“না। আমি ওদেরকে আর জ্যান্ত দেখতে চাই না। আমি স্বচক্ষে ওদের বুলেটে বিদ্ধ লাশ দেখতে চাই।” সাকির বললেন।
“আমি এখুনি ব্যবস্থা করছি।” হাসান নিজের জ্যাকেট ঠিক করতে করতে বলল।
“ঠিক আছে। তবে একটা কথা হাসান। এবার যদি কোনো গড়বড় হয়। তাহলে যা হবে তা কিন্তু তোমার ভালো নাও লাগতে পারে।” বললেন সাকির।
.
৫৩.
রেনাটা একেবারে ফর্মুলা ওয়ান ড্রাইভারের মতো গাড়ি চালাতে লাগল। কিন্তু কিছুদূর পরেই আবার সুড়ঙ্গ সরু হয়ে আসায় গতি কমাতে বাধ্য হলো। নানান জলে রাস্তাটা ভরা। ওগুলোর ওপর দিয়েই যাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু মেঝে আর ছাদের মধ্যে ফাঁক এতোটা কমে এসেছে যে আর এগুতে পারলো না।
পিছনে তাকিয়ে ATv-টা আবার সরিয়ে আনলো ওখান থেকে।
“আমার মনে হয় ওরা আর আমাদের পিছু নিচ্ছে না। কার্ট বলল। রেনাটা ততোক্ষণে আবার আরেকটা পথে সামনে এগুচ্ছে। ওর কথা শুনে একবার পিছনে তাকাল। পিছনে কোনো লাইট দেখা যাচ্ছে না। রেনাটা ইঞ্জিন বন্ধ করতেই অন্ধকার আর নীরবতা এক হয়ে মিশে গেল।
“শুধু ওরাই পথ হারায়নি আমরাও। মনে হয় না জীবনেও আর কোনোদিন এখান থেকে বের হতে পারবো না। কোথায় যে আছি সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নেই।” বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল রেনাটা।
“আমরা পথ হারাইনি, শুধু অবস্থান সম্পর্কে অবগত না এই যা।” কৌতুকের সুরে বলল কার্ট।
রেনাটা ওর দিকে তাকিয়ে থাকল এক সেকেন্ড তারপর ফেটে পড়ল হাসিতে।
“অবস্থান গতভাবে?” জো বলল।
“হ্যাঁ, সুন্দর না শব্দটা?’ কার্ট জবাব দিল।
রেনাটা ATV-টা ঢালু জায়গাটা থেকে সমতলে নামিয়ে আনলো। জো লাফ দিয়ে নামলো গাড়ি থেকে, “ঐ পাথরের ওপাশে কী আছে দেখে আসি।” কার্টও নেমে সামনের দিকে চলে এলো, “দারুণ গাড়ি চালান তো আপনি! কোত্থেকে শিখেছেন?”
“আমার বাবা শিখিয়েছেন। লাইসেন্স পাওয়ার আগেই যেসব পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে আমি গাড়ি চালিয়েছি তা যদি আপনি দেখতেন!” জবাব দিল রেনাটা।
কার্ট হাসলো, “এই ঝামেলাটা শেষ হলেই আপনার সাথে গিয়ে দেখে আসবো।” জো ততোক্ষণে পাথরের স্তূপটার ওপরে পৌঁছে গিয়েছে। ওটার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে লাইট মেরে ওপাশটা দেখছে। “দারুণ জিনিস তো”, বলল ও।
“বের হওয়ার কোনো রাস্তা পাওয়া গেল নাকি না?” কার্ট জিজ্ঞেস করল।
“সম্ভবত মোটর পুলটা খুঁজে পেয়েছি।”
কার্টের ভ্রু কুঁচকে গেল। “কি বলছে বুঝলাম না।”
“নিজেই দেখে যাও। না দেখলে জীবন বৃথা।” জো জবাব দিল।
