সবকিছু ঠিকঠাক মতো নিয়ে ফিরতি পথ ধরলো ওরা। প্রধান সুড়ঙ্গে সহজেই আসতে পারলো কিন্তু এরপর কোন দিকে যাবে সেটা নিয়ে ঝামেলা বেধে গেল। বহুবার এই সুড়ঙ্গ সেই সুড়ঙ্গ ঘুরে ঘুরে শেষমেশ যেখানে সেই ATv দুটো উল্টে পড়েছিল সেখানে এসে উপস্থিত হলো।
হাসান বুদ্ধি করে ওখানে আগেই পাহারার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু ওরা এরকম কিছু কল্পনাতেও আনেনি। তাই জিনিসটা কী বুঝে উঠার আগেই ব্রেডা’র গুলিতে ওদের ভবলীলা সাঙ্গ হলো।
সেখান থেকে ওরা গুহার একদম মাঝের দিকে রওনা দিল। যাত্রাপথেই বিদ্যুতের মোটা মোটা তারগুলো চোখে পড়ল। একটা বোমা বসিয়ে এক জায়গায় সার্কিট উড়িয়ে দিলো জো। ভেবেছিল একেবারে অন্ধকার হয়ে যাবে চারপাশ কিন্তু পিট পিট করে কয়েকটা বাতি জ্বলতেই লাগলো।
“অন্য কোথাও থেকে কারেন্ট পাচ্ছে,” বলল জো।
“ওটা নিয়ে আর ভাবতে হবে না। আমরা যে এসে পড়েছি সেটা ওরা টের পেয়ে গিয়েছে এতোক্ষণে। তারমানে আর লুকোছাপা করে লাভ নেই পালিয়ে যাওয়ার আগেই সাকিরকে ধরতে হবে।
সামনে এগোতেই সাকিরের আরেকদল লোক পড়ল সামনে। কট্রোল রুমের ঠিক বাইরে সাকিরকে দেখা গেল। কার্ট গুলি চালালো সেদিকে। সাকিরকে মারার জন্যে না, সে যাতে আবার ভেতরে ঢুকতে বাধ্য হয় সে জন্যে। তারপর ভেতর থেকে ধরবে তাকে। কিন্তু ভেতরে যে বের হওয়ার আরেকটা রাস্তা থাকতে পারে সেটা ওর মাথায় আসেনি।
কট্রোল রুমের সামনে গাড়িটা থামতেই কার্ট একটা বেরেটা হাতে লাফ দিয়ে নেমে ঘরে প্রবেশ করল। ভেতরে ঢুকে দেখে কম্পিউটার টেবিলের নিচে দুজন ইঞ্জিনিয়ার মাথা নিচু করে বসে আছে তবে সাকির নেই কোথাও।
“চিড়িয়া তো উড়ে গেছে। নিশ্চিত পিছনের দরজা দিয়ে ভেগেছে,” চিৎকার করে জো’কে বলল কার্ট।
“দেখি তাহলে ঘুরে গিয়ে ব্যাটাকে ধরা যায় কি-না,” বলল জো।
কার্ট সম্মতি দিতেই AS-42 আবার সামনে চলা আরম্ভ করল। সাকির যাতে আবার এদিক দিয়ে পালাতে না পারে তাই কার্ট পাহারায় থাকল এখানে। ও ইঞ্জিনিয়ারগুলোর দিকে বন্দুক তাক করে রেখেই কম্পিউটারের স্ক্রিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সেখানে উত্তর আফ্রিকার মানচিত্র দেখা যাচ্ছে। তাতে লাইন টেনে সাকিরের পানির পাইপগুলো দেখানো। এগুলো দিয়েই জলাধারের পানি তুলছে ও।
“ইংরেজি জানেন?”কার্ট জিজ্ঞেস করল।
একজন মাথা নাড়লো। কার্ট বেরেটাটা নাড়িয়ে বলল, “পাম্পটা বন্ধ করুন।”
কিন্তু তারপরও ওদের নড়ার কোনো লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় কার্ট ওদের ঠিক পাশেই মেঝেতে এক ঝাঁক গুলি করল। সাথে সাথে লোক দুজন লাফ দিয়ে উঠে কাজে লেগে পড়ল। কী বোর্ডে কি সব টেপাটেপি আর সুইচ টেপা চলতে থাকল। কার্ট পাম্প আর প্রেসার গজ সম্পর্কে আগে থেকেই জানে। যতবারই কোনো জাহাজডুবি উদ্ধার করতে গিয়েছে বা পানির মধ্যে যেকোনো ধরনের কাজ কর্মেই এই জিনিস বারবার ব্যবহার করা লেগেছে। সবকিছু দেখে শুনে হঠাৎই এর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল।
