এলিভেটরের খাঁচাটার বাইরের দরজা খুলে গেল। ভেতরের লোকগুলো যার যার বন্দুক তোলার চেষ্টা করল কিন্তু গাদাগাদি করে থাকার কারণে পারলো না।
“আজকে তোমাদের না মরলেও চলবে!” জো চেঁচালো আবার।
ভেতরের দরজাটাও খুলে গেল। জো ভেবেছিল কেউ না কেউ কিছু একটা করার চেষ্টা করবে আর ওর গুলিতে কচু কাটা হবে। কিন্তু কেউ লড়লো না।
ওরা ওর দিকে দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু অতিরিক্ত আলোর কারণে পারলো না। শেষমেশ ওদেরই কেউ একজন সুইচটা দিল। আবার গেটগুলো বন্ধ হয়ে গেল আর এলিভেটরটা ওপরে উঠে অদৃশ্য হয়ে গেল। ওটার সাথে সাথে জো’র হাতের বন্দুক দুটো ওপরের দিকে বাঁকাতে লাগল। খোলের ভেতর অদৃশ্য হওয়ার পর থামল। তারপর গাড়ি থেকে নেমে উঁকি দিয়ে দেখলো ওটা ওপরে উঠছে কি-না। আরো তিরিশ সেকেন্ড অপেক্ষা করার পর বুঝলো যে ওরা আর ফিরবে না। তখন ও আবার এসে ড্রাইভারের সিটে চড়ে বসলো।
কার্টের ধারণা মতে এটা প্রায় চারশো ফুট লম্বা। তার মানে কমপক্ষে দুই মিনিট লাগবে ওপরে পৌঁছাতে। আসা-যাওয়া চার মিনিট। এইটুকুই ওদের জন্যে যথেষ্ট।
ও আবার ইঞ্জিন চালু করে কন্ট্রোল রুমের দিকে ছুটলো। ওখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে পানি এক ফুট সমান উঁচু হয়ে গেল।
মাঝপথেই কার্টকে দেখতে পেল। সাকিরের কয়েকজন লোক ওকে ঘিরে ধরেছে। ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী বন্দুকটা থেকে একটা গোলা ছুড়লো জো। গোলাটা দেয়ালে বিশাল একটা ছিদ্র তৈরি করল আর লোকগুলোও চারদিকে ছিটকে পড়ল।
কার্ট গাড়িটার দিকে দিল দৌড়…। “এক্কেবারে সময়মতো চলে এসেছে। এলিভেটরের কী হল?”
“বুঝিয়ে-শুনিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি।” জবাব দিল জো।
“আবার ফেরত আসবে নাতো?”
জো চারদিকে তাকাল। চারপাশে ধুলো আর ধোয়ার গন্ধ। আলো কমে এসেছে আরও। পানিও বাড়ছে দ্রুত। “তুমি কী আসতে?”
“জান বাঁচাতে চাইলে আসতাম না।” উঠতে উঠতে বলল কার্ট।
“রেনাটার সাথে তো মনে হচ্ছে তোমার দেখা হয়নি।” বলল জো। কার্ট মাথা নাড়লো। “এই ব্যাটাদের হাতে ধরা খেয়ে গেলাম। ওকে খুঁজে বের করে এখান থেকে তাড়াতাড়ি ভাগি চলো। নাহলে আঁতরে পার হতে হবে।”
জো আবারো সামনে বাড়লো। সামনের দিকে পা ছপাৎ শব্দ তুলে সাহারিয়ানটা এগুচ্ছে। পিছনে লম্বা একটা ধারা সৃষ্টি হচ্ছে। সুড়ঙ্গের মাঝখানের একটা নিচু জায়গায় ওরা প্রায় ডুবেই গিয়েছিল তবে খুব দ্রুত ঢালটা পার হয়ে আবার উঠে আসায় বেঁচে যায় কোনো মতে।
“পানি আসছে কোত্থেকে?” জিজ্ঞেস করল জো।
“নীল নদ। আমি পাম্পগুলো উল্টোদিকে চালিয়ে দিয়েছি। এখন ওগুলো নদী থেকে পানি আবার জলাধারে ফেরত পাঠাচ্ছে। সেজন্যেই ফুটোফাটা দিয়ে আবার ফেরত আসছে পানি। জবাব দিল কার্ট।
