সামনের দিকে কুঁজো হয়ে গেল স্করপিয়ন। তারপর কাত হয়ে পড়ে গেল মেঝেতে। সাথে সাথেই পল সামনে এগিয়ে কয়েকটা লাথি হাকালো তার গায়ে।
“পালাও।” গামায়-এর দিকে চিৎকার করে ডাকলো ও।
পল-এর লম্বা সাইজের সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। বেশি লম্বা হওয়ার কারণে ওর সাথে ঘুষাঘুষি করে না কেউ। কারণ হাতাহাতি করার জন্য ছয় ফুট আট ইঞ্চির কেউ খুব একটা সুবিধাজনক না। ঠিক এজন্যেই হাতাহাতি লড়াইতেও খুব একটা দক্ষ ও না।
কিন্তু যুতমতো পেলে ও খুব শক্তিশালী ঘুসি বা লাথি মারতে পারে। এখন যেমন এক লাথিতে স্করপিয়ন উড়ে ওর দুই সাঙ্গাতের কাছে গিয়ে পড়ল। তিনজনই এই হঠাৎ আক্রমণে কেমন দিশেহারা হয়ে গিয়েছে আর এই লম্বুটাকে আক্রমণ করবে কী করবে না বুঝতে পারছে না।
পল অবশ্য সেজন্য বিন্দুমাত্র অপেক্ষা করল না। ও ঘুরেই উল্টো দিকে দৌড় দিল। কোণায় পৌঁছতেই দেখে গামায় দরজার কাছে পৌঁছে গিয়েছে।
‘ধর ওদের,” স্করপিয়ন আদেশ দিল।
গামায় দরজার কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে পল ওকে ধরে ফেলল। গামায়ের হাতে সাম্পানের ছবিটা।
“আমি আরও ভাবলাম তুমি বুঝি আস্তে দৌড়াচ্ছ।” পল বলল।
“এটা হাতছাড়া করলে সব যেত।” হাফাতে হাফাতে বলল গামায়।
“আশা করি হাতছাড়া করতে হবে না।” দরজা খুলতে খুলতে বলল পল। সামনে এগুতেই একটা সিঁড়ি চোখে পড়ল। সম্ভবত ফায়ার এস্কেপ। পল ভারি স্টীলের দরজাটা টেনে খুলে ফেলল।
“ওপরে না নিচে?” গামায় জিজ্ঞেস করল।
“নিচে সম্ভবত বেসমেন্ট। ওপরে যাওয়াই ভালো।
ওরা দৌড়ে একতলা উঠে দেখে এখানেও দরজা। কিন্তু ধাক্কা দিতে বোঝা গেল যে তালা মারা।
“আরো ওপরে চলল,” পল চিৎকার দিল।
ওপরের দিকে দৌড়ালো আবার। সাথে সাথেই নিচের দরজাটা দড়াম করে খুলে গেলো। গামায় ওপরে উঠেই দরজাটায় ধাক্কা দিল। ওটার পাশে লেখা L3।
“এটাও দেখি বন্ধ। জরুরি অবস্থায়ই দরজা খোলা না পেলে ফায়ার এস্কেপের দরকারটা কী?” গামায় বলল।
পল দরজা খোলার চেষ্টা করল কিন্তু এটাও বন্ধ। গামায় ছবির ফ্রেমটা দিয়ে বাড়ি মেরে জানালার কাঁচ ভেঙে ফেলল। তারপর ওটা দিয়েই ভাঙা কাঁচের টুকরোগুলো সরিয়ে ওদিক দিয়ে উঠে গেল।
পলও সেদিক দিয়ে গিয়ে লাইব্রেরির ছাদে লাফ দিয়ে পড়ল। ওরা যেখানে নেমেছে সেই জায়গাটা সমতল আর আলকাতরা লেপা। কিন্তু বাকিটা ঢালু আর টাইলস বসানো। “আরেকটা রাস্তা নিশ্চয়ই আছে।”
ঢাল অংশটার পরেই আরেকটা সমতল জায়গা। সেখানে ছোট্ট একটা ঘরের মতো বসানো। ওরা যেরকম সিঁড়ি বেয়ে উঠেছে ওটাও ঠিক একইরকম সিঁড়ি ঘর।
“ঐ তো,” পল বলল।
