কার্ট আর জো দৃষ্টি বিনিময় করল। “কোথায় গিয়েছে বলতে পারবেন?”
ইদো মাথা নাড়লেন, “না। তবে কয়েকজন পাইলটের কাছ থেকে একটা তথ্য পেয়েছি। আসেন আপনাদের দেখাই।”
উনি ওদের দেওয়ালে ঝোলানো একটা মানচিত্রের কাছে নিয়ে গেলেন। “এই ম্যাপে ওসাইরিস জলাধারগুলো থেকে পানি সরাতে যে পাম্পগুলো ব্যবহার করতো সেগুলো দেখানো আছে। প্রায় ১৯টা প্রাথমিক পাম্প আর ছোট-খাটো আরো কয়েক ডজন পাম্প আছে। যতদূর জানা গিয়েছে যে সবই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে। শুধু একটা বাদে।”
ইদো কায়রোর পশ্চিমে একটা জায়গা দেখালেন। জায়গাটা হোয়াইট ডেজার্ট নামে পরিচিত। আমরা যেসব পাইলটকে আটক করেছি তাদের দেয়া তথ্য মতে ওরা প্রতিদিন এই জায়গাটায় খাবার পানি আর রসদপত্র নিয়ে যায়।”
“তার মানে এটা মানুষেরাই চালায়?” কার্ট জিজ্ঞেস করল।
ইদো মাথা ঝাঁকালেন। “কিন্তু কোন মানুষ পাইলটগুলো বলল ওখানে ওসাইরিসের লোক বাদেও অন্য বেসামরিক লোকজনও আছে। প্রতি তিনদিন অন্তর নাকি এসব বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে প্যাকেট করা বিভিন্ন জিনিস ডেলিভারি নেন।”
ব্রাড গোলনার মারা যাওয়ার আগে ওকে কি বলেছিল তা মনে পড়ল কার্টের।
“তার মানে ওখানেই ওরা প্রতিষেধকটা বানায়। ওটা চেক করে দেখতে হবে।”
“আমার হাতে এতো লোক নেই। পুরো সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন পাওয়ার আগে এটা করা সম্ভব না।” ইদো বললেন।
“আমাদেরকে শুধু একটা হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে দিন।”
“আমার কোনো হেলিকপ্টারও নেই। তবে ছাদের ওপর একটা আছে। ওসাইরিস ইন্টারন্যাশনালেরই হেলিকপ্টার।”
.
৬৪.
রেনাটাকে মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে রেখে কার্ট, জো আর ইদো হেলিকপ্টারটায় এসে বসলো। এটার গায়ে ওসাইরিসের ছাপ্পা মারা।
ইদো-ই প্রধান পাইলটের সিটে বসলেন, জো বসলো তার পাশে আর কার্ট পিছনে বসে নিচের চকচকে সাদা বালি পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। মাইলকে মাইল শুধু বালি, কোনো জনবসতি নেই। মাঝে মাঝে কিছু উঁচু উঁচু পাথর দেখা যাচ্ছে। তারপরও কেমন অপার সৌন্দর্যে মহিমান্বিত চারপাশ। হঠাৎ মরুভূমিতে দুটো গাড়ি চোখে পড়ল, তবে ভালো করে খেয়াল করতেই বোঝ গেল ও দুটো পরিত্যক্ত।
আর কিছুদূর পরেই লম্বা চিকন পাইপ লাইনটা চোখে পড়ল। ওটা শেষ হয়েছে একটা ধূসর দালানের পাশে। তারপর থেকে বালির নিচে ঢুকে গিয়েছে। যেন একটা সাপ মাটির নিচে ঢুকছে।
“ঐতো। ওখানেই পাইপ বালির ভেতর থেকে বের হয়ে এসেছে। কার্ট বলল। ইদো সেদিকে হেলিকপ্টার নামাতে শুরু করলেন। দালানটার পাশে কোনো গাড়ি বা কোনো লোকজনও দেখা গেল না।
