গামায় মুখ তুলে তৃতীয় ছবিটার দিকে তাকাল, “ছোট্ট একটা নৌকা প্রাণপণে কোথাও ছুটছে।”
“কি বোঝাতে চাচ্ছ?” পল জিজ্ঞেস করলো।
“দ্য চ্যাম্পিয়ন তাকে যেটা পাঠিয়েছিলেন সেটা তার লুকিয়ে রাখার দরকার ছিল, আবার জিনিসটা খুব বেশি দূর কোথাও রাখা সম্ভব ছিল না। যাতে করে চাইলেই ওটা আবার উদ্ধার করতে পারেন।”
পল ধরতে পারলো ব্যাপারটা, “একটা লোক যে জীবনে কোনোদিন ছবি আঁকেনি সে তাড়াহুড়ো করে কয়েকটা ছবি এঁকে ফেলল। তোমার কী মনে হয় উনি ছবিগুলোর মধ্যেই ওটা লুকিয়ে রেখেছেন?”
“না। ছবিগুলোর ভেতরেই না।” গামায় বলল।
ও মহামারীর ছবিটা হাতে নিয়ে উল্টে দিল। পিছনে একটা মোটা কাগজ ফ্রেমের সাথে আঠা দিয়ে আটানো। ছবিটা নামিয়ে ব্যাগ থেকে একটা সুইস আর্মি নাইফ বের করল। “এটা শক্ত করে ধরো।”
“পাগল হলে নাকি? খারাপ কাজ করলে যে খোদার গযব পড়ে ভুলে গিয়েছ?” নিচু স্বরে বলল পল।
“আমি সে ব্যাপারে ভাবছি না। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যে করছি এটা।” বলল গামায়।
“আর ঐ লোকটা যদি রাগ করে?”
“যা সে জানে না তা নিয়ে ওর কোনো ঝামেলাও হবে না। আর ওর কথা তো শুনেছেই। এ ছবিগুলোর কোনো দামই নেই ওদের কাছে। যদি অনুমতি পেতো তাহলে একটা গান গাইলেই এটা আমাদের কাছে বেচে দিতো।”
গামায় সতর্কতার সাথে পিছনের শক্ত কাগজটা তুলতে লাগল। খুব সাবধানে যাতে ছুরিটা বেশিদূর ঢুকে না যায়। একটা পাশ পুরো ভোলা হতেই তার ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিল।
“কী”
গামায় পুরো পিছন দিকটাই হাতড়ে কিছু ধরতে না পেরে ছবিটা নামিয়ে কাগজটা ফাঁক করে ভেতরে দেখার চেষ্টা করল। “নাহ কিছু নেই। বাকিগুলো দেখা যাক।”
পল শক্ত করে ধরতেই ও যুদ্ধজাহাজের ছবিটার পিছনটাও খুলে ফেলল। ওটার মাঝেও কিছু নেই।
“তার মানে যুদ্ধ জাহাজটা চাবিকাঠি নয়।” পল মন্তব্য করল।
“মজা পেলুম।”
সব শেষে ও সাম্পানওয়ালা ছবিটা তুলে নিলো।
“তাড়াতাড়ি। কেউ আসছে।” পল বলল।
টাইলসের মেঝের ওপর জুতোর খটখট শব্দ এগিয়ে আসছে দ্রুত। গামায় দ্রুত ওর ছুরি চালালো।
“তাড়াতাড়ি।”
রুমের শেষ মাথায় সেই লোকটাকে দেখা গেল। পল দ্রুত ছবিটা গামায় এর কাছ থেকে টান দিয়ে তাকের ওপর রেখে দিল। কিন্তু লোকটা তাতে হতভম্ব হওয়া তো দূরে থাক সামান্য অবাক পর্যন্ত হলো না। স্থির দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে রইল।
হঠাই পল বুঝতে পারলো লোকটাকে কেমন টলতে টলতে সামনের দিকে এগুচ্ছে। ওদের দিকে তাকায়ই নি। তারপর সামনের দিকে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মেঝেতে। পিঠে একটা ছুরি গাঁথা।
পিছনেই আর একটা লোককে দেখা গেল। লোকটার বয়স কম। কপাল আর গালে দগদগে ক্ষত। সে পড়ে থাকা লোকটার পিঠ থেকে ছুরিটা খুলে নিয়ে ঠাণ্ডা চোখে মুছতে লাগল। একটু পর আরো দুজন লোক এসে তার পাশে দাঁড়ালো।
“আপনাদের আর কষ্ট না করলেও চলবে। এখন যা করার আমরাই করবো।” ঘাওয়ালা লোকটা বলল।
.
