পরের ছবিটা একটা রাস্তার। কুয়াশা আর ধুলোয় ঢাকা একটা গলির রাতের বেলার ছবি। তার দুপাশে অদ্ভুত রঙের কয়েকটা দরজা। সবই বন্ধ। কোন জনপ্রাণীর চিহ্ন নেই। ওপরের ডান দিকের কোণায় তিনটা ত্রিভুজ দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হয় দূরের কোনো দ্বীপ।
তৃতীয় ছবিটা সাম্পানের ওপর কয়েকজন লোকের। সবাই প্রাণপণ নৌকা বাইছে।
ছবিগুলো মিনিটখানেক দেখার পরই পল বুঝলো আনাড়ি বলতে আসলে লোকটা কী বুঝিয়েছে। হঠাৎ সামনে কোথাও থেকে লোকটাকে কেউ ডাক দিল।
“আমি এখানে মাতিল্ডা।” লোকটা জবাব দিল। তারপর পলের দিকে ফিরে বলল, “আমি এখুনি আসছি।”
পল মাথা ঝাঁকালো। লোকটা চলে যেতেই ও গামায়ের কাছে চলে এলো, “চিঠিগুলোয় কিছু পেলে নাকি?”
“তেমন কিছু না। এগুলো আসলে চিঠি কি-না সেটাই বুঝতে পারছি না। তারিখ আছে কিন্তু কে কাকে পাঠাচ্ছে কিছু লেখা নেই। এমনকি আমার এইটুকু ফ্রেঞ্চ ভাষার জ্ঞান নিয়েও বুঝতে পারছি এগুলো আসলে এলোমেলো কিছু লেখা ছাড়া কিছুই না।”
“ডায়রির মতো?” পল মত দিল।
“আমার কাছে পাগলের প্রলাপের মতো লাগছে। যেন নিজের সাথে নিজেই কথা বলছে। একই কথা বারবার।
গামায় এখন যে চিঠিটা পড়ছে সেটা দেখিয়ে বলল, “এই চিঠিটায় শুধু নেপোলিয়নের সমালোচনা আর গালাগালি। উনি নাকি রিপাবলিককে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে ফেলছেন।”
আগের কয়েকপাতা উল্টিয়ে আরেকটা চিঠি দেখিয়ে বলল, “এই চিঠিটায় উনি নেপোলিয়নকে বলছেন, “আন পেটিট হোমে সার আন গ্রান্ড শেভাল মানে হলো বিশাল ঘোড়ার পিঠে এক তালপাতার সেপাই।”
“খামাখা তো আর সাতবার তাকে ছুরি মারা হয়নি।” পল বলল।
“আমিও সেটাই ভাবছি।” গামায়ও সম্মত হলো। তারপর আরেকটা চিঠি বের করে বলল, “এটায় লেখা নেপোলিয়ন নাকি ফ্রান্সের চরিত্র নষ্ট করছেন। আর উনি নাকি একটা বুদ্ধ। আরও লেখা, “আমি তার জন্য এতো কিছু করলাম আর তার বদলে উনি আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি কি দিতে পারি তা কি উনার জানা নেই? খোদর গযবের মতোই সত্যটা সবাই দেখতে পাবে।”
“খোদার গযব?” পল বলল আবার।
গামায় মাথা ঝাঁকালো। “খারাপ কাজ করার জন্য। ঠিক যেমন একজন বৃদ্ধাকে তার প্রয়াত স্বামীর কথা মনে করিয়ে দিয়ে চামে তার কাছ থেকে নাস্তা আদায় করা।”
“তাতে আমার কোনো আফসোস নেই। গত কয়েক সপ্তাহের ভেতর সেরা খাবার ছিল ওটা। কিন্তু আমার মাথায় অন্য জিনিস ঘুরছে। এদিকে দেখে যাও।”
পল গামায়কে ছবিগুলোর কাছে নিয়ে আসলো। “দেখো।”
গামায় ছবিগুলো এক নজর দেখে বলল, “দেখলাম।”
“খোদার গযব।”