“মনে তো হচ্ছে কেউ নেই।” বলল জো।
*এখনই বলা সম্ভব না। ভেতরে বসে আছে কি-না কে জানে।” ইদো জবাব দিলেন।
“একটা হেলিপ্যাড দেখা যাচ্ছে।” বলল কার্ট।
“এখানেই নামাচ্ছি তাহলে।”
ইদো কপ্টারটা নামাতেই চারপাশে হালকা ধূলোর ঝড় উঠল।
কার্ট সেই ফাঁকে লাফ দিয়ে নেমে পড়েছে। হাতে একটা AR-15। যদি কেউ আক্রমণ করে বসে সেই লক্ষ্যে। ওর নজর প্রতিটা দরজা আর জানালার দিকে। সুযোগ পাওয়া মাত্র গুলি করবে। কিন্তু কাউকেই দেখা গেল না।
জো আর ইদোও নামলো পরপরই। কার্ট আঙুল দিয়ে সামনের দিকে দেখালো। একটা ভাঙ্গচুরের আওয়াজ পেয়েছে ও। যেন ওপর থেকে বড় কিছু একটা আছড়ে পড়েছে।
জো আর ইদো ওর কাছ থেকে বেশ খানিকটা দূরে সরে গেল যাতে করে কোনো একজন একবারে ওদের তিনজনকেই গুলি করতে না পারে। সামনে এগিয়ে একটা দরজা খোলা পেল ওরা। ওটা বাতাসে দোল খাচ্ছিলো। আর বারবার বাজুর সাথে বাড়ি খাচ্ছে কিন্তু হুড়কে টেনে দেয়ার কারণে ঠিকমতো লাগতে পারছে না।
ইদো ওটার হাতলের দিকে ইঙ্গিত করে ইশারায় দেখালেন যে উনি ওটাকে খুলে ধরবেন। কার্ট আর জো মাথা ঝাঁকালো।
ইদো দরজাটা টেনে ধরতেই কার্ট আর জো ওদের রাইফেল ঘরটার ভেতরে তাক করে ধরলো। ওদের শক্তিশালী ফ্লাশ লাইটের আলোয় পুরো রুম ভেসে গেল।
“কেউ নেই।” বলল জো।
কার্ট দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ভবনের নকশাটা দারুণ। যে কেউ এখানে কাজ করে আরাম পাবে। ছাইরঙ্গা দেয়াল। পাকা মেঝে। তিনটে পাম্প ঘরের ভেতর। সেগুলো থেকে পাইপ বেরিয়ে প্যাঁচ খেয়ে খেয়ে একসাথে এসে মিলেছে। শুধু দূরে পড়ে থাকা একটা জিনিসই এখানকার না বলে মনে হলো, “এটা আবার কি?”
জোও কার্টের ডাক শুনে সেদিকে লাইট তাক করল।
সামনেই একটা ধাতব খাঁচা আর শক্তিশালী একটা কপিফল চোখে পড়ল।
“এটা তো ঐ মাটির নিচের গুহার এলিভেটরটার মতো লাগছে।”
“আমরা ওখান থেকে কমপক্ষে তিরিশ মাইল দূরে। তবে তোমার কথা ঠিক। একই জিনিস।” বলে,
কার্ট চালু করার সুইচটা টিপে দিল, “নিচে নেমে দেখে আসি চলো।”
তিনজনই খাঁচাটায় চড়ে বসলো। জো একটা সুইচ টিপতেই দরজা বন্ধ হয়ে খাঁচাটা নিচের দিকে নামা আরম্ভ করল।
এখানেও প্রায় কয়েকশো ফুট নিচে নেমে এলো ওরা। দরজা খুলতেই চোখে পড়ল আরো অনেক পাম্পওয়ালা আরেকটা রুম।
“এগুলো তো দেখি ওপরেরগুলোর চাইতেও বড়। ওসাইরিসের পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পেরগুলোর মতো।” বললেন ইদো।
এগুলো থেকে পাইপ বেরিয়ে মাটির ভেতর ঢুকে গিয়েছে, এগুলো তো জলাধার থেকে প্রচুর পানি সরিয়ে ফেলছে।”
“কিন্তু তোমার বদান্যতায় এখন তো আবার ফেরত পাঠাচ্ছে।” বলল জো।