কার্ট দাঁত বের করে হাসলো আর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। উঠে দাঁড়ানো মাত্র গুলি খাবে এই আশংকা করছে।
ও সোজা হয়ে সাকিরের চোখের দিকে তাকাল। রেনাটা তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
“তোর সাথের জন কই?” সাকির চিৎকার দিলেন।
কার্ট জোর দিকে একবার তাকাল, তারপর বলল, “ওর পা ভেঙে গিয়েছে দাঁড়াতে পারবে না।”
“এক পায়েই দাঁড়াতে বল।”
জো মাথা ঝাঁকালো। গুলি করার জন্যে প্রস্তুত ও।
“আপনি বলেন!” বলল কার্ট। তারপর একটা ভায়াল সাকির যে কফিনটার ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেটা লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলো। কিন্তু ওটা কফিনে লাগলো না। পানিতে পড়ে টুপ করে ডুবে গেল।
সাকির জিনিসটা ছুটে আসতে দেখেই খানিকটা পিছিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ওটা ওনার পর্যন্ত আসলো দেখামাত্র পিস্তল তুলে কার্টের দিকে গুলি করলেন। কার্টও এর মধ্যে অন্য ভায়ালটা ডান হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মেরেছে। এবারেরটা ঠিক সাকিরের দুইপায়ের ফাঁকে পাথরের ওপর পড়ে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। ভেতরে যা ছিল তা সোজা ওপরে উঠে গেল।
সাকির টলতে টলতে পিছিয়ে গেলেন। চোখে ঝাপসা দেখছেন তিনি। কি হয়েছে বুঝতে পারছেন কিন্তু তার আর কিছুই করার নেই। ব্লাক মিষ্ট তাকে গ্রাস করছে। আরো একবার কার্টের দিকে গুলি করলেন কিন্তু সেটার ধাক্কায় নিজেই উল্টো পানিতে পড়ে গেলেন।
জোও তৎক্ষণাৎ মাথা বের করে গাড়িটার পাশে রাইফেলটা বসিয়ে স্ফিংস-এর দিকে গুলি করা শুরু করল। নিস্তব্ধ ঘরটায় ব্রেডার গুলির আওয়াজ কামানের গোলার মতো শোনালো।
প্রথম গুলিটা লাগল না। কিংস-এর ওপরের সৈন্যটা পিছিয়ে আড়ালে চলে গেল। কিন্তু পরের গুলিটা মূর্তিটার মাথাটা উড়িয়ে দিল।
সৈন্যটা বড় দেরিতে নিজের ভুল বুঝতে পারলো। কিংসটা আসলে প্লাস্টারের তৈরি। তার ওপরে সোনার পাতা আর দামি পাথর রাখা। আর জো যে অস্ত্রটা থেকে গুলি করছে সেটা লোহার পাত পর্যন্ত ভেদ করতে পারে। তাই মূর্তিটার মাথাটা ঠিক কাগজের টুকরোর মতো উড়ে গেল চারপাশে।
পরের গুলিটা তার গায়েই লাগলো আর সে হাঁটুর ওপর পড়ে গেল। পরের গুলিটার ধাক্কায় সে স্ফিংস-এর গা থেকে গড়িয়ে পানিতে পড়ে গেল। তারপর মুখ উপুড় করে ভাসতে লাগল।
.
৬২.
