“তাড়াতাড়ি, গামায় চেঁচালো।
অন্য নৌকাটা ভালোই দূরে চলে গিয়েছে ততোক্ষণে। পল আরো দুবার রশিটা ধরে টান দিল। নৌকাটা আবার চালু হয়ে চলতে আরম্ভ করল কিন্তু সামনের নৌকাটাকে আর ধরা সম্ভব না। কিছুক্ষণ পরই ওটা কুয়াশার আড়ালে হারিয়ে গেল।
“দেখা যায় নাকি?” জিজ্ঞেস করল পল।
“না।” কুয়াশার ভেতর দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে করতে বলল পল।
কয়েক মিনিট পর আবার নৌকাটা দেখতে পেল। তবে ওটা তখন খালি। নদীর ডান তীরে ভাসছে শূন্য অবস্থায়।
“ওরা পালিয়ে গিয়েছে।” বলল পল।
গামায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পলকে বলল, “পুলিশ আর প্যারামেডিক কে ফোন করে লাইব্রেরিতে যেতে বলতে হবে।”
“ম্যাডাম ডুশেনের খবরও নিতে বলতে হবে।” বলল পল।
আরো কিছুদূর এগুনোর পর খালের ধারে একটা সিঁড়ি বাঁধানো ঘাট দেখতে পেয়ে পল সেখানে নৌকা থামালো। তারপর ডাঙ্গায় নেমে প্রথম দোকানটাতেই ঢুকে পড়ল। গামায় দ্রুত পুলিশকে ফোন করে দিল।
এখন ওদের কাজ শুধু অপেক্ষা করা।
.
৫৮.
কায়রো
তারিক সাকির অন্ধকার কন্ট্রোল রুমে বসে আছেন। খবরের আশায় উদগ্রীব। কিন্তু এখনও রেডিও বা ওয়াকিটকি কিছুতেই কোনো খবর আসেনি। শুধু ওসাইরিস পানি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের সাথে যোগাযোগকারী ফোনটা আর পাইপলাইনের ডাটা ওঠে যে কম্পিউটারে সেটাই সচল। তার পরিকল্পনা যে সফল হতে চলেছে সেই খবর তিনি এ দুটোর মাধ্যমেই পেয়েছেন।
লিবিয়ায় জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা যে কি-না সাকিরের লোক সে প্রচুর সমর্থন পাচ্ছে সবার। টাকা দিয়েই সেটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের ওপর আর কারো আস্থা নেই। আর সেই জিনিস টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব না। দেশের প্রতিটা শহরে দাঙ্গা চলছে। নেতারা সব পানির প্রতিশ্রুতি দিয়েই যাচ্ছে। তবে সাকিরের পাম্পগুলো বলছে যে সেটা কখনোই ঘটবে না। এই সরকার আর চব্বিশ ঘণ্টাও টিকবে কি-না সন্দেহ।
এদিকে ভূমধ্যসাগরের অপর প্রান্তে আলবার্তো পিওলা রোমে বসে এই মাঝ রাতেও নানান জনের সাথে সাক্ষাৎ করে করে ইতালির রাজনীতিবিদদেরকে নিজের দলে ভেড়াচ্ছে। ওর দেয়া তথ্য মতে ইতালিয়ান সরকার এখন লিবিয়ায় নতুন সরকার গঠন হওয়া মাত্র পূর্ণ সমর্থন দিতে প্রস্তুত। সেই সাথে ওখানে শান্তি ও স্থিতি আনতে মিসরের হস্তক্ষেপেও ওরা বিন্দুমাত্র আপত্তি করবে না। ফ্রেঞ্চরাও একই কাজ করবে। ফলে আলজেরিয়া আর লিবিয়া দুই জায়গাতেই সাকিরের চাল বৈধতা পেয়ে যাবে।
তাই এখন একমাত্র চিন্তার বিষয় হলো NUMA’-র এজেন্ট ঐ দুই আমেরিকান আর ইতালিয়ান ইন্টেলিজেন্স-এর ঐ মহিলা। পাঁচ ঘণ্টা আগে ওরা পালিয়েছে। তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ নেই।
হঠাৎ দরজায় শব্দ হওয়ায় চিন্তার সুতো ছিঁড়ে গেল তার।
“ভেতরে এসো,” আদেশ দিলেন সাকির।
দরজা খুলতেই হাসান প্রবেশ করল ঘরে।
“সুখবর শোনার জন্যে বসে আছি।” বললেন সাকির।
“স্করপিয়ন মাত্র ফ্রান্স থেকে ফিরেছে। ওদের সাথে নাকি এক আমেরিকান দম্পতির ঝামেলা হয়েছিল। কয়েকটা লাশ ফেলতে হয়েছে তবে আমেরিকান দুটো যা খুঁজছিল সেটা ও উদ্ধার করেছে ওদের কাছ থেকে।”
“জিনিসটার কী কোনো দাম আছে?