“ওটা কি কোনো জাহাজের নাম? আমি বুঝতে পারছি না তুমি কী বলতে চাচ্ছ।”
পল রাস্তার ছবিটা দেখালো। “গযব।” তাওরাতে এমনটাই আছে। ঐটা হলো মিসর। তিনটা ঘোট ঘোট ত্রিভুজ হলো তিনটা পিরামিড। দরজাগুলো লাল রঙ করা। সম্ভবত রঙের প্রতীক হিসেবে ওগুলো আঁকা। ভেড়ার রক্ত। আর রাস্তার এগুলো ভেবেছিলাম ধুলো। এগুলো আসলে ধুলো না। এটা হলো মহামারী। ফারাওরা যখন ইসরায়েলীদের মুক্তি দিতে অস্বীকার জানালো তখন এই মহামারী দেখা দেয়। এই মহামারীতে মিসরের প্রতিটা পরিবারের প্রথম সন্তান মারা যায়। শুধু যারা দরজায় ভেড়ার রক্ত লেপে দিয়ে ছিল তারা বাদে।” তারপর নিচের দিকে দেখিয়ে বলল, “এখানে দেখো। ব্যাঙ। এটা সম্ভবত ছিল দ্বিতীয় মহামারী। আর এখানে দেখ পঙ্গপাল। এটাও একটা মহামারী।”
পল কি বলছে বুঝতে পেরে গামার-এর চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ও চিঠির বইটা নিয়ে এসে জোরে জোরে পড়তে আরম্ভ করল। “লা ভেরিটে সেরা রিভিলি–সত্যটা সবাই দেখতে পাবে- “আ লুই কমে লা কলেরি ডি ডিউ-খোদার গযবের মতোই।”
“উনি কি যা আঁক ছিলেন তাই লিখছিলেন? নাকি যা লিখছিলেন তাই আঁকছিলেন।” পল জিজ্ঞেস করল।
“কি জানি! তবে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে!” গামায় বলল ও আবার বইটা থেকে একটা চিঠি বের করতে আরম্ভ করল, “এই নৌকাই সব শক্তির উৎস। এই জাহাজটাই স্বাধীনতার চাবিকাঠি।” বলে সে যুদ্ধ জাহাজের ছবিটা দেখালো তারপর আর একটা চিঠি বের করল, “এই চিঠিটাই সবচেয়ে ভালোবোঝা যাচ্ছে। আর তারিখ অনুযায়ী এটাই সর্বশেষ চিঠি। পড়ে মনে হচ্ছে এটা দ্য শ্যাম্পেনকে উদ্দেশ্য করে লেখা, তবে কোনো প্রাপক বা প্রেরকের নাম নেই।”
গামায় চিঠির ওপর আঙুল চালিয়ে একটা জায়গা বের করল তারপর পড়া আরম্ভ করল, “উনি বলছেন যে এরকম কোনো অস্ত্র কি হতে পারে নাকি? পুরো ব্যাপারটাই বুজরুকি। নিজে মনে না করলেও তার চামচারা নিশ্চয়ই তাকে এসব কথা লাগিয়েছে। তারপরও উনি আমাকে প্রমাণ হাজির করতে বলেছেন। কিন্তু তার চাহিদা মতো জিনিসটা তাকে এনে দিলেও তিনি তার প্রতিদান সম্ভবত দেবেন না। উনার মতে আমিই নাকি ঋণী। আর এই ঋণ শোধ করতেই হবে। আমার তাই ব্যাপারটা চেষ্টা করে দেখাও নিরাপদ মনে হচ্ছে না। কিন্তু আমি আর কার কাছে যাবো? আর সম্রাট একবার হাতে অস্ত্রটা পেলে যে কি করবেন সে ব্যাপারেও ভয় লাগছে আমার। পুরো দুনিয়া দখল করেও সম্ভবত থামবেন না তিনি। সম্ভবত সত্যটা প্রকাশিত না হওয়াটাই মঙ্গল। ওটা আপনার কাছে আপনার ঐ ছোট্ট নৌকাটাতেই লুকানো থাক। যে নৌকাটায় করে আপনি গুইলামে টেল-এ আশ্রয় নিতে ছুটেছিলেন।”