“আর লিবিয়া আর তিউনিসিয়ার শুকনো লেকগুলো আবার পানিতে ভরে উঠছে।”
কার্ট দাঁত বের করে হাসলো, “আমিতো ভাবছি বেনগাজীর শহরতলীর গরম পানির ঝরনায় গোসল করতে যাবো।
সামনেই সাকিরের লোকের দুটো লাশ ভাসতে দেখা গেলো।
“রেনাটা এই দিকে গিয়েছে সম্ভবত।” কার্ট অনুমান করলো।
ওরা আরো এগুতে লাগলো। পানি ততোক্ষণে গাড়ির অর্ধেক উচ্চতায়। উঠে এসেছে।
“এই গাড়ি কী পানিতে চলে?” জিজ্ঞেস করলো কার্ট।
জো মাথা নাড়লো, “আর এক-দুই ফুট পানি উঠলেই আর চলবে না।”
ওরা সুড়ঙ্গ পার হয়ে সমাধি ক্ষেত্রে এসে উপস্থিত হলো।
“ল্যাব ঐ পাশে।” বলল কার্ট।
কার্ট রুমের চারপাশ খেয়াল করতে লাগল আর জো গাড়িটা রুমের মাঝখানে নিয়ে এলো। রুমের ভেতরে কেউ নেই কিন্তু মাঝামাঝি জায়গায় হুউশ করে একটা শব্দ ওর দৃষ্টি কাড়লো।
চোখের কোণা দিয়ে কার্ট দেখতে পেল একটা আগুন ধোয়া ছড়াতে ছড়াতে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে। কিছু করা তো দূরে থাক চিৎকার করার সময় পর্যন্ত ছিল না। RPG-টা ওদের কয়েকফুট সামনে একপাশে আছড়ে পড়ল। সাথে সাথে পানিতে বিশাল একটা ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হলো। বিস্ফোরণের ধাক্কায় গাড়ির সামনের দিকটা দুমড়ে মুচড়ে ওটা একপাশে কাত হয়ে পড়ে গেল।
কার্ট জ্ঞান হারায়নি কিন্তু ওর কান ভোঁ ভোঁ করছে। মাথাতেও ভোতা যন্ত্রণা। গাড়ি থেকে পানিতে পড়ে গিয়েছে।
সামনে ড্রাইভারের সিটের দিকে তাকালো, “তুমি ঠিক আছ?”
“পা আটকে গিয়েছে। তবে সম্ভবত কিছু ভাঙ্গেনি।” জবাব দিল জো।
পা টানাটানি করে ছোটানোর চেষ্টা করছে। কার্ট ড্যাশবোর্ডের সামনে বাঁকা হয়ে যাওয়া ধাতব দণ্ডটায় কাঁধ ঠেকিয়ে ঠেলে দিল। জোর পা মুক্ত হয়ে ও পানিতে গিয়ে পড়ল।
“ভাগ্য ভালো যে ওটা সরাসরি আমাদের ওপর পড়েনি। নইলে এতোক্ষণে ছাতু হয়ে যেতাম।” জানা কথাটাই মুখে বলল জো।
“এটার মানে হচ্ছে এখানে আরো কেউ আছে।” কার্ট বলল।
“হ্যাঁ, আছে।” ভাঙ্গা গাড়িটার অপর পাশ থেকে ভেসে এলো কণ্ঠটা কার্ট চিনতে পারলো। সাকিরের কণ্ঠ ওটা।
৬১. কার্ট আর জো
৬১.
কার্ট আর জো সাথে সাথে AS-42-টার আড়ালে সরে এলো। পানির উচ্চতা এখন দুই ফুট। আরো বাড়ছে। ট্যাঙ্কবিধ্বংসী কামানটা বাঁকা হয়ে গিয়েছে। কার্টের ব্রেড়া সাব মেশিন গানটাও দেখা গেল না আশেপাশে।
“আমাদেরকে মেরে ফেলেও আর কোনো লাভ হবে না সাকির।” কার্ট বলল চিৎকার করে। এই জায়গাটা পানিতে ডুবে যাবে পুরোটা একটু পরে। তারপর মাটির ওপরেও পানি উঠতে থাকবে। কারো না কারো চোখে তো পড়বেই। আপনার খেলা শেষ। আপনার সব পরিকল্পনা মাঠে মারা যাবে এবার।”