“আরে এসব আমি জানি। এ রকম হলো কেন সেটা বলল।” বললেন সাকির। কিন্তু জবাবে পেলেন প্রচণ্ড একটা আওয়াজ। সেটার ধাক্কা একেবারে গুহার ভেতরটা পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিল। কম্পনের মাত্রা শুনে বোঝা গেল একটা জিনিসের পক্ষেই এটা তৈরি করা সম্ভব। তা হলো একটা বিস্ফোরণ।
টেকনিশিয়ানদের কথাকে পাত্তা না দিয়ে সাকির বাইরে বের হয়ে আসলেন। অর্ধেকের বেশি লাইট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু জরুরি অবস্থার বাতিগুলো কাজ করছে। খানিক দূরেই কেমন একটা গম গম আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। যেন একটা বড় ট্রাক এদিকেই আসছে। সুড়ঙ্গ ধরে তাকালেন সাকির। কিছু একটা আসছে নিশ্চিত। বড়সড় কিছু। সম্ভবত পুরো সুড়ঙ্গটাই দখল করে ফেলেছে সেটা। আরো ভালো করে তাকাতেই হঠাৎ এক জোড়া হেডলাইটের আলো সরাসরি তার চোখে পড়ে তাকে অন্ধ করে দিল।
পুরনো, হলদেটে একটা কাঠামো সামনে। তার নিজের এরকম কোনো গাড়ি নেই। তার বেশ কয়েকটা লোক গাড়িটাকে আটকাতে সামনে ছুটে গেল, কিন্তু ভারি মেশিন গানের গুলির শব্দ পেয়ে আর সামনে এগুলো না।
বন্দুকটা তার দিকে ঘুরতেই সাকির কট্রোল রুমে ঝাঁপ দিলেন আবার। পিছনেই বন্দুকের নল ঝলসে উঠল আবার, আর দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসিয়ে ছুটে গেল গুলি।
হাসানের দিকে চিৎকার করে বললেন, “সব লোককে নিচে আসতে বলো তাড়াতাড়ি। ঐ তিনজন তোমার কথামতো পালানোর চেষ্টা করেনি উল্টো ফিরে এসেছে আবার।”
হাসান দ্রুত দৌড়ে ফোন তুললো আবার, “সেকশন ওয়ান, হাসান বলছি। সবাইকে নিয়ে নিচে চলে এসো। হ্যাঁ এক্ষুনি। আমাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে।” কথা শেষ না হতেই কন্ট্রোল রুমের বাইরে তুমুল গুলি বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল। হাসান সাথে সাথে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আড়ালে চলে গেল। পর মুহূর্তেই ভাঙ্গা কাঁচ আর পাথরের টুকরোয় ভরে গেল চারপাশ।
সাকিরের দুজন লোক জবাব দেয়ার চেষ্টা করল কিন্তু উঠে দাঁড়াতেই ধরাশায়ী হলো।
“ওটা তো আমাদের কোনো গাড়ি না। এটা একটা মিলিটারি গাড়ি।” বলল হাসান।
“আসলো কোত্থেকে ওটা?” সাকির জিজ্ঞেস
“খোদা-ই জানে।”
সাকির আর দেরি না করে পাশেই একটা দরজার দিকে দৌড় দিলেন। এটা ধরে সোজা প্রধান সমাধি কক্ষে যাওয়া যায়।
হাসানও সেদিকে ছুটলো। ততোক্ষণে একটা দল পৌঁছে গিয়েছে কন্ট্রোল রুমে। হাসান নিজের নাইন এমএম পিস্তলটা তুলে নিলো হাতে। যে জিনিসটা পিছনে গুলি ছুড়ছে সেটার মুখোমুখি হওয়ার কোনো ইচ্ছেই ওর নেই। তবে অস্ত্র হাতেই দৌড়ানোটা ভালো দেখায় তাই হাতে অস্ত্র তুলে নেয়া।
.
