কয়েক সেকেন্ড রিং হওয়ার পর সেকশন লিডারের গলা পাওয়া গেল।
“স্করপিয়নকে দাও।” বলল হাসান।
স্করপিয়ন এসে বলল, “আমিতো দুই স্কোয়াড লোক নিয়ে এলিভেটরের দিকে যাচ্ছিলাম।”
“ওদেরকে একাই যেতে দাও। তুমি আমার সাথে তিন নম্বর বের হওয়ার রাস্তায় দেখা করো। লবণের খনির সুড়ঙ্গ যেটা। একটা ল্যান্ড রোভার নিয়ে এসো। আমাদেরকে তাড়াতাড়ি ভাগতে হবে।”
স্করপিয়ন কোনো প্রশ্ন করল না। হাসান রেখে দিল ফোন। পানি এখন ওর গোড়ালি ছাড়িয়েছে। গুহার হাজার হাজার ফাটল দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি উঠছে। ও অস্ত্রাগার থেকে বেরিয়ে যেদিক দিয়ে এসেছিল সেদিকে তাকাল, তারপর ঘুরে উল্টোদিকে দৌড় দিল।
বেঁচে থাকলে আরেকদিন যুদ্ধ করা যাবে।
.
সাকির সমাধি কক্ষে অপেক্ষা করছেন। প্রথম সৈন্যটা একটা RPG কাঁধে দৌড়ে এলো। কিন্তু হাসান কোথায়?
কিন্তু সে কথা জিজ্ঞেস করার আগেই উল্টো দিক থেকে আরেকজন রুমে প্রবেশ করল। সেই ইতালিয়ান মহিলাটা। সে রুমটার ভেতর দিয়ে ল্যাবরেটরির সুড়ঙ্গের দিকে ছুটছে। সারা গায়ে ধুলো মাখা। সেজন্যে কম আলোতে সাকির প্রথমে ওকে খেয়াল করেনি। রুমের ভেতর পুরো ঢোকার পর টের পেয়েছে। তবে এতে মহিলারই ক্ষতি হলো বেশি।
সাকির মাথা নিচু করে অপেক্ষা করতে লাগল। একে ধরতে পারলেই দারুণ কাজ হবে। আমেরিকানগুলোর দিল নরম। এরকম একটা সুন্দরীকে বাঁচানোর জন্য বলা মাত্র আত্মসমর্পণ করবে ওরা।
মেয়েটা রুমের মাঝামাঝি পৌঁছতেই কুমিরগুলো ওদের গর্ত থেকে ডেকে উঠল। হঠাৎ পাওয়া খাবার নিয়ে মারামারি করছে ওরা।
শব্দটা শুনে মেয়েটার মনোযোগ ছুটে গেল আর সাকির সেই সুযোগে সামনে ঝাঁপ দিয়ে ওকে জাপটে ধরলেন আর আরেক হাত দিয়ে মেশিন গানটা ফেলে দিলেন।
রেনাটাও দ্রুত সামলে নিলো। একটা পাক খেয়ে সাকিরের চোয়াল বরাবর একটা ঘুসি বসিয়ে দিল। কিন্তু সাকির উল্টো হেসে দিলেন। উনি রেনাটাকে পাশের কফিনটার দিকে ছুঁড়ে দিলেন। রেনাটা উঠে দাঁড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করল কিন্তু সাকির তাকে টেনে তুলে ঠাস করে সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা চড় বসালেন গালে।
“যেখানে আছ সেখানেই থাক।” আদেশ করলেন উনি।
কিন্তু রেনাটা আবার ওঠার চেষ্টা করতেই ওর পাজর লক্ষ্য করে লাথি হাকালেন এবার। ফুসফুসের সমস্ত বাতাস বেরিয়ে গেল রেনাটার। সাকির নিজের পিস্তল বের করে রেনাটার দিকে তাক করে ওর ওপর একটা পা তুলে দাঁড়ালেন।
রেনাটা আর নড়লো না।
ও যে একটা বুলেটের অপেক্ষা করছে বুঝলেন সাকির। কিন্তু ওকে নিয়ে ওনার পরিকল্পনা আলাদা।
“চিন্তা করবেন না। আপনাকে তাড়াতাড়িই ওপারে পাঠাবো, তবে সেটা আপনাদের বন্ধুদেরকে দেখিয়ে দেখিয়ে। একেবারে কাছ থেকে।” তারপর RPG কাঁধে সৈনিকটার দিকে ফিরে বললেন, “স্ফিংসটার ওপর গিয়ে দাঁড়াও। ওখান থেকে গুলি করা সহজ হবে।”
“হাসানের কী হলো?”
