“আমার নিশানা খুব একটা মিস হয় না।” বলল রেনাটা।
“খুব ভালো।”
গোলাটা এক হাতে আর বেরেটা সাবমেশিনগানটা আরেকটা কাঁধে ঝুলিয়ে রেনাটা গাড়ি থেকে নেমে এলো। তারপর টুক করে এক কোণা দিয়ে গোলাটা সাকিরের লোকগুলোর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে আবার সুড়ুৎ করে সরে এলো পিছনে।
জোও সাথে সাথে ইঞ্জিন চালু করে সামনে বাড়লো। নষ্ট টায়ারের ওপর দিয়ে একে বেঁকে এগুতে লাগল গাড়িটা। মূহর্তে আবার শুরু হলো গুলি বর্ষণ। জো মাথা নিচু করে ফেলল। খানিকটা এগিয়ে ও ফিরে তাকাল।
রেনাটাকে দেখা গেল, সামনে এগিয়ে গুলি করল। বুবম্ করে কানে তালা লাগিয়ে প্রচণ্ড শব্দে ফাটলো গোলাটা। চারপাশে উঠল ধুলোর ঝড়। সেটা কমতেই দেখা গেল ATv-টা একপাশে কাত হয়ে আছে। পাশে কয়েকটা পড়ে আছে। বাকিরা পালিয়েছে। সাকির আর ওর লোকেরা সম্ভবত পাহাড়ের দিকে এগুচ্ছে।
“আমি আর একবার ল্যাবটা দেখে আসি। দরকারি কিছু যদি পাই।” রেনাটা চেঁচিয়ে বলল। তারপর জবাবের অপেক্ষা না করেই দৌড় দিল সেদিকে। আপাদমস্তক ধুলোয় ঢেকে আছে। দারুণ ক্যামেফ্লেজের কাজ দিচ্ছে ওটা। জো-ও AS-42 টা ঠিকমতো সোজা করে সামনে এগুতে লাগল। এক হাত স্টিয়ারিং-এ অন্য হাত ব্রেডায়। কাউকে চোখে পড়লেই গুলি চালাচ্ছে।
.
কার্ট খেয়াল করল হঠাৎই স্ক্রিনে কিছু একটা ভেসে উঠছে।
“কী এটা?” জিজ্ঞেস করল ও।
“এলিভেটর। সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় এটা। সোজা পাম্প হাউজে ওঠা যায় এটা দিয়ে। একজন টেকনিশিয়ান জবাব দিল।
ডিসপ্লেতে দেখা যাচ্ছে প্রায় চারশো ফুট ওপর থেকে ওটা নামছে।
“এলিভেটর? আগে বলবেন না। থামাতে পারবেন ওটাকে?” লোক দুজন মাথা নাড়লো।
“আপনাদের হাতে কোনো অস্ত্র নাই। তাই আপনাদের ছেড়ে দিচ্ছি। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে কোনো দিকে না তাকিয়ে এখান থেকে ভাগতাম।”
লোক দুজন উঠে দাঁড়ালো। একজন আবার কার্টকে ধন্যবাদ দেয়ার চেষ্টা করল।
“ধুর, যান তো।”
আর দেরি না করে তারা প্রধান সমাধি ক্ষেত্রটার দিকে দৌড় শুরু করল। ওরা আর ফিরে আসবে না নিশ্চিত হয়ে তারপর পাশের দরজাটা দিয়ে ঢুকে পড়ল। অন্যপাশ দিয়ে দেখে জো আসছে গাড়িটাতে করে।
“ঝামেলা আরেকটা বেঁধেছে।” জো-কে বলল কার্ট।
“কি ঝামেলা?”
‘এই সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় একটা এলিভেটর আছে।”
“এলিভেটর” জো জিজ্ঞেস করল।
“তাইতো দেখছি। ওটা নেমে আসার আগেই আটকাতে হবে।” বলল কাট।
“আমাদের লাগবে না ওটা?”
“আরে ওটায় করে ওপর থেকে সাকিরের লোক নামছে।”
“তাহলেতো হলোই।”
কার্ট গাড়িতে উঠতে গিয়ে আবার থেমে গেল। “রেনাটা কোথায়?”