কার্ট চারপাশে তাকিয়ে শোনার চেষ্টা করছে। পুরো ঘরটা জুড়ে পিনপতন নিস্তব্ধতা। গোলাগুলি শেষ। একটু পরেই স্ফিংস-এর কাছে পানিতে আলোড়ন উঠল। কারণ একটা কুমির মৃত সৈন্যদের দেহটা খুঁজে পেয়েছে। ওটাকেই সে এখন টানাটানি শুরু করেছে।
“রেনাটাকে নিয়ে এসো।” জো বলল।
কার্ট অবশ্য এর মধ্যেই এগোতে শুরু করেছে। গাড়ি থেকে একটা গ্যাস মাস্ক তুলে নিয়ে পরেও ফেলেছে।
অর্ধেকটা জীবন পানিতে কাটানোর পরও কার্ট প্রতিবার অবাক হয়। পানি হাঁটুর ওপর উঠলেই দৌড়াতে এত কষ্ট কেন হয় ভেবে। ও যত সম্ভব দ্রুত সামনে এগিয়ে দেখতে পেল রেনাটা পানিতে ভাসছে। জ্ঞান নেই। ও ওকে টেনে কাঁধের ওপর তুলে একটা পাথরের কফিনের ওপরে উঠে দাঁড়ালো। ওপরে উঠেই ও আসল ঝামেলাটা দেখতে পেল। গর্ত থেকে সব কুমিরই বের হয়ে এসেছে। ওরা এখন খাদ্যের সন্ধানে পুরো সমাধিক্ষেত্রটা চষে বেড়াচ্ছে। চারটা দেখা যাচ্ছে। পানির নিচে আরও থাকতে পারে।
জোও কাত হওয়া গাড়িটার ওপর চড়ে বসেছে। আপাতত নিরাপদ ওরা তবে পানি আরও বাড়ছে। আশেপাশে কোনো কুমির চোখে না পড়ায় কার্ট জো-কে ওর কাছে আসতে ইশারা করল।
জোও একটা গ্যাস মাস্ক পরে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে কাছের কফিনটায় উঠে বসলো। তারপর একটা থেকে আরেকটায় লাফিয়ে লাফিয়ে কার্টের কাছে পৌঁছে গেল। একেবারে মাইনকার চিপায় পড়ে গেলাম দেখছি।”জো বলল।
কাঁপা কাঁপা হলেও মাস্কের ভেতর দিয়েও কার্ট জোর কণ্ঠের ব্যঙ্গটা টের পেল।
“তাইতো দেখছি।”
সাকির মাত্র চার ফুট পানিতে চিত হয়ে আসছেন। তার পাশেই ভাসছে ব্লক মিস্টের শেষ ভায়ালটা।
“পানিতে খেয়াল রেখো তো।” বলে কার্ট পানিতে নেমে সাকিরের দিকে এগুলো। সাকির আর ভায়াল দুটোই ওর দরকার। সাকিরের মুখ থেকে কথা বের করতে পারলে কাজে দেবে।
ও এক হাতে ভায়ালটা নিয়ে অন্য হাতে সাকিরকে টান দিল। সাকিরকে টেনে আনা লাগছে বলে ওর গতি আরো কমে গেল।
“তাড়াতাড়ি,” জো চিৎকার দিয়ে ব্ৰেডাটা তুলে কার্টের মাথার ওপর দিয়ে গুলি করল।
কার্ট চেষ্টা করছে কিন্তু পানি ওকে টেনে ধরছে বার বার। দৌড়ানোর চেষ্টা করতেই পা গেল পিছলে। তারপরও হাড়ে পাঁচড়ে কোনো মতে ও একটা কফিনের ধারে পৌঁছেই সেটায় উঠে পড়ল। তারপর সাকিরকেও টান দিল ওপরে তোলার জন্যে।
পর মুহূর্তেই পানির বিশাল একটা ঢেউ আছড়ে পড়ল কফিনটার গায়ে। একটা বারো ফুট লম্বা কুমির এগিয়ে এসে সাকিরের পা কামড়ে ধরলো। তারপর এক টানে কার্টের হাত থেকে ছুটিয়ে সাকিরকে পানির নিচে টেনে নিয়ে গেল।
পানির রঙ প্রথমে লাল হয়ে গেল তারপর বাকি কুমিরগুলোও সেদিকে ধেয়ে আসায় লালের মাঝে ছোপ ছোপ সবুজ দেখা যেতে লাগল। কিন্তু একজন লাশটা নিয়ে সাঁতরে একপাশে চলে গেল। বাকিরাও তাকে ধাওয়া করল।
“শেষমেশ ওনার পরকালের দেবতার সাথে সাক্ষাৎ ঘটতে যাচ্ছে,” বলল জো।
“কেন যেন মনে হচ্ছে সাকিরের কাজ-কর্ম ওসাইরিসের পছন্দ হবে না।” বলল কার্ট।
“লোকটার এমনটাই পাওনা ছিল, কিন্তু ওনার সাথে সাথে আমাদের প্রতিষেধক পাওয়ার শেষ আশাটা ভেসে গেল।” বলল জো বিষণ্ণ কঠে।