“অস্টিন বলছি। তলায় পৌঁছে গেছি, এখন উদ্ধার কাজের দিকে এগুবো।” হেলমেটের সাথেই লাগানো মাইক্রোফোনে বলল লোকটা।
“রজার দ্যাট। জা-ভালা আর উডসন তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে।” কাঁপা কাঁপা একটা কণ্ঠ জবাব দিল।
কার্ট অস্টিন প্রপালসন ইউনিটটা চালু করে দিল, তারপর পা দিয়ে মাটিতে হালকা ধাক্কা দিতেই সে এগিয়ে গেল উদ্ধার কাজটার দিকে। যদিও বেশিরভাগ ডুবুরি-ই স্টান্ডার্ড ড্রাই-স্যুট-ই পরে আছে, তবে কার্ট আর আরো দুজনের পরনে নতুন এক ধরনের হার্ড স্যুট। এটা নিয়ে অবশ্য এখনও পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এই স্যুটগুলোর সুবিধা হলো এতে চাপের কোনো হেরফের হয় না, ফলে পানিতে ওঠানামার সময় ডিকমপ্রেশনের জন্যে থামতে হয় না।
এখন পর্যন্ত কার্টের কাছে স্যুটটা ভালোই লাগছে। শুধু একটু বড়, এই যা। উদ্ধারকর্মের কাছে পৌঁছাতেই কার্টের হাতে একটা ট্রাইপড ধরিয়ে দেয়া হলো। ওটার মাথায় একটা আন্ডারওয়াটার ফ্লাডলাইট বসানো। পুরো জায়গাটাতেই এরকম আরো অনেক লাইট বসান। একটু দূরেই একটা টারবাইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, সেটা দিয়েই জ্বলছে এগুলো।
স্রোতের ধাক্কায় টারবাইনের পাখাগুলো ঘোরে আর বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ফলে আলো পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর, উদ্ধার কাজও চলছে দ্রুত গতিতে।
কার্ট প্রাচীন বিধ্বস্ত জাহাজটার পিছনের দিকে চলে এলো।
“আরে দেখো দেখো কে এসেছে!” হেলমেটের ইন্টারকমে বলে উঠল একজন।
“আমাকে তুমি চেনো। আমার কাজই হলো কাজ শেষে এসে সব ক্রেডিট নিজের করে নেয়া।” কার্ট বলল।
অন্যজন হেসে দিল। কথাটায় সত্যের লেশমাত্র নেই। কার্ট অস্টিন হলো সবার আগে এসে সবার পরে যাওয়া মানুষ। ওর মতো ঘাড় ত্যাড়া মানুষও কম-ই আছে। কোনো প্রজেক্ট আর সবাই বাতিল করে দিলেও ও লেগে থাকবেই। থাকতে থাকতে হয় সত্যিই নতুন কিছু বের করে আনে নয়তো শেষ উপায়টাও কাজে লাগিয়ে তার পরেই থামে।
“জাভালা কই?” কার্ট জিজ্ঞেস করল।
অন্যজন দূরে এক দিকে ইঙ্গিত করল। জায়গাটা একদমই অন্ধকার।
“কি যেন গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস দেখানোর জন্যে খুঁজছে তোমাকে। পুরনো এক বোতল জিন (মদ) খুঁজে পেয়েছে মনে হয়।”
কাট মাথা ঝাঁকিয়ে আবারো প্রপালসন চালু করল। তারপর জো জাভালা যেখানে কাজ করছে সেদিকে এগুলো। ওখানে আরো একজন আছে, নাম মিশোলি উডসন। ধ্বংসস্তূপের সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে কিছু একটা খুড়ছে ওরা।
কিছু একটা বের করে প্লাস্টিকে মুড়ে রেখেছে, যাতে করে বালি ঢুকতে না পারে।
