে এখানে জাহাজ দুটো?”।
জো মাথা ঝাঁকালো, “একটা রোমান যুদ্ধ জাহাজ আর একটা কার্থেজনিয়ান জাহাজ। বায়স দিয়ে এখনো গাথা। প্রায় দুহাজার বছর আগে এখানে একটা যুদ্ধ হয়েছিল। ভাবা যায়!”
কার্ট এই নতুন আবিষ্কারে চমৎকৃত হলো, “কিন্তু ডুবলো কীভাবে?”
“সংঘর্ষের আঘাতে সম্ভবত। এতো জোরে ধাক্কা লেগেছিল যে দুটোর কাঠামোতেই চিড় ধরে যায়।” জো অনুমান করল। “আর রোমানরাও বোধহয় ওদের বায়স সময়মতো খুলে নিতে পারেনি। ফলে দুই শত্রু গলাগলি করে পানিতে ডুবে মরলো, এখনো সেভাবেই আছে।”
“তার মানে আমরা দুজনেই ঠিক। তোমার একশ টাকা বেঁচে গেল।”
“একশ টাকা?” বিস্ময় ঝরে পড়ছে মিশেলির কণ্ঠে। “তোমরা দুজন প্রায় গত একমাস ধরে এই বাজির কথা বলে বলে কানের পোকা নাড়িয়ে দিয়েছ। আর সেই বাজি কি-না মাত্র একশ টাকার?”
“টাকাটাইতো সব না। কার কথা ঠিক হয় সেটাই আসল।” কার্ট বলল।
“আর ও আমার বেতন কেটে রেখেছে। সম্বল বলতে ঐ বাজির টাকাটাই ছিল,” জো বলল।
“তোমাদের দুজনেরই মাথার স্ক্রু ঢিলা,” মিশেলি বলল।
কার্ট এই কথার সমর্থনে গর্ব করে কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু তার আগেই ইন্টারকমে আরেকটা কণ্ঠ শোনা গেল।
হেলমেটের সামনের ডিসপ্লে থেকে জানা গেল কণ্ঠটা ‘সী ড্রাগন থেকেই আসছে। তবে ডিসপ্লের নিচে ছোট্ট একটা তালা আর তার পাশে নিজের আর জো-এর নাম দেখে বুঝলো ওরা দুজন বাদে কথাটা আর কেউ শুনতে পাচ্ছে না।
“কার্ট, গ্রে বলছি। তুমি আর জাভালা শুনতে পাচ্ছ?” কণ্ঠটা বলল। গ্যারি রেনল্ডস হলো সী ড্রাগনের ক্যাপ্টেন।
“পরিষ্কার। শুধু আমাদের দুজনের সাথেই কথা বলছে দেখছি। কোনো সমস্যা?”
“সম্ভবত, রেডিওতে একটা সাহায্যের আবেদন ধরা পড়ছে। কি করব বুঝতে পারছি না।”
“কেন?” কার্ট জিজ্ঞেস করল।
“কারণ, আবেদনটা কোনো জাহাজ থেকে আসছে না। আসছে ল্যাম্পেডুসা থেকে।”
“ঐ দ্বীপটা থেকে?”
ল্যাম্পেডুসা দ্বীপটা ছোট। মাত্র পাঁচ হাজার লোকের বাস সেখানে। যদিও এটি ইতালির অধীনে, কিন্তু লিবিয়া থেকেই বেশি কাছে। সী ড্রাগন প্রতি সপ্তাহে একবার সেখানে গিয়ে তেল আর রসদপত্র নিয়ে আসে। এখনও এখানে NUMA-র পাঁচজন লোক আছে। উদ্ধারকৃত জিনিসগুলো দেখভালের জন্য।
কার্টের মনের ভেতরের প্রশ্নটা জো-ই করল : “দ্বীপে ঝামেলা তো এই মেরিন চ্যানেলে সাহায্যের আবেদন পাঠাচ্ছে কেন?”
“জানিনা। বুদ্ধি করে রেডিও অপারেটরেরা ওটা রেকর্ড করে ফেলেছে। বেশ কয়েকবার শুনেছি আমি। কলটা ভুয়াও হতে পারে, তবে ঐ দ্বীপ থেকে যে এসেছে সেটা নিশ্চিত।”
“আমাদেরকে শোনানো যাবে?”
“সেজন্যেই তো ফোন দিলাম। দাঁড়াও।” রেনল্ডস বলল। কয়েক সেকেন্ড পরেই একটা গুনগুন শোনা গেল তারপরেই শোনা গেল একজনের কণ্ঠস্বর। প্রথম কয়েকটা কথার কিছুই বোঝা গেল না। তারপর কণ্ঠটা পরিষ্কার হলো। একজন মহিলা কথা বলছে। কণ্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে মহিলা মারাত্মক বিপদে পড়েছে কিন্তু খুব কষ্টে নিজেকে শান্ত রেখেছে। প্রথম বিশ সেকেন্ড ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলল, তারপর ইংরেজিতে।
“….আবার বলছি, আমি ড. রেনাটা অ্যামব্রোসিনি….কারা যেন আক্রমণ করছে…..আমি হাসপাতালে আটকা পড়েছি…..কেউ সাহায্য করুন…আমরা বের হতে পারছি না। অক্সিজেনও কমে আসছে। প্লিজ কেউ সাড়া দিন।”
কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে আবার শুরু হলো একই কথা।
“ইমার্জেন্সি লাইনগুলো চেক করেছ? ওখানে কেউ কিছু বলছে?” জো জিজ্ঞেস করল।
“নাহ। তবে আমি ওখানকার আমাদের লোকগুলোকে ফোন করেছিলাম। কেউ ধরেনি।” রেনল্ডস বলল।
“এ রকম তো হওয়ার কথা না। আমরা সমুদ্রে যতক্ষণ থাকি ততোক্ষণতো সবসময়ই রেডিওর পাশে কারো না কারো থাকার কথা। জো বলল।
কার্টও সায় দিল তাতে। “অন্য কাউকে ফোন দাও। বন্দরের কাছেই একটা ইতালিয়ান কোস্ট গার্ডের অফিস আছে। ওদের কমান্ডারের সাথে কথা বলা যায় কি-না দেখো।”
“চেষ্টা করেছি। রেডিওগুলোতে কিছু হলো কি-না ভেবে, স্যাটেলাইট ফোনেও চেষ্টা করেছি। কাজ হয়নি। আমার কাছে ল্যাম্পেডুসার যতগুলো নাম্বার ছিল সবটাতে ফোন দিয়েছি। পুলিশ স্টেশন এমনকি পিজ্জার দোকানেও, কিন্তু কেউই ফোন ধরেনি। সামান্যতেই ঘাবড়ানোর লোক আমি না, কিন্তু তবুও কেন যেন মনে হচ্ছে পুরো দ্বীপটাই একসাথে চুপ মেরে গেছে।”
এত সহজেই উপসংহারে পৌঁছানোর লোক কার্ট না, যদিও মহিলাটা বলেছে যে তাদেরকে আক্রমণ করা হয়েছে। “পালের্মোতে ইতালিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করো। জাহাজ থেকে আসুক না আসুক, সাহায্যের আবেদন মানে সাহায্যের আবেদন। ওদেরকে জানাও যে কি হয়েছে সেটা দেখতে আমরা ওখানে যাচ্ছি।