“আর সেজন্যেই আপনি চিঠিগুলো বেচতে চান?” পল অনুমান করল।
“ওই। আমি ভেবেছিলাম। নিলামে সেগুলো বিক্রি করতে পারলে আমরা বেঁচে যাবো। কিন্তু তা আর হলো না। সবাই বলল আমরা নাকি ভণ্ড আর এসব কিছুই ভুয়া। একবার কেউ পরীক্ষা করেও দেখলো না।”
“দ্য চ্যাম্পিয়নের কাছে লেখা ভিয়েননেভের অন্য আরো চিঠি আমাদের কাছে আছে। যদি হাতের লেখা মিলে যায় তাহলেই প্রমাণ হবে যে আপনার চিঠিগুলো আসল।” পল বলল।
ম্যাডাম ডুশেনে হাসলেন, “এখন আর এ দিয়ে কি হবে বলুন। আমি তো ওগুলোকে দিয়ে দিয়েছি।”
গামায়ের বুকটা ধড়াস করে উঠল, “কাকে?”
“একটা লাইব্রেরিকে। সাথে কয়েকটা পুরনো বই আর ছবিও দিয়েছি।
“ পল ঘড়ির দিকে তাকাল, “লাইব্রেরিটা কী খুলেছে এতক্ষণে?”
ম্যাডাম ডুশেনে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালেন, “খোলার সময় হয়ে গিয়েছে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “একটু বসুন আপনাদেরকে দুপুরের খাবার প্যাকেট করে দেই।”
ক্যামিলা ডুশেনে যে লাইব্রেরিটার কথা বলেছেন সেটা চারতলা। ফ্রেঞ্চ ইতিহাসের ওপর দুষ্প্রাপ্য বইগুলোর সংগ্রহ হচ্ছে এটার বিশেষত্ব। লাইব্রেরির পাশেই একটা খাল। রেনের মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে খালটা। তবে ওটা একসময় প্রমত্তা নদী ছিল। নিয়মিত বন্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য দুপাড়ে বাঁধ দেয়া। সেটাও কয়েকশো বছর আগে। ইউরোপের অনেক পুরাতন শহরের মতোই এখানেও নদীর প্রাকৃতিক পাড়ের কিছু অবশিষ্ট নেই বললেই চলে।
লাইব্রেরির লোকেরা মিশুক না হলেও সাহায্য করল যথাসম্ভব। এদের সাহায্য করার জন্য আলাদা একজন লোকই দিয়ে দেয়া হলো। সে ওদেরকে লাইব্রেরির একদম পিছনের একটা অংশে নিয়ে এলো। ম্যাডাম ডুশেনের দান করা জিনিসগুলো এখানেই রাখা।
“কাগজগুলোর তাও কিছুটা দাম আছে, ছবিগুলোর দাম একদমই নগণ্য। ওগুলো একদমই আনাড়ি হাতের কাজ। যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্য। কেউই বিশ্বাস করে না যে ওগুলো ভিয়েনেভের আঁকা। কারণ তিনি ছবি আঁকতে পারতেন না। আর ওগুলোতে কোনো স্বাক্ষরও নেই।” বলল লোকটা।
“তাহলে ওগুলো রেখেছেন কেন?” জিজ্ঞেস করল গামায়।
“কারণ দান করার সময় এই শর্তটাই দেয়া হয়েছিল। আমাদেরকে ওগুলো কমপক্ষে একশো বছর সংরক্ষণ করতে হবে না হয় ম্যাডাম ডুশেনে বা তার উত্তরাধিকারীকে ফেরত দিতে হবে। আর যেহেতু ওগুলো আসলে কারা তা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি তাই ওগুলো দেয়াটাই সমীচীন মনে হয়েছে আমাদের কাছে। লোকটা বলল।
“হ্যাঁ, পুরনো ভাঙ্গারির দোকানেও মাঝে মাঝে দামি জিনিস পাওয়া যায়।” মন্তব্য করল পল।
“ভাঙ্গারির দোকান” নাক সিটকে বলল লোকটা। তার উচ্চ শিক্ষার সাথে সম্ভবত শব্দটা যায় না।