“কিছুটা তো আছেই। ভিয়েনেভের লেখাগুলো পড়লে পাগলের প্রলাপ বলে মনে হয়। ছবিগুলোও খুব বাজে। স্করপিয়ন বলল আমেরিকানরা নাকি ছবিগুলোয় কিছু একটা খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু ওরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কিছু পায়নি। এমনকি ওগুলো ছিঁড়ে পর্যন্ত ফেলেছে। ভেতরেও কিছু নেই। কোনো গোপন কাগজ বা সংকেত কিছুই না। যদি ভিয়েনেভ আর দ্য শ্যাম্পেন ব্লাক মিস্ট-এর রহস্য উদঘাটন করেও থাকেন সেটা ইতিহাসের গহ্বরে হারিয়ে গিয়েছে।” বলল হাসান।
সাকির ব্যাপারটায় পুরোপুরি খুশি হতে পারলো না, “আমেরিকানগুলোর কী অবস্থা?”
“কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পালিয়েছে সম্ভবত।” জবাব দিল হাসান।
“ওদেরকে খুঁজে বের করে সরিয়ে দাও।” আদেশ দিলেন সাকির।
“আমার মনে হয় ওদের সাথে ঝামেলা করতে গেলে আমাদের পরিচয়–
“তোমার মনে হওয়া না হওয়ায় কিছু আসে যায় না। এখন এখানকার খবর দাও। ঐ তিনজনের কোনো খোঁজ পাওয়া গেল?”
“এখনও না। বললামই তো যে ওদের পথ হারিয়ে ওটার ভেতর ঘুরে মরার সম্ভাবনাই বেশি,” জবাব দিল হাসান।
“সবাইকে ভালো করে নজর রাখতে বলো। আমার এই বসে থাকতে ভালো লাগছে না। এর চেয়ে বরং
হঠাৎ কন্ট্রোল রুমের লাইটগুলো পিট পিট করে ওঠায় কথা থেমে গেল সাকিরের। কম্পিউটারের স্ক্রিনগুলোও কালো হয়ে গেল। অবশ্য এক সেকেন্ড পরেই আবার আলো ফিরলো এগুলোয়। সাকির উঠে দাঁড়িয়ে কান পেতে আশে পাশে শোনার চেষ্টা করলেন। পাম্পের শব্দগুলো কেমন পাল্টে গিয়েছে বলে মনে হলো তার।
টেকনিশিয়ান আর তার সহযোগীরাও শুনেছে শব্দটা। সাথে সাথে কম্পিউটারের কীবোর্ডে ঝড় উঠল। কি হয়েছে বোঝার চেষ্টা করছে তারা। স্ক্রিনের সবুজ পতাকাগুলো বদলে হলুদ হয়ে গিয়েছে ততোক্ষণে।
“হচ্ছেটা কী?” জানতে চাইলেন সাকির।
“এক সেকেন্ডের জন্যে কারেন্ট চলে গিয়েছিল। তবে দ্বিতীয় লাইনটা দিয়ে আবার কারেন্ট এসেছে।”
“এরকম হওয়ার কারণ কী?”
“সম্ভবত প্রধান লাইনটা কেটে গিয়েছে বা সার্কিট ব্রেকার খুলে গিয়েছে।” একজন টেকনিশিয়ান জানালো।