৫৬.
“কে আপনি?” পল জিজ্ঞেস করল।
“আপনি আমাকে স্করপিয়ন ডাকতে পারেন। লোকটা জবাব দিল।
লোকটাকে নামটার জন্য কেমন গর্বিত মনে হলো। কারণটা পলের জানা নেই।
“আমাদেরকে কীভাবে খুঁজে পেলেন?” পল জানে যে এসব প্রশ্নের কোনো মানে নেই। সে শুধু সময় ক্ষেপণের চেষ্টা করছে। ও জীবনেও এই স্করপিয়নকে দেখেনি। যদিও ও অনুমান করতে পারছে ও কার হয়ে কাজ করে কিন্তু ওর পক্ষে তো পল আর গামায়-এর পরিচয় জানা সম্ভব না।
“আমাদের কাছে দ্য চ্যাম্পিয়নের ডায়রি আছে। সেখানে বেশ কয়েকবার ভিয়েনেভের কথা লেখা আছে। সেখান থেকেই রেনে বা ক্যামিলা ডুশেনেকে খুঁজে বের করা কোনো ব্যাপার না।”
“যদি ওনার কোনো ক্ষতি হয়…”গামায় হুমকি দিল।
“ওনার ভাগ্য ভালো যে আমরা যাওয়ার আগেই আপনারা ওনার কাছে গিয়েছিলেন। তাই একজন বৃদ্ধাকে হেনস্থা করার চাইতে আপনাদেরকে অনুসরণ করাটাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। এখন চিঠির বইটা দিয়ে দিন।”
গামায় আর পল বিষণ দষ্টি বিনিময় করল। ওদের আর কিছুই করার নেই। পল গামায় এর সামনে এসে দাঁড়ালো যাতে করে ও সুইস নাইফটা আবার হাতে নিতে পারে। তবে ঐ লোকগুলোর হাতের নয় ইঞ্চি ছুরির তুলনায় এটা নিতান্তই খেলনা ছাড়া কিছু না।
অ্যালবামটা বন্ধ করে সামনে ঠেলে দিয়ে পল বলল, “এই যে।” মসৃণ টেবিলের ওপর পিছল খেয়ে সেটা সোজা স্করপিয়নের পাশে গিয়ে থামল। ও সেটা তুলে নিয়ে এক নজর দেখে হাতের নিচে চেপে ধরলো।
“পুলিশ আসার আগেই আপনাদের কেটে পড়া উচিত।” গামায় বলল।
“পুলিশ আসবে না।” স্করপিয়ন বলল।
“কে জানে। কেউ নিশ্চয়ই আপনাদের দেখেছে– পল বলতে গেল। স্করপিয়ন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আপনারা ছবিগুলো দিয়ে কি করছিলেন?”
“কিছু না।” বলল পল। বলে নিজেই বুঝলো বেশি তাড়াতাড়ি বলে ফেলেছে। মিথ্যে ও বলতেই পারে না।
“দেখান দেখি।”
পল লম্বা একটা দম নিয়ে তাকটার দিকে এগিয়ে গেল। একটা ছবি টেনে বের করতেই বুঝলো ও আসলে ভুল ছবি টেনে বের করেছে। ওটা ছিল যুদ্ধ জাহাজের ছবিটা।” এটাই বোধ হয় ভালো হল।” মনে মনে ভাবলো পল। এটাকেও টেবিলের ওপর রেখে স্করপিয়নের দিকে ঠেলে দেয়ার মুহূর্তে পল এর মনে হলো তার হাতে এটাতো আসলে একটা অস্ত্র। ও শরীরটা বাকিয়ে ফ্রেমওয়ালা ছবিটা ফ্রিসবির মতো করে স্করপিয়নের দিকে ছুঁড়ে দিল। সোজা পেটে গিয়ে লাগল ওটা স্করপিয়নের।