এদিকে সুড়ঙ্গের ভেতরে কার্ট, জো আর রেনাটার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ উল্টো। আজ, এখানেই ওরা এটার শেষ দেখে ছাড়বে।
জো একটা AS-42 সাহারিয়ানকে ঘষে মেঝে আবার চালু করে ফেলেছে। যতটা ভেবেছিল তার চেয়ে সহজ হয়েছে কাজটা। তার অন্যতম কারণ হলো আগের কালের ইঞ্জিনগুলো শুধু ইঞ্জিন-ই ছিল। হাল আমলের ইঞ্জিনগুলোর মতো এয়ার কন্ডিশন সিস্টেম, এমিশন কন্ট্রোল ইত্যাদি হাবিজাবি আগডুম। বাগডুম কিছু নেই। গাড়ির হুড খুলতেই শুধু দুটো সমস্যা পাওয়া গেল। ইঞ্জিনে ময়লা জমে আছে আর কোনো তেল নেই। তাই কাজ করাও সহজ হয়ে গেল। মরুভূমির বাতাসে বাষ্প কম, তাই মরীচা পড়েনি কিছুতেই। তবে সবচেয়ে সুবিধা হলো যখন দেখা গেল গাড়ির ট্রাঙ্কে একটা ফুল সেট অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ আর সারাইয়ের জিনিসপত্র পড়ে আছে।
তাই শেষমেশ একমাত্র সমস্যা হলো তেল। গাড়ির তেলের পুরোটাই বাষ্প হয়ে গেছে আরো বহু বছর আগেই। যে পাত্ৰেই রাখা হোক তাতে কোনো লাভ নেই। অবশ্য থাকলেও খুব একটা লাভ হতো না, নষ্ট হয়ে যেতে এতো দিনে।
তবে ATv-টার ট্যাঙ্ক ভরা তেল। দ্রুতই ওটা থেকে তেল এনে ভরে ফেলা হলো এটার ট্যাঙ্ক। ওটার ব্যাটারিটাও খুলে এনে এটায় লাগানো হলো। তারপর চাবি দিতেই যখন সাহারিয়ানটা প্রাণ ফিরে পেল জো-এর খুশি তখন দেখে কে! ইঞ্জিনের গমগম আওয়াজ ওদের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দিল বহুগুণ! এখন ওরা প্রায় একটা ট্যাঙ্ক নিয়ে যুদ্ধে নামবে আর ওদের প্রতিপক্ষের। সবাই-ই পদাতিক।
জো যতক্ষণ গাড়ি ঠিক করেছে, কার্ট আর রেনাটা ততোক্ষণ সুড়ঙ্গের মুখের জঞ্জাল পরিষ্কার করেছে। প্রথমে ওরা বড় বড় পাথরের টুকরোগুলো ATv-টার সাথে বেঁধে সরিয়ে ফেলল তারপর বাকিটা একটা শাবল দিয়ে সরিয়েছে। তবে AS-42 এর উচ্চতা খুব বেশি না হওয়ায় সামান্য খোঁড়াখুড়িতেই কাজ হয়ে গেল।
তবে তাতেই কাজ শেষ না। পিঠের ব্যথা নিয়েই লেগে পড়তে হলো গোলাবারুদের সংস্থানে। জো যে গাড়িটা ঠিকঠাক করেছে ওতে একটা ব্রেডা মডেল ৩৭ ভারি মেশিন গান বসানো। চব্বিশ রাউন্ডের কাটিজ থেকে বড় বড় গুলি ছুঁড়তে পারে ওটা। সাথে একটা বিশ মিলিমিটারের ট্রাঙ্কবিধ্বংসী বন্দুকও আছে একটা। পিছন দিকে আলাদা প্লাটফর্মে বসানো। প্রচুর গোলাবারুদ এখনও রয়ে গিয়েছে তবে বেশিরভাগই নষ্ট। বেছে বেছে ভাললাগুলো জড়ো করল গাড়ির পিছনে। সাথে নিয়ে এলো দুটো বেরেটা মডেল ১৯১৮। পুরনো মডেল। এগুলোয় গুলির ম্যাগাজিন ওপর দিয়ে ভরতে হয়, ইদানীংকালের অটোমেটিকগুলোর মতো নিচ দিয়ে না।
আর সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে কার্টের কাছে তখনও দুই ভায়াল ব্লক মিস্ট আছে। এগুলো যদি ব্যবহার করা লাগেই সেজন্য তিনটা গ্যাস মান্সও নিয়ে নিয়েছে।