জবাবে প্রথমেই সাকির হেসে দিলেন। “পানি বন্ধ করার উপায় একটা বের করবই। আর তোরা যা করেছিস সেটও ঠিক করা কোনো ব্যাপার না আমার জন্যে। একটু বাড়তি ঝামেলা হবে এই যা।”
“মোটেও না। আপনার কম্পিউটার দিয়ে আমি আমার কর্তাদেরকে মেসেজ পাঠিয়েছি। আপনি মাটির ওপর যেতে যেতেই আপনার কীর্তিকাহিনী পুরো দুনিয়ার সামনে ফাস হয়ে যাবে। সবাই জেনে যাবে যে খরার জন্যে আপনিই দায়ী। পিওলা আর আপনার বাকি সব লোক সম্পর্কেও সবাই সব জেনে যাবে। সবাই এটাও জানবে যে আপনি যে বিষটা ব্যবহার করে সবাইকে মরণ ঘুম পাড়াচ্ছেন সেটা আসলে আফ্রিকান কোলা ব্যাঙ থেকে বানানো হয়। পরের বার যখন আপনি কাউকে বলবেন যে আপনি কাউকে মেরে ফেলে আবার জ্যান্ত করতে পারেন, সে নিশ্চিত হাসবে।”
হঠাৎ কয়েকটা গুলি এসে AS-42-টার নিচের অংশে আঘাত করলো।
কার্ট বুঝলো খোঁচাটা একেবারে জায়গামতো লেগেছে।
“বন্দুক হাতের একটা পাগলকে আরো ক্ষেপানো কী ঠিক হচ্ছে?” বলল জো।
“আমাদের মাঝখানে একটা গাড়ি আছে তা ভুলে গিয়েছ? কার্ট বললো।
“উনি তেলের ট্যাঙ্কে গুলি করলে?”
“ভাল কথা বলেছ। ভাগ্য ভালো যে আমরা পানিতে ডুব দিতে পারবো যদি জায়গামতো গুলি লেগেই যায়।”
পানি কার্টের কোমর পর্যন্ত চলে এসেছে। প্রতি মিনিটে প্রায় এক থেকে দুই ইঞ্চি বাড়ছে পানি। কার্ট একবার ভাবলো সাঁতার দেবে কিন্তু একটা জিনিস চোখে পড়ায় মত বদলে ফেলল। ওদের ঠিক উল্টো পাশে একটা লম্বা, চ্যাপ্টা সবুজাভ কিছু একটা নড়তে দেখা যাচ্ছে।”
“নতুন একটা ঝামেলা হাজির।” বলল কার্ট।
জোও দেখেছে জিনিসটা। “গুলি খেয়ে মরবো নাকি কুমিরের পেটে যাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।”
পানি এখন পুরো রুম জুড়েই, আর কুমিরের গর্তে পৌঁছে গিয়েছে।
“আপনি হয়তো ভাবছেন এখান থেকে পালাতে পারবেন, কিন্তু কুমিরগুলোর হাত থেকে বাঁচবেন কীভাবে? চেঁচিয়ে বলল কার্ট।
“ওরা তোদেরকেই খেতে ব্যস্ত থাকবে। আমাকে বিরক্ত করবে না। আমি উঁচু জায়গাতেই আছি।” বললেন সাকির।
সাকির ভাঙ্গা গাড়িটার একটা ফোকর দিয়ে উঁকি দিল। সাকির একটা পাথরের কফিনের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। কিছু একটা তার পায়ের কাছে পড়ে আছে।
আপনার ওখানেও পানি পৌঁছে যাবে একটু পরেই। তার চেয়ে আমি একটা প্রস্তাব দেই ভেবে দেখেন। আপনি আর আপনার লোকেরা ঢোকার সুড়ঙ্গটা দিয়ে চলে যাই আর আমরা এলিভেটরটা দিয়ে ওপরে উঠি। তারপর কোনো শুকনো জায়গায় না হয় আবার আমাদের হিসেবটা চুকিয়ে নেবো।”
আরো একটা কুমির গর্ত থেকে বেরিয়ে এলো। ওটার পিছনে আরো দুটো তারপর ভুস করে ডুবে গেল পানিতে। নাস্তা হিসেবে ওদেরকে খুঁজে নিতে ওগুলোর বেশি সময় লাগবে না।