কার্টকে দেখে জো একটু সিধে হলো তারপর ইন্টারকমে দুষ্টুমির সুরে বলল, “এই ব্যাটা হাত চালিয়ে কাজ কর, এল জেফে আমাদের দেখতে আসছেন।”
একদিক দিয়ে কথাটা সত্য, কারণ কার্ট এখন ন্যাশনাল আন্ডারওয়াটার এন্ড মেরিন এজেন্সী (NUMA)’র স্পেশাল এসাইনমেন্ট ডাইরেক্টর। NUMA হলো স্বায়ত্তশাসিত একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। সমুদ্রের গহীনে লুকানো রহস্য নিয়ে এদের কারবার। তবে কার্ট ঠিক অন্যান্য বসের মতো না। ওর কাছে দলগত প্রচেষ্টাটাই আসল। তবে বিপজ্জনক কোনো কিছু করার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ওর নীতি আলাদা। ওসব কাজে ও নিজেই এগিয়ে যায়। ওর মতে, এসব কাজ করা একজন দলপতির-ই দায়িত্ব।
আর জো জাভালা কার্টের অধীনস্থ হলেও দুজনের সম্পর্কটা আরও অনেক বেশি গাঢ়। বহু বছর ধরে দুজন একসাথে এসব ভাঙ্গাচোরা জিনিস নিয়ে কারবার করছে। এইতো গত বছরই ওরা ১৯০৯ সালে ডুবে যাওয়া জাহাজ এস, এস, ওয়ারাথ উদ্ধার করেছে, একসাথে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যবর্তী DMZ (দুটো দেশের মধ্যবর্তী জায়গা যেখানে সামরিক অভিযান নিষিদ্ধ) এর নিচের একটা টানেলে আটকা পড়েছে; পৃথিবীর ভয়ংকরতম টাকা জালকারী দলটাকে আটকেছে। এরা শুধু কম্পিউটার ব্যবহার করতে, ছাপাখানার ধারে কাছেও যেতো না।
এরপর দুজনেরই ছুটিতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। ভূমধ্যসাগরের নিচে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের খবর শুনে তাই আর দেরি করেনি।
“তোমরা দুজন নাকি এখানে ফাঁকিবাজি করছো? তোমাদের আজকের বেতন কাটা।” কার্টও রসিকতা করল।
জো হাসলো, “কাটলে কাটো, তবে বাজির টাকাটা পেলেই সব উসুল হয়ে যাবে।”
“বাজি জিতেছ? তুমি? সূর্য কি পশ্চিমে ওঠলো নাকি আজ?”
জো প্রাচীন জাহাজটার ভাঙাচোরা কাঠামোটা দেখলো, “এটার সোনার স্ক্যান দেখার পর তুমি কি বলেছিলে মনে আছে?”
“বলেছিলাম এটা কার্থেজদের জাহাজ, আর তুমি বাজি ধরেছিলে যে এটা একটা রোমান জাহাজ। আর এখন পর্যন্ত যা কিছু উদ্ধার হয়েছে, তা থেকেই বলে দেয়া যায় না যে আমার কথা-ই ঠিক।”
“কিন্তু আমার কথা যদি অর্ধেক সত্যি হয়?”
“তাহলে তো তোমার ভাগ্যটা অন্য দিনের চেয়ে ভালোই বলতে হবে আজ।”
জো আবারো হেসে মিশেলির দিকে ফিরে বলল, “ওকে জিনিসিটা দেখাও।”
মিশেলি হাত নেড়ে কার্টকে এগিয়ে আসতে ইঙ্গিত করে সদ্য উদ্ধার করা একটা অংশের দিকে লাইট তাক করে ধরলো। লম্বা-কাটার মতো একটা জিনিস দেখা গেল সেখানে। এই ধরনের কাটাগুলো আগের কালের পালতোলা জাহাজের সামনে লাগানো থাকতো অন্য জাহাজের খোল ফুটো করার কাজে লাগতো এটা। জিনিসটা একটা কাঠের মধ্যে গাঁথা। ওখানকার বালি সরিয়ে ফেলায় এখন সেখানে সম্পূর্ণ আলাদা আরেকটা জাহাজের ভাঙ্গা কাঠামো দেখা যাচ্ছে।