“ল্যাবে আবার দেখতে গিয়েছে।” জবাব দিল জো।
“আমিও তাহলে ওখানেই যাই। তুমি কাজটা শেষ করে আসো ওখানে। এদের লেজে এর মধ্যে আগুন ধরে গেছে।”
কার্ট চলে যেতেই জো আবার সামনে বাড়লো। ওর অবশ্য এলিভেটরটা উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না। কারণ এখান থেকে বের হওয়ার এটাই সবচেয়ে সহজ উপায়। কিন্তু এটা করা ছাড়া উপায়ও নেই।
.
৫৯.
সাকির আর হাসান দৌড়ে সেই স্ফিংস ওয়ালা রুমটায় হাজির হলো আবার। কিন্তু সেই পাথরের কফিনগুলোর ধারে পৌঁছাতেই পায়ের কাছে পানি ছিটকে উঠল।
“আবার পানি ঢুকছে ভেতরে,” বললেন সাকির।
“এরকম তো হওয়ার কথা না। পাম্পগুলোতে এখনও চলছে। শব্দ পাচ্ছি আমি।” জবাব দিল হাসান।
পানির জায়গায় জায়গায় বুদবুদ উঠছে। সাকির বুঝে গেলেন কি হচ্ছে, “ওরা পাম্প উল্টো দিকে চালাচ্ছে। পানি এখন আর আসছে না উল্টো জলাধার গুলোয় ফেরত যাচ্ছে।”
“তাহলে তো ঝামেলা হয়ে গেল। এই রুমটাতো আগের মতো আবার পানি দিয়ে ভরে যাবে। তাড়াতাড়ি সরে যেতে হবে এখান থেকে।” বলল হাসান। সাকির কথা শুনে খুব বিরক্ত হলেন, “তুমি আসলেই একটা ভীতুর ডিম, হাসান। ওরা মাত্র তিনজন। ওদেরকে মেরে পাম্পগুলো আবার ঘুরিয়ে দিলেই হবে।”
“কিন্তু ওরা তো একটা টাঙ্ক নিয়ে এসেছে।”
“ওটা শুধু একটা বন্দুক বসানো গাড়ি। কোত্থেকে পেয়েছে জানিনা। তবে সেটাও ধ্বংস করা যাবে না এমন কিছু না। কয়েকটা ভালো অস্ত্র আর যুতসই একটা ফাঁদ পাততে পারলেই কাজ হয়ে যাবে। যাও তাড়াতাড়ি কয়েকটা RPG নিয়ে এসো।”
হাসান রুমটার চারদিকে তাকাল। তারপর ওদের সাথে আসা সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে চেঁচালো, “তাড়াতাড়ি আসো।”
ওরা দুজন যেতেই সাকির ঘরটার মাঝামাঝি চলে এলো। সেখান থেকে চোখে পড়ল তার একজন লোক বাইরের সুড়ঙ্গ দিয়ে পালাচ্ছে, “যাচ্ছ কোথায়? এদিকে এসো, হাক ছাড়লেন উনি।
কিন্তু লোকটা তার ডাকে কর্ণপাত না করে বের হওয়ার সুড়ঙ্গের দিকে দৌড়ে চলে গেল। সাকির রেগে মেগে পিস্তল বের করে বেশ কয়েকটা গুলি করলেন একসাথে। লোকটা শেষ মাথায় পৌঁছতেই একটা লাগল গায়ে। লোকটা কাত হয়ে কুমিরের গর্তে পড়ে গেল। ক্ষুধার্ত কুমিরগুলো এক সেকেন্ডের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপর।
.
হাসান অস্ত্রাগারে পৌঁছে নিজের কোড দিয়ে দরজা খুললো। ভেতরে তাক ভরা রাইফেল আর গোলা-বারুদ। শেষ মাথায় এক সেট রাশিয়ান RPG দেখা গেল। ও সেটা সাথের সৈন্যটাকে দিয়ে বলল, “সাকিরের কাছে নিয়ে যাও।”
বিনা বাক্য ব্যয়ে লোকটা সেটা নিয়ে ছুটলো।
হাসান পাশের RPG (Rocket Propelled Grenade)-টা দেখার ভান করল কিছুক্ষণ। তারপর যখন নিশ্চিত হলো যে ও একা তখন একটা ফোন তুলে নিলো। ফোনটা ওপরের কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার হয়। আশা করল যে লাইনটা এখনও কেটে দেয়া হয়নি।