“ছবিটা দিয়ে দাও। আমরা শুধু ওটাই-ই চাই। ধাওয়াকারী একজন চেঁচালো।
“এতোক্ষণে এই কথা বলছে।” বলল গামায়।
“রেডি?” জিজ্ঞেস করল পল।
গামায় মাথা ঝাঁকালো।
“দাও লাফ।”
গামায় হাঁটু গেড়ে বসে, সামনে ঝুঁকে দিল লাফ। তারপর দুহাত ছড়িয়ে দেয়াল পেরিয়ে খালটার কালো জলে গিয়ে আছড়ে পড়ল।
পলও একই কাজ করল। গামায়-এর ঠিক পাশেই পড়ল ও।
পতনের ধাক্কায় পানির ভেতর ডুবে গেলেও মুহূর্ত পরেই ওপরে মাখা তুললো। পানি খানিকটা ঠাণ্ডা কিন্তু খুব আরাম। ওরা তীরে সাঁতরে গেল। তারপর পল গামায়কে নিচ থেকে ঠেলা দিয়ে ওপরে তুলে দিলো। তারপর নিজেও উঠে এলো। গামায় ছবিটার কাছে গিয়ে ফ্রেমে হাত দিতেই পিছনে ঝুপ করে শব্দ হলো। তাকিয়ে দেখে এক ধাওয়াকারী ঝাঁপ দিয়েছে। সেকেন্ড পরে বাকি দুজনও লাফিয়ে পড়ল পানিতে।
“এই শালারা দেখি একেবারে নাছোড় বান্দা,” বলল গামায়।
“আমরাও।”
লোকগুলো সাঁতরে তীরের দিকে রওনা দিতেই পল আর গামায় দৌড় লাগালো। কিন্তু এগুতেই দেখে রাস্তার শেষ মাথায় দুই গুণ্ডামতো লোক দাঁড়িয়ে।
“আবার ধরা খেলাম।”
খালের ধারেই ছোট্ট একটা স্পিডবোট বাঁধা। উপায় এই একটাই। পল লাফিয়ে উঠল ওটায়। নৌকাটা প্রায় উল্টে গিয়েও উল্টালো না। গামায়ও লাফিয়ে উঠে দড়ি খুলতে খুলতে বলল, “স্টার্ট দাও।”
পল চাল করায় দড়িটা ধরে টান দিতেই ভটভট করে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে ওটা চালু হয়ে গেল। সামনে থ্রটল ঠেলতেই আরো কয়েক দমক ধোয়া বেরুলো পুরনো বোটটা থেকে তবে চলতে আরম্ভ করল ঠিকই।
পল সামনে থেকে নজর সরাতে পারছে না। কারণ খালের ধারে ডজন ডজন নৌকা আর বজরা বাধা। সেগুলো পেরিয়ে যেই মাত্র পল নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবা শুরু করেছে তখনই কুয়াশা ভেদ করে আরো একটা স্পিডবোটের শব্দ পাওয়া গেল। আবার পিছু নিয়েছে ধাওয়াকারীরা।
.
৫৭.
