কার্ট উঠে দাঁড়িয়ে চারপাশটা পরীক্ষা করল। আমরা যদি সতর্ক না হই তাহলে আমাদের অবস্থাও ওনার মতোই হবে। এই জায়গায় থাকলে আর বেশিক্ষণ টিকতে পারবো না। আমি আমাজনের কুমিরদেরকে দেখেছি পাঁচ ফুট লাফ দিয়ে গাছের ডাল থেকে পাখি ধরতে। আর বিশাল বিশাল মহিষ পর্যন্ত ওরা এক টানে পানির কিনার থেকে টেনে নিয়ে যায়।”
জো’ও জানে সে কথা, “ওরা তো এখন খাওয়ায় ব্যস্ত। এখন ভেগে গেলে কেমন হয়?”
“আমি রেনাটাকে নিচ্ছি। তুমি মেশিন গানটা নাও। আমরা সোজা সুড়ঙ্গ ধরে এগিয়ে ওসাইরিস প্লান্টে ফিরে যাবো। আমি ভায়ালটা এখানেই ভেঙে রেখে যাচ্ছি। আর তুমি সামনে যা পড়বে সেটাকেই গুলি করবে। আর যত দ্রুত সম্ভব এগোবো আমরা।”
“ঠিক আছে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে শেষ কাজটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” বলল জো।
কার্ট রেনাটাকে কাঁধে তুলে নিলো আর বাম হাত দিয়ে ওর পা প্যাচিয়ে ধরল। আর ডান হাতে ভায়াল।
“এগুনো যায়।” সামনে থেকে বলল জো।
তারপর নিশ্চিত হওয়ার জন্য সামনের দিকে গুলি ছুড়লো কয়েকটা। তারপর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সামনে বাড়লো। জো অবশ্য মোটামুটি নিশ্চিত যে সুড়ঙ্গের আধাআধি যাওয়ার আগেই ও জ্যান্ত কুমিরের পেটে যাবে। হঠাৎ বামে কিছু একটা দেখে গুলি করল। জিনিসটা একটা জুতো। তারপর ডানে ঘুরলো কিন্তু কিছু নেই।
কার্টও নেমে ভায়ালের মুখটা খুলে ফেলল। তারপর ভেতরের জিনিস ওদের পিছন দিকে ছড়াতে ছড়াতে এগুলো।
জো আবার গুলি করতেই ও চমকে ফিরে তাকাল। তবে এবার ঠিকই কিছু একটা উল্টো দিকে ছুটে পালালো। কিন্তু ওটা কিছুদূর গিয়েই আবার ঘুরে ওদের দিকে ছুটে এলো।
পিছনে ফিরে দেখে জানোয়ারটা ওদের প্রায় ধরে ফেলেছে। জো! চিৎকার দিল ও।
আবারো ব্রেডার শব্দ পাওয়া গেল। কিন্তু দুটো গুলি করেই ওটা আটকে গেল। কুমিরটা না থেমে কার্টের পায়ে এসে তো দিল।
ধাক্কায় কার্ট উল্টে পড়ে গেল, তবে কুমিরটা ওকে কামড় দেয়নি। ও আবার পানির ওপর মাথা তুলে দেখলো কুমিরটা একটা নিরীহ খেলনার মতোই ভেসে যাচ্ছে একদিকে। তা সেটা কী জো’র গুলি খেয়ে নাকি ব্লাক মিস্টের প্রভাবে সেটা কার্ট-জানে না।
জো দ্রুত বেগে সামনে বাড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা পানি ছাড়িয়ে শুকনো জায়গায় উঠে এলো।
ওরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো সেখানে। আরও কিছুক্ষণ নিতো কিন্তু পানির উচ্চতা বাড়ছেই।
“চলো ফেরা যাক।” বলল কার্ট।
জো ব্রেডাটা ঠিকঠাক করে আবার সেই ভেতরে ঢোকার সুড়ঙ্গটা ধরে মমি ব্যাঙ আর আনুবিসের রুমটা পেরিয়ে ট্রামের রাস্তাটার কাছে চলে এলো। একটা গাড়ি তখনও আছে। ওরা চড়ে বসলো সেটায়। ফিরে চললো ওসাইরিস প্লান্টে।
পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছে দেখে জেনারেটর রুমের দরজাটা হা করে খোলা। ট্রাম থেকে নামতেই ঈজিপশিয়ান মিলিটারির ড্রেস পরা বেশ কয়েকজন লোক ওদেরকে ঘিরে ধরলো। হাতে রাইফেল। জো ওর হাতের অস্ত্র ফেলে দিয়ে হাত মাথার ওপর তুলে ধরলো। কার্টও রেনাটাকে কাঁধের ওপর রেখেই হাত ওপরে তুললো।
তীক্ষ্ণ চোখের এক লোক ওদের দিকে এগিয়ে এলো। তার ইউনিফর্মে একটা ঈগল অফ সালাদিন লাগানো। তার মানে সে একজন মেজর।
লোকটা রেনাটার নিশ্চল দেহটা একবার পর্যবেক্ষণ করল তারপর কার্ট আর জোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনারা কী আমেরিকান?”
