পলও ওর ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে তাকাল। “এরকম ঘটনাবহুল একটা জীবন আর ইতিহাস বদলে দেয়ার মতো বিভিন্ন ভূমিকার পরও অ্যাডমিরাল ভিয়েনেভ সম্পর্কে কোথাও খুব বেশি কিছু লেখা নেই।”
“কি কি জানতে পারলে?”
“অভিজাত পরিবারের সন্তান। মেরি আন্তোইনেট আর বাকিদের সাথে গিলোটিনে কাটা পড়ার কথা ছিল কিন্তু উনি আগে আগেই বিপ্লবের সমর্থন দেয়ায় বেঁচে যান আর নৌবাহিনীতেও তার অবস্থান অক্ষুণ্ণ থাকে।”
“মানুষ পটানোর ওস্তাদ ছিলেন সম্ভবত।” গামায় মত দিল।
“সম্ভবত। আবুকির উপসাগরের ঘটনাঘটার পর ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়েন। তারপর তাকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয় আর তার বিরুদ্ধে কাপুরুষতার অভিযোগ আনা হয়। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে নেপোলিয়ন তার পক্ষ নেন। তাকে ভাগ্যবান বলে অভিহিত করেন আর কোর্ট মার্শালের পরিবর্তে তাকে ভাইস অ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।”
গামায় সিটে হেলান দিল, “ভাগ্য একেই বলে!”
“হ্যাঁ, চিন্তা করো শুধু তার চুপচাপ বসে থাকার কারণেই কিন্তু মিসরে এভাবে নেপোলিয়নের পরাজয় ঘটে।”
“সম্ভবত তার হাতে এই অস্ত্রটা থাকার কারণেই তার ভাগ্যটা এত ভালো ছিল। তুমিতো জানোই আবুকির উপসাগরের পাশের একটা শহরেই কিন্তু রোসেটা পাথরটা উদ্ধার হয়। দ্য চ্যাম্পিয়নের চিঠিতে বেশ কয়েকবার উদ্ধার করা পুরাকীর্তিগুলোর কথা উল্লেখ আছে। সেগুলোর বর্ণনায় প্রায়ই তিনটা ভাষার শিলালিপির কথা জানা যায়। ঠিক রোসেটার মতোই। দ্য শ্যাম্পেন প্রথম যে জিনিসটা অনুবাদ করার চেষ্টা করেছিলেন সেটায় কিন্তু ওসাইরিসের মৃত দেহ আবার জীবিত করার ক্ষমতার কথা সম্পর্কে লেখা ছিল। এমনওতো হতে পারে যে প্রথমবার ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই ভিয়েনেভ নেপোলিয়নকে এই “অস্ত্রটার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল।” গামায় বলল।
পলও ব্যাপারটায় সম্মত হলো, “তবে শুধু প্রতিশ্রুতি দেয়া পর্যন্তই। ভাইস অ্যাডমিরাল পদে উন্নীত হবার পর আবার আরেক যুদ্ধে গিয়ে আবারও শোচনীয় পরাজয় করলেন। তারপর আবারো নেপোলিয়নের কাছে ফিরে বললেন যে, এবার “অস্ত্রটা তাকে দেবেন-ই।”
“মিথ্যেবাদী রাখালের মতো। গামায় বলল।
“হ্যাঁ, সেজন্যেই নেপোলিয়ন আর তার কথায় কান দেননি।”
গামায় মাথা ঝাঁকালো। “কিন্তু ভিয়েনেভ কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি এরপরও। তার চিঠিতে বারবার ভাগ্য আর নিয়তির কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। কেমন বেপরোয়া কথাবার্তাও আছে। শেষবারের মতো নিজের কাহিনী নতুন করে লেখার এটাই ছিল সুযোগ। কিন্তু একদম শেষ চিঠিটায় দেখা যায় ভিয়েনেভ প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে নেপোলিয়ন আর তাকে বিশ্বাস করেন না।”
“সেটা কবে পাঠানো হয়েছিল?”