“কেন? আপনাদের দেশে বাতিল ভাঙ্গা-চোরা জিনিসপত্র কোথায় কেনা বেচা করেন? আমেরিকায় তো অনেক আছে।”
“তা তো থাকবেই।”
গামায় বহু কষ্টে হাসি আটকে বইগুলো দেখায় মনোযোগ দিল। টলেমিক গ্রিক ভাষার একটা রেফারেন্স বই দেখা গেল। মিসরের বহু ত্ৰিভাষীয় শিলালিপিতে এই ভাষাটা পাওয়া গিয়েছে। ব্যাপারটা বেশ আশার, কারণ ভিয়েনোত আর দ্য শ্যাম্পেন মিসরীয় ভাষা অনুবাদ করার চেষ্টা করছিলেন। পরের বইটা এক ফ্রেঞ্চ লেখকের যুদ্ধের ওপর লেখা প্রবন্ধ সংকলন। এই লেখকের নাম গামায় জীবনেও শোনেনি। বইটা উল্টেপাল্টে দেখলো কিন্তু ভেতরে কোনো হাতের লেখা বা কোনো আলগা কাগজ পাওয়া গেল না।
“চিঠিগুলো কোথায়? বাকি কাগজপত্র” গামায় জিজ্ঞেস করল। লোকটা আরেকটা বই বের করল। এই বইটা পাতলা আর ওপরের কাভারটা বেশ আধুনিক। অনেকটা ফটো অ্যালবামের মতো। তবে প্রাস্টিকের ভেতর ছবির বদলে প্রায় দুইশো বছরের পুরাতন চিঠিপত্র রা। ওগুলোর কালি শুকিয়ে মলিন হয়ে গিয়েছে। ঝরনা কলম বা কে জানে পালকের কলম দিয়ে হয়তো লেখা হয়েছে এগুলো।
“মোট পাঁচটা চিঠি–সতেরো পাতা। সবই আছে এখানে। লোকটা ব্যাখ্যা করল।
গামায় একটা চেয়ার টেনে বসে লাইট জ্বেলে দিল। তারপর একটা নোটপ্যাড আর কলম বের করে পড়া শুরু করল। ফ্রেঞ্চ ভাষায় লেখা থাকার কারণে পড়তে . বেশ সময় লাগছে। আর বাক্যগুলোও কেমন যেন বড় বড়। অনেক অসংলগ্ন কথাবার্তা ভেতরে যেগুলো হয়তো তখনকার দিনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল। গামায় ওটা পড়া শুরু করতেই পল বলল, “ছবিগুলো কী আমি দেখতে পারি?”
“অবশ্যই।” বলল লোকটা।
আরো খানিকটা সামনে এগিয়ে লোকটা বিশাল একটা আলমারির সামনে এসে দাঁড়ালো। চাবি দিয়ে দরজা খুলতেই ভেতরে বিভিন্ন সাইজের অনেক ছবি দেখা গেল। লম্বাভাবে তাকের ওপর জড়ো করে রাখা।
“সব ভিয়েনেভের আঁকা?”
“না, তিনটা। তবে আবারো বলছি তার কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই।”
পলের ব্যাপারটা মনে আছে। তবুও সে ভিয়েনেভের আঁকা হতেও পারে’ ছবিগুলো দেখতে ইচ্ছুক।
লোকটা প্রথম তিনটা ছবিই তুলে আনলো। সাধারণ কাঠের ফ্রেমের মাঝে বসানো। সব ফ্রেমই পুরাতন আর রং চটা।
“এগুলোই আসল ফ্রেম?” পল জিজ্ঞেস করল।
“অবশ্যই। ছবির চাইতে সম্ভবত ওগুলোর দামই বেশি।” লোকটা বলল।
পল একটা লাইট জেলে ওগুলো দেখতে লাগল। তেল রঙ দিয়ে আঁকা ছবিগুলো, মোটা ব্রাশ দিয়ে আঁকা তবে রঙের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। এলোমেলো।
প্রথম ছবিটায় একটা কাঠের যুদ্ধজাহাজের তিন-চতুর্থাংশ দেখা যাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে শিল্পীর ছবি আঁকায় কোনো দক্ষতাই নেই। ছবিটা পুরো দ্বি-মাত্রিক লাগছে।