কার্ট আর রেনাটাও স্তূপটার ওপর উঠে জোর পাশে উপুড় হয়ে শুলো। তারপর নিচে আলো ফেলতেই দেখে সেখানে নানান জাতের গাড়ি দিয়ে ভরা। সেগুলোর ওপর লম্বা লম্বা কাপড় দিয়ে ঘেরা, কোনো ছাদ নেই। আর চাকাগুলো এতো বড় যে প্রায় গাড়িরই সমান উঁচু। দুই পাশে নানান ধরনের যন্ত্রপাতি লাগানো। আর সামনের আর পেছনের দুই সিটের মাঝখানেই দুটো ভারি মেশিনগান বসানো।
“কি এগুলো হামভি (High Mobility Multipurpose Wheeled Vehicle) নাকি?” জিজ্ঞেস করল রেনাটা। | ওটার সাথে মিল কিছুটা আছে।” হামভির পূর্বপুরুষ। দেখে মনে হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পাওয়া গনীমতের মাল।” বলল জো।
সবার আগেই কাটই সামনে বাড়লো। হামাগুড়ি দিয়ে স্তূপটা পেরিয়ে গুহার অপর পাশে নেমে এলো, “দেখে আসা যাক।”
খোলা জায়গাটা প্রায় একটা বিমানের হ্যাঁঙ্গারের সমান বড়। ভেতরে সাতটা কিম্ভুত দর্শন গাড়ি। দেয়ালের জায়গায় জায়গায় সিমেন্টের পট্টি মারা। আর ছাদকে ধসে পড়া থেকে রক্ষা করার জন্য এখানে সেখানে স্টিলের খুঁটি গাড়া।
গাড়িগুলো দেখে কেমন যেন যুদ্ধংদেহী মনে হয়। বিশাল চাকা আর ঢালু চাদোয়া দেখেই বোঝা যায় যে এগুলো রাস্তা না, বরং নরম বালির ওপর দিয়ে চলার উপযোগী করে বানানো হয়েছে। বন্ধ অবস্থায়ও বোঝা যাচ্ছে যে এগুলোর গতি ভালোই। ইঞ্জিন পিছনের দিকে। সেদিকের ধাতব পাতের জায়গায় জায়গায় ছিদ্র করা, যাতে বাতাস ঢুকে এটাকে ঠাণ্ডা রাখতে পারে।
কার্ট একটা গাড়ির পাশে হাঁটু গেড়ে বসে হাত দিয়ে ঘষে এটার গায়ের ধুলো সরিয়ে ফেলল। কেমন তামাটে একটা রঙ নিচে। ঠিক মরুভূমির রঙ যেমন হয় সেরকম। আরো খানিকটা ঘষতেই ওটার নাম্বার আর একটা ছোট পতাকা দেখা গেল একপাশে। সবুজ, সাদা আর লাল, মাঝখানে একটা রুপালি ঈগল। রঙটা ইতালির পতাকার রঙ। আর মাঝখানের ঈগলটার মানে হলো যুদ্ধের পতাকা।
“গাড়িগুলো ইতালিয়ান।” কার্ট বলল।
“তাই নাকি?” অবাক হয়ে বলল রেনাটা।
“আরো একটা পতাকা চোখে পড়ল কার্টের। কালো জমিনের মাঝখানে অদ্ভুত একটা নকশা। কয়েকটা কাঠি আর তার সাথে একটা কুঠার। কুঠারের ঠিক মাথায় একটা সিংহের মাথা।
রেনাটাও ওর পাশে বসে ওটার ওপর আলো ফেলল, “ফ্যাসিবাদীদের পতাকা। মুসোলিনি ব্যবহার করতো এটা।” চিনতে পেরে বলল রেনাটা।
“ব্যক্তিগত পতাকা?” কার্ট বলল।
“না, এরা ইতালিয়ান সৈন্য বাহিনীরই একটা অংশ আর জোর কথা মতো কাজ করতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।”
“সাহারিয়ানাস, জো গাড়ির অন্যপাশ থেকে চিৎকার করে বলল।
“গেসুন্ধতি,” বলল কার্ট।
“না ওটা বাহিনীর নাম না। এই গাড়িগুলোকে এই নামে ডাকতো ওরা। লম্বা দূরত্বে সামরিক অভিযান চালানোর জন্যে ব্যবহৃত হতো এগুলো। পুরো উত্তর-আফ্রিকাতেই চলছিল এগুলো। তোবক থেকে এল আলামিন পর্যন্ত সব জায়গাতেই।” বলল জো।