‘বুদ্ধিটা অবশ্যই দারুণ। তবে আমরা কিন্তু এর মধ্যেই ওদের যথেষ্ট ক্ষতি করেছি। ওরা ইতোমধ্যেই জানে যে আমাদের কাছে ব্লাক মিস্ট আছে। তার মানে ওরা ওদের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে আমাদেরকে আটকানোর। ওদের অবশ্য আর কোনো উপায়ও নেই। তোমার বন্ধু ইদো তো বলেছেনই যে ওদের নিজস্ব সেনাবাহিনী আছে। তার মানে হয়তো ওদের ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার, বিমান সবই আছে। তাই এরকম একটা অস্ত্রসজ্জিত গাড়ি দিয়েও আমাদের তাই কোনো লাভ হবে না।”
জো চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো। কার্ট বলে চললো।
“তার ওপর আমি লিবিয়ার ব্যাপারটা নিয়েও ভাবছি। পুরো শহরের পানি নেই। হাজার হাজার মানুষ পানির অভাবে ভুগছে। এই সৈন্যটার মতো ওরাও পানির অভাবে ধুকে ধুকে মরবে।”
“কোনো মৃত্যুই আরামের না। কিন্তু পানির অভাবে মারা যাওয়াটা সম্ভবত সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। চোখ অন্ধকার হয়ে যায়। কিন্তু মানুষটা মরেও না। কষ্ট পেতেই থাকে।”
কার্ট মাথা ঝাঁকালো। “আমরা যে দিক দিয়ে এসেছি সেদিকে ফিরে যাই আর সাথে কয়েকটা বোমা নিয়ে যাই। তাহলে ঐ পাইপ লাইন বা পাম্পগুলো উড়িয়ে দিতে পারবো।”
জো’র বুদ্ধিটা পছন্দ হলো। তবে ও কার্টের পিছু পিছু জাহান্নামে যেতেও রাজি।
“ওরা কোনোদিন চিন্তাও করবে না যে আমরা এদিক দিয়ে আসবো।”
“আর এগুলো কোনো ল্যাবে নিয়ে যাওয়ার কী হবে?” রেনাটা জিজ্ঞেস করল। কার্ট জবাব দিল, “ব্রাড গোলনার আরো একটা ল্যাবের কথা বলেছিল। তাই যদিও আমরা বের হওয়ার রাস্তাটা খুঁজে পাই। আর বোমা মেরে সাকিরের সব সৈন্যকে উড়িয়ে দিয়ে পালাতেও পারি তার পরেও এটাকে আমাদেরকে একটা মেডিকেল টীমের কাছে এটা নষ্ট হওয়ার আগেই পৌঁছে দিতে হবে।”
রেনাটা বাকিটা বলল, “যদি আমরা সময়মতো এটা পৌঁছাতে পারি। এমন কোনো গ্যারান্টি নেই যে ওরা সাথে সাথে এটার প্রতিষেধক বের করে ফেলতে পারবে। সর্বোচ্চ যেটা হতে পারে তা এটার উপাদানগুলো সনাক্ত করে গবেষণা শুরু হবে। আর তা থেকে ফলাফল পেতে কয়েক মাস অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”
“আর আপনিই-ই বলেছেন ল্যাম্পেডুসার ওরা আর মাত্র কয়েকদিনই বাঁচবে।” বলল কার্ট।
রেনাটা মাথা ঝাঁকানো, “কয়েকজন হয়তো মারাও গিয়েছে।”
কার্টও সেটাই ভেবেছিল। বাচ্চা, বৃদ্ধ আর যারা অসুস্থ ছিল আগেই তাদের বেশিদিন টিকে থাকার কথা না।
“তার মানে আবারও সিংহের খাঁচাতেই?” জো বলল।
কাট মাথা ঝাঁকালো।
“তো যাওয়া যাক।” বলল জো।
“ঝুঁকিটা অনেক বেশি। কিন্তু ঝুঁকি নিলে এটাই নেয়ার মতো মনে হচ্ছে। আমার কাছে।” বলল রেনাটা।
কার্ট অবশ্য এটাকে ঝুঁকি নেয়া না ভেবে হিসেবী পদক্ষেপ ভাবছে।”
“আমাদের পক্ষে কিন্তু একটা জিনিস আছে। ওরা যদি বেশির ভাগকেই বের হওয়ার রাস্তায় পাহারা বসায় তাহলে নিচে এখন সামান্য কিছু লোকই থাকবে।”
“আমাকে কয়েক ঘন্টা সময় দিলেই আরো একটা জিনিস আমাদের পক্ষে এনে দিতে পারবো।”
“কি জিনিস?”