“থামেন, পাম্প বন্ধ করতে হবে না। আমার মত বদল করেছি। বলল কার্ট। লোক দুজন ওর দিকে তাকাল।
“এগুলো উল্টো দিকে চালান।”
“পাম্পগুলো উল্টো দিকে চালালে কী হবে আমাদের জানা নেই। একজন বলল।
“দেখাই যাক কি হয়।” আবারো সাব মেশিন গানটা খানিক ওপরে তুলে বলল কার্ট।
টেকনিশিয়ানরা আবার কাজ শুরু করল। কার্ট সন্তুষ্ট চিত্তে খেয়াল করল স্ক্রিনে দেখানো পানির প্রবাহ আস্তে আস্তে কমতে কমতে একেবারে শূন্যে নেমে এলো। তারপর একটু থেমে আবার শুরু হলো প্রবাহ। তবে এবার সেটা লাল কালিতে, আর সামনে একটা বিয়োগ চিহ্ন।
কয়েক সেকেন্ড পর সব পাইপের পাশের তীর চিহ্নগুলো ঘুরে গেল, যার মানে হচ্ছে পানি এখন উল্টো দিকে বইছে। নীল নদ থেকে পাইপে করে আবার জলাধারগুলোয়ই ফেরত যাবে বলে আশা করল কার্ট।
.
এদিকে জো AS-42 টা নিয়ে সামনে এগুচ্ছে। কিন্তু পুরাতন গাড়িটার গতি অত বেশি না। ইঞ্জিন ঠিক আছে তবে টায়ারগুলোর অবস্থা সঙ্গিন। শুকিয়ে চিমসে হয়ে গিয়েছে আর ভেতরে বাতাস নেই একফোঁটা। মনে হচ্ছে যেন একগাদা নুড়ি পাথরের ওপর গাড়িটা চলছে। তবে অতো বেশি গতিরও ওদের দরকার নেই। শুধু সামনে যা পাচ্ছে সেগুলো উড়িয়ে দিয়ে এগোতে পারলেই হবে। ব্ৰে মেশিনগান হাতে রেনাটা কাজটা বেশ দক্ষতার সাথেই সারছে।
সামনের সুড়ঙ্গটা T-আকৃতিতে দুই দিকে চলে গিয়েছে। জো ওখানে গাড়িটা ঘোরাতে যেতেই AS-42-টা একেবারে কোণার দিকে চলে এলো। সুড়ঙ্গটার একটু সামনেই একটা ATv-র আড়ালে সাকিরের লোকজন এতোক্ষণ ওঁত পেতে বসে ছিল। সাহারিয়ানটা দেখা যাওয়া মাত্রই ওরা গুলি করা শুরু করল।
জো গিয়ার রিভার্সে নিয়ে খানিকটা পিছনে সরে আসলো। শুধু নাকটা বেরিয়ে থাকল সুড়ঙ্গে। সেখানেই চলতে লাগনো গুলি বর্ষণ। তবে ভাগ্য ভাল যে ইঞ্জিনে লাগলো না।
“ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী গোলা বের করুন তো একটা রেনাটাকে বলল জো।
রেনাটা একটা ছোট গ্রেনেডের সমান গোলা বের করল। এগুলো সাধারণত বাজুকা-র মতো একটা অস্ত্র থেকে ছোঁড়া হয় তবে ওরা যে দুটো পেয়েছিল সে দুটোই ছিল নষ্ট। জো তারপরও নিয়ে এসেছে যদি কাজে লাগে তাই।
“কি করবো এটা দিয়ে?” রেনাটা জিজ্ঞেস করল।
“প্রথমে এটা সুড়ঙ্গ দিয়ে ছুঁড়ে মারবেন। তারপর আমি গাড়িটা ওদের দিকে চালানো শুরু করবো আর ওরা আমার দিকে গুলি করতে থাকবে। আর আপনি সেই ফাঁকে ওটার গায়ে গুলি করে ফাটাবেন। তবে এক গুলিতেই ফাটাতে হবে।” বলল জো।