গামায় সাথে সাথেই ছুটলো। আর পল চারপাশে তাকাল লাঠি-সোটা কিছু পাওয়া যায় কি-না তা দেখতে। কিন্তু কিছুই নেই। তাই ও আর দেরি না করে গামায় এর পিছু নিলো। টাইলস বসানো ছাদটা প্রায় খাড়াভাবে ঢালু তার ওপর শ্যাওলা জমে পিছল হয়ে আছে মারাত্মক।
একদম ঢালুটার মাথায় এক চিলতে সমতল জায়গা। দাড়ি পাল্লার লোহার রড়টার সমান হবে প্রস্থ। একবার পা হড়কালেই প্রপাত ধরণীতল।
ওরা ধীরে-সুস্থেই জায়গাটা পার হলো। তারপর সমতল আল কাতরামত জায়গাটায় লাফিয়ে নেমেই দরজার দিকে ছুটলো। যথারীতি এটাও বন্ধ। এবার অবশ্য জানালা ভাঙতে দেরি করা লাগল না।
এদিকে ওদের ধাওয়াকারীরাও ছাদে চলে এসেছে।
“তুমি যাও। আমি ওদেরকে আটকাচ্ছি।” বলল পল।
“উঁহু! এসব চলবে না। একটু আগে যা করেছ সেটা তাও মানা যায়।
কিন্তু তুমি তো আর লম্বা ব্রুস লি না। আমরা এক সাথেই থাকবো।”
“ঠিক আছে। তাহলে তাড়াতাড়ি করো।”
গামায় পলকে ছবিটা ধরিয়ে দিয়ে জানালার ধারে হাত দিতেই চেঁচিয়ে উঠল। পল ঘুরে দেখে ভেতর থেকে কেউ ওর হাত ধরে টানছে। পল গামায় এর পা ধরে টান দিল। কয়েক মুহূর্ত টানাটানির পর গামায় মুক্ত হলো। মুখ ভরা রক্ত।
“ঠিক আছ তুমি?” পল জিজ্ঞেস করল।
“বাড়িতে ফিরলে টিটেনাস টিকা দিতে হবে মনে করিয়ে দিও তো।”
“কামড় খেলে টিকা দিতে হয়। কাউকে কামড়ালে না।” বললো পল।
“তাহলে দরকার নেই।” বলল গামায়।
ওদের অবস্থা এখন ফাঁদে আটকানো কোনো প্রাণীর মতো। পল ছাদ থেকে টাইলসের কয়েকটা ভাঙা টুকরো তুলে নিলো। এদিকে দ্বিতীয় সিঁড়ির ভেতরের লোকটা দরজার গায়ে আঘাত করা শুরু করেছে। ভেঙে ফেলবে দরজা।
“এখন কী করবো?”
“খালে ঝাপ দেবো।” বলল পল।
আবার ওরা ঢাল বাওয়া শুরু করল। তবে এবার নিচের দিকে। গামায় একটা পাহাড়ি ছাগলের মতো তরতর করে নামতে লাগল। কিন্তু পল বার বার পিছলে যেতে লাগল। ওর অতিরিক্ত উচ্চতা-ই এবার ওর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ভারসাম্য রাখতে মাথা বেশি ঝোকালেই মনে হচ্ছে সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
শেষমেশ পিঠ ঠেকিয়ে পিছলা খেয়ে নামা শুরু করল। গামায়ও একই কাজ করল। শেষ মাথায় পৌঁছাতে তাই আর কোনো সমস্যা হলো না। নিচের খালটার প্রস্থ আট ফুটের মতো হবে। আর ওরা এখন চার তলা ওপরে।
“যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে তো অনেক বেশি নিচে।” বলল পল।
“আর কোনো উপায়ও তো নেই,” বলল গামায়।
“ওরা হয়তো পিছু নেয়ার সাহস করবে না।”
কিন্তু পিছু ফিরে দেখে ওই দুজনও আসছে, “উঁহু! সাহস ওদের ভালোই দেখা যাচ্ছে। তুমি প্রথমে লাফ দাও।”
গামায় ছবিটা নিচে ছুঁড়ে মারলো। খালের পাশের পাথুরে রাস্তাটায় পড়ল ওটা।