“আমি আরো ভালো একটা প্রস্তাব দিচ্ছি। তোরা দুজন এক্ষুনি হাত উঁচু করে দাঁড়া আর আমি তোদেরকে সাথে সাথে একেবারে ওপরে পাঠিয়ে দেই।” বললেন সাকির।
“এটা আরো ভালো প্রস্তাব হয় কী করে?” জিজ্ঞেস করল কার্ট।
“কারণ সেটা না হলে আমি এই ইতালিয়ান মহিলার দুই হাঁটুতে দুটো বুলেট ঢুকিয়ে দিয়ে পানিতে ফেলে দেব আর তোরা ওখানেই দাঁড়িয়ে দেখবি।”
“এই জিনিস আবার জিজ্ঞেস করতে হয়?” বলল জো।
কার্ট হতাশ হয়ে মাথা নাড়লো, “এখন অন্তত আমরা জানি যে ও কোথায়।”
ওদিক থেকে রেনাটা চিৎকার করল, “আমাকে শেষমেশ মেরে ফেলবেই। আপনারা পালান। বের হয়ে যান। আমার চেয়ে সত্যটা সবার জানাটা বেশি জরুরি।”
কার্ট ওর শরীরটা বাঁকিয়ে আবারো সেই ফোকর দিয়ে তাকাল, “উনি একটা কফিনের ওপর দাঁড়ানো। রেনাটা ওনার সামনেই পড়ে আছে। কিন্তু RPG-টা মারা হয়েছে অন্য দিকে থেকে। ওদিকে কাউকে দেখতে পাচ্ছ?”
জো মাথা ঝাঁকালো, “কিংস-এর ওপরে একজনকে দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত আর কোনো রকেট নেই। নাহলে কাবাব হয়ে যেতাম এতোক্ষণে।”
কার্ট জোর দিকে তাকাল। কাটের চোখের ওপরের দিকটা কেটে রক্ত পড়ছে আর বুকের কাছটা চেপে ধরে রেখেছে, “আমাদের হাতে কিছুই করার। নেই।”
“জানি। আমিও সেটাই ভাবছি, আমরা যুদ্ধ করে মরতে পারি, অথবা আত্মসমর্পণ করে মরতে পারি। অথবা এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ডুবে মরতে পারি। যদি না কুমিরের পেটে যাই।” বলতে বলতে জো ব্রেড়া সাব মেশিনগানটা ছুটিয়ে আনলো।
“তার মানে তুমি যুদ্ধ করে মরতে চাও।” বলল কার্ট।
“তুমি কী অন্য কিছু করতে চাচ্ছ নাকি?”
কার্ট মাথা ঝাঁকালো। “আমি আত্মসমর্পণ করতে চাচ্ছি।” চোখ টিপ দিয়ে বলল কার্ট।
জো পুরো হতভম্ব হয়ে শুনে। কিন্তু কার্ট ওর হাতের মধ্যেকার ব্লাক মিস্টের ভয়াল দুটো দেখালো। এক হাতেই সুন্দর এটে গিয়েছে।
“স্ফিংসের ওপরের লোকটাকে মারতে পারবে?” জিজ্ঞেস করল কার্ট।
জো এটা সেটা টানাটানি করে দেখে নিলো ব্রেডাটা ঠিক আছে কি-না। “দশটা গুলি আছে। একটা না একটা তো লাগবেই।
হঠাই একটা গুলি আর চিৎকার শোনা গেলো।” এবার গুলি করেছি মাংসে কিন্তু পরের বার মালাই চাকি মিস হবে না।” চিৎকার করে বললেন সাকির।
দুই হাতের মুঠোয় দুটো ভায়াল লুকিয়ে কার্ট ওর মাথার পিছনে হাত রেখে উঠে দাঁড়ালো।
“ফাস্ট বল করবে। স্নাইডার বা কাৰ্ভ যেন না হয়।” বলল জো।
(বেস বল খেলার পরিভাষা। ফাস্টবল হলো ৯০-১০৬ মি/ঘন্টা বেগে ছোঁড়া বেস বল। স্নাইডার এর চেয়ে আস্তে ছোঁড়া বল আর কার্ড হলো বাঁকানো বল।