কার্ট মাথা ঝাঁকালো।
“জাভালা আর অস্টিন?”
দুজনেই মাথা ঝাঁকালো এবার।
“আমার সাথে আসুন। জেনারেল ইদো আপনাদের সাথে দেখা করতে চান।”
.
৬৩.
ইদো তার পুরাতন ইউনিফর্মটা পরেছেন আজ। এই দুই বছর পরও ঠিকঠাক হয়েছে সেটা।
“আমরা চলে আসার পর কী আবার আর্মিতে যোগ দিলেন নাকি?” জিজ্ঞেস করল জো।
“দেখানোর জন্যে পরেছি শুধু। আমিই এদেরকে এখানে এনেছি। তাই ভাবলাম ওদের মতো সাজাটাই ভালো।” ব্যাখ্যা করলেন ইদো।
“এখানে ঢুকতে খুব ঝামেলা হয়েছে নাকি?”
“বেশি না। এখানকার বেশিরভাগ লোকই বেসামরিক। তবে সুড়ঙ্গ থেকে বের হওয়া ওসাইরিসের বিশেষ দলটার সাথে কিছুটা গোলাগুলি হয়েছে। তবে সাকির যে ব্যাপারটা হালকাভাবে নেবে না সেটা জানি। আমাদের যেমন মিলিটারি বা সরকারে লোজন আছে, তার আরও বেশি আছে।”
“সাকিরকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না। কুমিরের বদহজম করা ছাড়া আর কোনো ঝামেলা করার ক্ষমতা আর তার নেই।” বলল জো।
কার্ট বিস্তারিত ব্যাখ্যা করল। কীভাবে সাকির মারা গিয়েছে আর ওরা সুড়ঙ্গের অপর প্রান্তে কি গুপ্ত ধন খুঁজে পেয়েছে সেসব। সেসব অবশ্য আবারো পানিতে তলিয়ে গিয়েছে।
ইদো পুরোটাই মোহাবিষ্টের মতো শুনলো, “এ এক দারুণ বিজয়।” সবশেষে মস্তব্য করল সে।
“তবে বিজয়টা পুরোপুরি হয়নি।” খালি ভায়ালটা তুলে ধরে বলল কার্ট, “আমরা শুধু বিষটা খুঁজে পেয়েছি। প্রতিষেধকটা পাইনি। তার ওপর হাসানও পালিয়ে গিয়েছে। ও একবার ওসাইরিসের সমর্থকদের কাছে পৌঁছাতে পারলেই রাজনৈতিকভাবে তখন ঝামেলা শুরু হয়ে যাবে।”
“হাসান একটা বুড়ো শেয়াল। কতবার যে সে ধরা পড়তে পড়তে পালিয়ে বেঁচেছে তার ইয়ত্তা নেই। তবে এবার সে একটা ছাপ রেখে গিয়েছে। যারা ধরা পড়েছে তাদের ভাষ্যমতে ও নাকি খনির দিকের একটা বের হওয়ার রাস্তা। দিয়ে পালিয়েছে। সাথে ছিল মুখে ব্যান্ডেজ ওয়ালা একটা লোক। নাম নাকি স্করপিয়ন।”