“ওর সাহস আপাত তো শেষ।”
.
৬০
জো এলিভেটরের কাছে গিয়ে দেখলো ওটা আসলে গুহার পাথর কেটে বানানো। তার ওপর ধাতব একটা খোল বসিয়ে বানানো হয়েছে এলিভেটর। খোলটা অনেক প্রশস্ত আর মোটা কারণ এলিভেটরে করে ভারী ভারী যন্ত্রাংশ আর একসাথে অনেক মানুষ উঠা-নামা করাতে হয়। পৃথিবীর যে কোনো খনিতেই এমন ব্যবস্থা থাকে।
এলিভেটরটা এখনও নিচে নামেনি। তবে চাকাগুলো ঘুরছে দেখা যাচ্ছে। জো ঠিক ওটার সামনে গিয়ে থামল। কমপক্ষে বিশ থেকে ত্রিশজন অস্ত্রধারী মানুষ নামছে ওতে করে বলে জো’র অনুমান।
দুর্ভাগ্যক্রমে বেশিরভাগ এলিভেটরের মতোই এটাও ওপর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর সাথে একটা ভারী কিছু লাগানো সেটাই ওঠা-নামা করে এটাকেও ওঠায় আর নামায়। জো’র তাই করার মতো একটাই কাজ তা হলো যে লাইনের ওপর দিয়ে এলিভেটরটা নামছে সেটাকে বাঁকিয়ে দেয়া। হয়তো তাতে আটকে গিয়ে এলিভেটরটা আর নামবে না।
ও সাহারিয়ানটাকে জায়গামত এনে ইঞ্জিন চালু করল। তারপর যেই মাত্র সামনে বাড়বে তখনি খেয়াল হলো যে রুমে পানি ঢুকছে। পানিটা আসছে প্রধান সুড়ঙ্গটা দিয়ে। এখানে এসে আঙুলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
“হায় হায় ফুটো করে ফেলেছি দেখি!” নিজেকেই নিজে বলল জো।
এলিভেটরটা পালানোর জন্যে ওদের কাজে লাগবে। এই চিন্তা থেকে জো ওটাকে নষ্ট করার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে প্ল্যান-বি অনুযায়ী কাজ করবে বলে ঠিক করল। ও AS-42-টার পিছনে গিয়ে যেখান থেকে গুলি করতে হয় সেখানে দাঁড়ালো, তারপর সামনের ধাতব পাতটাও তুলে দিল আত্মরক্ষার জন্য। তারপর ব্রেডা মেশিন গান আর ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী বন্দুক দুটোতেই গুলি ভরে অপেক্ষা করতে লাগল। এলিভেটর নামার।
কিছুক্ষণ পরই এলিভেটরের ছায়া চোখে পড়ল, তার পরেই ওটার নিচটা দেখা গেল। ধাতব বক্সটা নিচে নামতেই দেখা গেল ওতে কোনো দরজা নেই শুধু একটা খাঁচা। তার ভেতর কমপক্ষে বিশজন লোক।
এরকম বন্ধ অবস্থায় বিশজন মানুষকে গুলি করে মারার কোনো ইচ্ছাই জোর নেই। তবে একজনও যদি গড়বড় করে তাহলে ও বন্দুক খালি হওয়ার আগ পর্যন্ত গুলি চালাবে।
ঝনাৎ শব্দ করে এলিভেটরটা মাটি স্পর্শ করল।
“তোমাদের জায়গায় আমি হলে আবার ওপরেই ফিরে যেতাম।” চিৎকার করে বলল জো। দুটো হাতই দুই বন্দুকের ট্রিগারে। ধাতব আবরণটার মাঝখানের ছোট্ট ফোকরটা দিয়ে তাকিয়ে আছে। সাহারিয়ানার লাইট দুটো এলিভেটরের লোকগুলোর চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে।