“তা এত পূর্বে এগুলো কীভাবে আসলো? ইতালিয়ন সৈন্যদল কখনো কায়রোর আশেপাশে এসেছে বলে তো শুনিনি।”
“হতে পারে যে অগ্রবর্তী কোনো বাহিনীর অংশ ছিল এটা। এগুলোর কাজই ছিল এটা। আগে আগে গিয়ে রেকি করা আর শত্রুদের অবস্থা যাচাই করা। “জো বলল।
ওরা পুরো রুমটা ভালো করে খুঁজে দেখলো। কিছু খালি ক্যান, স্পেয়ার পার্টস, অস্ত্রপাতি আর খুচরো যন্ত্রাংশ খুঁজে পেল।
“এ দিকে” রেনাটা ডাক দিল।
এক কোণায় দুটো গাড়ির পেছনে আছে ও। ইতালিয়ান সেনাবাহিনীর পোশাক পরা একটা লাশ পড়ে আছে সেখানে। একটা নোংরা বিছানার চাদরের ওপর শোয়ানো ওটা। মরুভূমির পরিবেশের কারণে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। মুখটা বীভৎসভাবে হা হয়ে আছে। হাড্ডিসার আঙুলগুলোর ওপর চামড়া আছে এখনও, সেটায় আবার একটা পিস্তল ধরা। লাশটার পাশেই খানিকটা ছাই আর অর্ধেক পোড়া একটা কাগজ পড়ে আছে।
কার্ট অর্ধেক পোড়া কাগজটা পরীক্ষা করল। খানিকটা পড়া যাচ্ছে এখনও। তবে ভাষাটা ইতালিয়ান। তাই ওটা রেনাটার দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
“আদেশপত্র, সম্ভবত একে এগুলো ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।” বলল রেনাটা।
“কিছু পড়া যাচ্ছে না?” রেনাটা ওর আলোটা আরো ভালো করে কাগজটার ওপরে ফেলল, “জড়ো করে ধ্বংস করো…তার আগেই ঝামেলাটা শেষ… “আর পড়তে পারছি না।”
“যুদ্ধের আদেশ।”
রেনাটা কাগজগুলো কার্টকে ফেরত দিয়ে পাশেই পড়ে থাকা একটা বই তুলে নিলো। খুলতে দেখা গেল ওটা আসলে বই না। ব্যক্তিগত ডায়রি। বেশির ভাগ পাতাই ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। শুধু শেষ পাতায় আনা-মেরি নামে একজনকে লেখা একটা বিদায় সম্ভাষণ বাদে আর কিছুই নেই।
“পানি প্রায় শেষ। তিন সপ্তাহ হলো এখানে এসেছি। যদিও কোনো খবর পাইনি তবে ধারণা করছি যে ইংরেজরা রোমেলকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য এত কিছুর পরও যুদ্ধ করতে চাচ্ছিলো। কিন্তু আমি ওদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। খামাখা মরে কোনো লাভ নেই। সৈন্যরাতো তাও আত্মসমর্পণ করার সুযোগ পায়। আমরা ধরা পড়লে গুপ্তচর হিসেবে সাথে সাথে গুলি করা হবে।”
“এনাকে দেখে তো সাধারণ সৈন্য বলেই মনে হচ্ছে। দেখামাত্র গুলি করা হবে কেন?” জো মন্তব্য করল।
“হয়তো বা শসীমানার অনেক বেশি ভেতরে চলে এসেছিলেন তাই।” জবাব দিল কার্ট।
“তাহলে বাকিদের বাড়ি পাঠালেন কীভাবে? গাড়িগুলোই বা এখানে কেন?” জোর প্রশ্ন।
রেনাটা বাকি পাতাগুলোও উল্টেপাল্টে দেখলো। এই প্রশ্নের জবাব ওখানে লেখা নেই।
“আর কিছু লেখা নেই?”
“হাতের লেখা পড়া যাচ্ছে না ঠিক মতো। প্রতিদিনই আশপাশে সাজোয়া গাড়ি বহরের আওয়াজ পাই। তবে এখনো আমাকে খুঁজে পায়নি কেউ। তবে শেষ পর্যন্ত ধরা না পড়েই পালাতে পারবো কি-না জানিনা। আমি সুড়ঙ্গটা ধসিয়ে দিয়েছি। ইংরেজদেরকে আমাদের গাড়িগুলো পেতে দেবো না। যতই ভাবছি ততোই খারাপ লাগা বাড়ছে। আমাদের পক্ষেই কিছু করা সম্ভব ছিল। শুধু যদি তেল কম এনে বেশি বেশি পানি আনতাম তাহলেই হতো। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকে সারাক্ষণ। নাক আর কান দিয়ে রক্ত পড়ে। মাঝে মাঝে ভাবি পিস্তলটা দিয়ে এই যন্ত্রণার অবসান ঘটাই কিন্তু তাতেও তো পাপের বোঝা আরও বাড়বে। এমন যদি হতো যে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম, আর জাগলাম না। কিন্তু প্রতিবারই চোখ বুজলেই একটা স্বপ্নই শুধু দেখি–ঠাণ্ডা পানি। সাথে সাথে ঘুম ভেঙে দেখি এই শুষ্ক বিরান ভূমিতে পড়ে আছি। আমি এখানেই মরবো। তৃষ্ণায় ধুকে ধুকে মরে যাবো আমি।”
“এরপর আর লেখা নেই।” ডায়রিটা বন্ধ করতে করতে বলল রেনাটা।
কার্ট একটা লম্বা শ্বাস নিলো। এই গোপন আস্তানা আর অদ্ভুত গাড়িগুলোর রহস্য আপাতত আর জানা যাবে না। ওদের নিজেদেরই এখন ঝামেলার শেষ নেই। আর এই চিঠিটা পড়ে ওদের সমস্যার রূপটা কার্টের মনে আরো নগ্নভাবে ধরা দিল।
“খুশির খবর হচ্ছে, আশেপাশে নিশ্চয়ই বের হওয়ার কোনো রাস্তা আছে। না হলে গাড়িগুলো এখানে আনতে পারতো না। আর খারাপ খবর হচ্ছে। আমাদের এই নির্ভীক যোদ্ধা বন্ধুটা সেই রাস্তাটা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে যাতে করে ইংরেজরা সেটা খুঁজে না পায়।” কার্ট ঘোষণা দিল।
“রাস্তাটা খুঁজে বের করতে পারলেও হয়। একটা না একটা উপায় বের হবেই।” বলল রেনাটা।
“হয়তো, তবে কেন যেন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হবে না।” বলল কার্ট। বাকি দুজনই কার্টের দিকে এমনভাবে তাকাল যেন ওর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। কার্ট ইতালিয়ান সৈন্যটার লাশটাকে ইঙ্গিত করে বলল, “উনি কিন্তু গোলাগুলির ভয় করছিলেন। আমাদেরও একই জিনিস নিয়ে চিন্তা করা উচিত। খেয়াল করে দেখেছ, আমাদের ধাওয়াকারীরা যেন ইচ্ছে করেই আমাদের পিছু আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এটার শুধু দুটো কারণ হতে পারে। হয় এদিক দিয়ে বের হওয়ার কোনো রাস্তা নেই, না হয় রাস্তা আছে আর সাকিরের লোকজন সেখানে অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে। ঠিক খরগোশের গর্তের বাইরে বসে নেকড়ে যেমন ঠেটি চাটে সেরকম “।
জো একটা সমাধান দিল, “এখানে তো যথেষ্ট অস্ত্র আর গোলাবারুদ আছে। যদি এগুলোর কোনোটাকে আবার চালু করা যায় তাহলে বোমা মেরেই তো আমরা ওদেরকে উড়িয়ে দিতে পারবো। ওরা যদি বাইরে অপেক্ষা করেই তাহলে ওরা আশা করছে একটা ATV। এরকম একটা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত গাড়ি ওদের কল্পনারও বাইরে।”