“জোরে চালাও।” চেঁচিয়ে বলল গামায়।
ছোট্ট নৌকাটা তার সর্বোচ্চ গতিতেই ছুটছে। তবে সেটা উল্লেখযোগ্য এমন কোনো গতি না।
পল আরো কয়েকবার গিয়ার টানাটানি করল যে, যদি গতি কিছুটা বাড়ে। কিন্তু কোনো কাজ হলো না, উল্টো মোটর আরো জোরে ভটভট করা আরম্ভ করল।
“এটাকে জোরে বলে না,” গামায় বলল।
“এই বোট এরচেয়ে বেশি জোরে আর চলে না।” বলল পল। তারপর আবার সামনের দিকে মনোযোগ দিল।
পিছনের নৌকাটা ধীরে ধীরে দূরত্ব কমিয়ে আনছে। একটা জায়গায় ডান দিকে মোড় নিতে গিয়েই ধাওয়াকারীদের নৌকা পল আর গামায়দের নৌকার পিছনে বাড়ি দিল। ধাক্কার চোটে ওরা সামনের পাথরের দেয়ালে ঘষা খেলো।
এরপর নদীটা সোজা এগিয়েছে। ফলে পিছনের নৌকাটা ওদের পাশাপাশি চলে এলো। ওদের একজন হাতে ছুরি তুলে নিয়েছে পলের দিকে ছুঁড়ে মারবে বলে কিন্তু সেই মুহূর্তে গামায় ওর দিকে নৌকায় থাকা একটা দাঁড় তুলে নিয়ে বাড়ি মারলো। দাঁড়টা সোজা লোকটার মাথার একপাশে লাগল আর সে ঝপ করে পানিতে পড়ে গেল। তবে অন্য আরেকজন, যার নাম স্করপিয়ন, সে দাঁড়টাকে ধরে ফেলল। আর নিজের দিকে টান দিল।
গামায় টানের চোটে পাশের নৌকাটায় পড়েই যেতো কিন্তু শেষ মুহূর্তে ও ছেড়ে দিল। স্করপিয়ন দাঁড়টা একপাশে ছুঁড়ে ফেলল।
নৌকা দুটো আবারও দূরে সরে গেল তবে এবার স্বরপিয়ন লোকটা ছুরি বের করল, তারপর অন্যজনের দিকে ফিরে বলল, “কাছাকাছি নাও।”
“ওদের নৌকার সাথে ধাক্কা লাগাও। ট্রাফিক জ্যামের সময় যেভাবে গাড়ি চালাও এটাও সেভাবেই চালাও।” গামায় বুদ্ধি দিল।
পল বুদ্ধিটা গ্রহণ করল আর নৌকা দুটো পরপর দুবার পরস্পরের গায়ে সজোরে ধাক্কা দিল আর কাত হয়ে দূরে সরে গেল আবার। সামনেই হঠাৎ উল্টোদিকে থেকে একটা বজরা চলে আসায় ওরা আবার আলাদা হয়ে গেল। কিন্তু এটা পার হতেই ধাওয়াকারীরা আবার ওদের দিকে ছুটে এলো। কিন্তু এবার আঘাতের পর নৌকাদুটো আলাদা না হয়ে অদ্ভুতভাবে আটকে রইল। ধাওয়াকারীদের নৌকা বেশি বড় আর গতিশীল হওয়ায় ওরাই জিতলো আর পল আর গামায়-এর ছোট নৌকাটাকে পাড়ের দিকে ঠেলে নিয়ে চললো। দেয়ালে বাড়ি লেগে ওটার সাথে ঘষে ঘষেই সামনে এগুতে লাগল নৌকা জোড়া। আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ল চার পাশে।
দেয়ালের কাছ থেকে সরে আসতেই স্করপিয়ন পলদের নৌকায় লাফিয়ে এসে গামায়-এর পায়ের কাছ থেকে ছবিটা তুলে নিলো। গামায়ও অন্য প্রান্তটা ধরে টানা আরম্ভ করল। কিন্তু স্করপিয়ন একটু জোরে টানদিতেই পুরনো কাঠের ফ্রেমটা রণে ভঙ্গ দিল। গামায়ের হাতে ধরা রইল লাল এক কাঠের ভাঙ্গা একটা টুকরো আর স্করপিয়ন বাকিটা নিয়ে নিজের নৌকায় ফিরে গেল। ওর সঙ্গী সাথে সাথে নৌকার মুখ ঘুরিয়ে খালের অন্যদিকে ছুটলো।
“ও ওটা নিয়ে গেল!” গামায় চিৎকার করে উঠল।
এখন ওদের ভূমিকা পুরো উল্টো হয়ে গিয়েছে। পল আর গামায়ই এখন ধাওয়াকারী। পল যতটা সম্ভব দ্রুত নৌকার মুখ ঘুরিয়ে দিল। আরও একবার নৌকা দুটোর মধ্যে সংঘর্ষ হলো। এবার আর নৌকা দুটো একসাথে তো লেগে থাকলোই না উল্টো ধাক্কায় পল-এর হাত নৌকার প্রটল থেকে ফসকে গেল।
আবার ধরতে যেতেই দেখে ইঞ্জিনের ভটভটানি আরো বেড়ে গিয়েছে। ও আবার গিয়ার বদলালো। ইঞ্জিনে তেলের বন্যা বয়ে গেল কিন্তু ফল হলো উল্টো। নৌকার গতি একদমই কমে গেল, যে কোনো মুহূর্তে ডুবে যেতে পারে।