“উনিশশো জার্মিনাল, ১৪। তার মানে হলো ৯ এপ্রিল ১৮০৬।”
“মরার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে।”
“নেপোলিয়নের এ ধরনের কাজ করতে আটকাতো না। যাকেই তার মনে হতো তার ক্ষমতার জন্যে হুমকিস্বরূপ তাকেই তিনি সরিয়ে দিয়েছেন। ইংল্যান্ড দখল করা যখন সম্ভব হলো না তখন তিনি রাশিয়া দখল করার চেষ্টা করছিলেন। কোনো কারণ ছাড়াই। ইচ্ছে হয়েছে তাই। সেখানেও তাঁর শোচনীয় পরাজয়ই হয়। কিন্তু শুধু ভিয়েনেভের এই “অস্ত্রের ব্যাপারটাই সম্ভবত নেপোলিয়ন সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সহ্য করে আসছিলেন।”
বলে গামায় নিজের ঘড়ি দেখলো, “নামার সময় হয়ে এসেছে। কোত্থেকে শুরু করলে ভালো হয় বলে তোমার মনে হয়?”
পল জোরে শ্বাস ফেলল, “ভিয়েনেভের কাগজপত্র কোনো লাইব্রেরিতে রাখা নেই। তার নামে কোনো জাদুঘর বা স্মৃতিস্তম্ভও নেই। শুধু বিশ বছরের পুরনো কয়েকটা পেপার কাটিং পেয়েছি। ক্যামিলা ডুশেনে নামের এক মহিলার বিজ্ঞাপন সেটা। সে তার গ্রামের বাড়িতে কিছু চিত্রকর্ম আর কাগজপত্র খুঁজে পেয়ে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপনটা দিয়েছিল। ওগুলো নাকি ভিয়েনেভ আর আরো কয়েকটা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সাথে সম্পর্কিত।”
“ওগুলোর কী হয়েছে?” গামায় জিজ্ঞেস করল।
“সবাই ভুয়া বলেই উড়িয়ে দিয়েছে। কারণ ভিয়েনেভ যে ছবি আঁকতে পারেন। এ কথা কারো জানা নেই। তবে মজার ব্যাপার হলো ডিয়েনেভ মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত যে বোর্ডিং হাউজে থাকতেন সেটার মালিক হচ্ছে ঐ মহিলার পূর্বপুরুষ।” পল জবাব দিল।
গামায় কিছু বলার আগেই ইঞ্জিনের আওয়াজ বদলে গেল আর বিমান নিচে নামা শুরু করল। পাইলটের গলার আওয়াজ শোনা গেল স্পিকারে, “আমরা রেনে’র কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি। আর ১৫ মিনিটের মাঝেই আমরা ল্যান্ড করবো।”
“তার মানে ম্যাডাম ডুশেনেকে খুঁজে বের করার জন্য আমাদের হাতে সময় আছে পনের মিনিট।” পলই প্রস্তাব দিল।
“আমিও ঠিক এটাই ভাবছিলাম।”
.
৫৫.
সূর্য ওঠার কিছু পরেই পল আর গামায় একটা গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিল। বিভিন্ন ডাটাবেস ঘেটে ওরা ক্যামিলা ডুশেনের ঠিকানা খুঁজে বের করেছে। এখন পল গাড়ি চালাচ্ছে আর গামায় ম্যাপ দেখে বলে দিচ্ছে কোন দিকে যেতে হবে। কারণ রাস্তাটা ভয়ানক রকম আঁকাবাকা আর সরু।
এমনিতেই এরকম একটা প্যাচানো রাস্তায় গাড়ি চালানো মুশকিল, তার ওপর আবার চারপাশে কুয়াশা। হঠাৎ উল্টোপাশ থেকে একটা ট্রাক ওদের পাশ কাটাতে যেতেই পল ভয় পেয়ে পাশের জমিতে নামিয়ে দিল।