“আমাদের নিজস্ব সাহারিয়ানা।”
কার্ট দাঁত বের করে হাসলো। জো জাভালো বাদে অন্য কেউ কথাটা বললে কার্ট তাকে সময় নষ্ট করতে মানা করতো। কিন্তু কারিগরি ব্যাপার স্যাপারে জোর দক্ষতা একজন শিল্পীর মতোই। যদি সাহারিয়ানাকে আবার চালু করা যায়, তাহলে জো-ই পারবে।
.
৫৪
ভূমধ্যসাগরের কোথাও
কার্টের নির্দেশ পাওয়ার পরও পল আর গামায়ের বেনগাজী থেকে রওনা দিতে আরো চব্বিশ ঘণ্টা দেরি হয়ে যায়। কারণ অব্যাহত সংর্ঘষের কারণে এয়ারপোর্টে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পাইলটরা জালে আটকানো ট্রাউট মাছের মতোই পালানোর জন্য হাশফাস করছিল। বিমানে তেল-টেল ভরে শুধু ওড়ার অপেক্ষা। শেষমেশ এক ঘণ্টা হয় ওরা উড়তে পেরেছে। এখন বিমানটা ভূমধ্যসাগরের ওপরে। পানি থেকে প্রায় সাইত্রিশ হাজার ফুট ওপরে।
চ্যালেঞ্জার ৬৫০ বিমানটার কেবিনটা অনেক বড়, ইদানীংকালের বিমানগুলোতে এ রকমটা দেখা যায় না। দেখতে তাই বিমানটাকে বেশ বেটপই দেখায়, তবে পল-এর মতো লম্বা মানুষের জন্য বিমানটা বেশ মানানসই।
“ঐ ভাঙ্গা চোরা DC-3’র চাইতে এই বিমানটাই বেশি ভালো।” ঘোষণা করল পল।
“কি জানি। ঐ বিমানটায় অন্য রকম একটা আকর্ষণ আছে। কেমন একটা প্রাচীন আবহ।” গামায় জবাব দিল।
“প্রাচীন আবহ না ওটা হবে আবহ।”
ওরা এখন মুখোমুখি ক্রীম রঙের দুটো সোফায় বসে আছে। পায়ের কাছে বিচিত্র নকশা কাটা। পুরু একটা কার্পেট। সেটা এতোই নরম যে ওরা জুতো পর্যন্ত খুলে ফেলেছে।
ওরা নিজেদের ল্যাপটপ খুলে সামনের ট্রে টেবিলে রাখলো, তারপর NUMA’র গোপন ওয়েব সাইটে প্রবেশ করল।
পল বলল, “আমি ভিয়েনেভের ইতিহাস নিয়ে ঘেটে দেখি। কোনো সূত্র-টুত্র পাই কি-না সে দ্য শ্যাম্পেনদের পাঠানো কাগজগুলো দিয়ে কি করেছিল।”
গামায় মাথা ঝাঁকালো, “আর আমি এদের মধ্যে যেসব চিঠিপত্র চালাচালি বা যোগাযোগ কি কি হয়েছিল খুঁজে দেখি। আশা করি কলেজে পড়া ফ্রেঞ্চ দিয়েই কাজ চলে যাবে, না হলে ট্রান্সলেশন প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে হবে।”
নীরব কেবিন আর তিন-চার ঘন্টার ফ্লাইট ওদেরকে টানা কাজ করার ভালোই সুযোগ করে দিল। কাজের মাঝামাঝি গামায় ওর দু পা-ই সিটের ওপর ভাজ করে বসে চুল টেনে পিছন দিকে বেঁধে নিলো, ঠিক যেন কেউ তার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য কোমর বেঁধে পড়তে বসেছে।