জ্বী, স্যার, ভাবছি। আমরা যদি কার্গোসহ জাহাজটাকে কোন বন্দরে নিয়ে যেতে পারি, ওটার দামের অর্ধেক হবে আমাদের স্যালভেজ ক্লেইম। কোম্পানি ও কুরা ভাগ করে নিতে পারে ছয়শো মিলিয়ন ক্রোনার।
কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করলেন ক্যাপটেন কোরভোল্ড। লোভ ও অজানা একটা ভয়, দুটোর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলো। জিতল লোভই। ঠিক আছে, বোর্ডিং ক্রু বেছে নাও, সাথে যেন অ্যাসিস্ট্যান্ট এঞ্জিনিয়ার থাকে। ফানেলে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, তার মানে ওটার মেশিনারি কাজ করছে বলেই মনে হয়। একটু বিরতি নিয়ে বললেন, তবে পানি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভাল বলে মনে করি আমি।
অত সময় আমরা পাব না, চীফ অফিসার বললেন। আর একটু বেশি কাত হলে ডুবে যাবে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ক্যাপটেন কোরভোন্ড। শুভবুদ্ধির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি, তবে এ-কথাও তাঁর মনে হলো যে ডিভাইন স্টারের অবস্থা একবার প্রচার হলে হাজার মাইলের মধ্যে প্রতিটি স্যালভেজ টাগ ফুলস্পীড়ে ছুটে আসবে। অবশেষে কাঁধ ঝাঁকালেন তিনি। গিয়ে যদি দেখো যে জাহাজে কেউ নেই, এবং ওটাকে চালানো যাবে, সাথে সাথে রিপোর্ট করবে আমাকে, লাইফবোটগুলোর খোঁজে সার্চ শুরু করব আমি।
ক্যাপটেন তার কথা শেষ করেননি, তার আগেই ব্রিজ থেকে বেরিয়ে গেলেন চীফ অফিসার অসকার স্টিন। দশ মিনিটের মধ্যে বোটে লোক নামালেন তিনি। বোর্ডিং পার্টিতে নিজে তো থাকলেই চারজন সীম্যানকেও নেয়া হলো, আরও থাকল অ্যাসিস্ট্যান্ট চীফ এঞ্জিনিয়ার ওলাফ এন্ডারসন; কমিউনিকেশন অপারেটর ডেভিড সাকাগাওয়া, নারভিকয় একমাত্র সেই জাপানি ভাষা বলতে পারে। সীম্যান চারজন জাহাজটায় তল্লাশি চালাবে, ওলাফ এন্ডারসন পরীক্ষা করতে এঞ্জিনরুম। চীফ অফিসার অসকার আনুষ্ঠানিকভাবে অটো ক্রারিয়ারে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন, যদি ওটা খালি অবস্থায় পাওয়া যায়।
হেলমে থাকলেন অসকার নিজে, লঞ্চটা অশান্ত পানি কেটে এগিয়ে চলল। প্রতিবার ঢেউয়ের মাথা থেকে নামার সময় মনে হলো, এবার বুঝি তলিয়ে যাবে লঞ্জ, যদিও পরবর্তী ঢেউ এসে আবার সেটাকে তুলে নিল মাথার ওপর।
ডিভাইন স্টার থেকে একশো মিটার দূরে এসে জানতে পারল, আশপাশে ওরা একা নয়। কাত হয়ে পড়া জাহাজটাকে ঘিরে একদল হাঙর চক্কর মারছে। হিংস্র প্রাণীগুলো কিভাবে যেন বুঝতে পেরেছে জাহাজাটা ডুবে যাবে, আর ডুবে গেলে মুখরোচক কিছু খাদ্য পাওয়া গেলেও যেতে পারে।
ডিভাইন স্টারের বো একবার উঁচু, একবার নিচু হচ্ছে। অনেক কষ্টে অ্যালুমিনিয়াম এ্যাপলিং হুকসহ একটা লাইলন বোডিং ল্যাডার বোর একপাশে, রেইলিঙে আটকানো গেল, তিনবার চেষ্টা করার পর। রশির মই বেয়ে প্রথমে উঠে গেলেন চীফ অফিসার অসকার। তার পিছু নিল এন্ডারসন ও বাকি সবাই। প্রকাণ্ড অ্যাঙ্কল উইঞ্চ-এর সামনে জড়ো হল সবাই, ওদেরকে নিয়ে একটা সিঁড়ির দিকে এগোলেন অসকার, সিঁড়িটা দেখতে অনেকটা আয়ার এস্কেপ-এর মত জানালাবিহীন ফরওয়ার্ড বাঙ্কহেডের গায়ে লেগে আছে। পাঁচ ডেক ওপরে ওঠার পর বিরাট একটা ব্রিজে এসে ডুকলেন অসকার, পনেরো বছর সাগরে থাকা সত্ত্বেও এত বড় ব্রিজ আগে কখনও দেখেননি তিনি। মাঝখানে, ছোট একটা জায়গায়, এক গাদা অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট সাজানো রয়েছে।
ভেতরে কোন মানুষ নেই, তবে চার্ট, সেক্সট্যান্ট, অন্যান্য নেভিগেশনাল ইকুইপমেন্ট চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। বুঝতে অসুবিধে হয় না, খোলা কেবিনেট-এর ভেতর থেকে বের করা হয়েছে ওগুলো। একটা কাউন্টারে দুটো খোলা ব্রীফকেস পড়ে রয়েছে, ওগুলোর মালিক যেন কিছুক্ষণের জন্যে বাইরে গেছে, যে-কোন মুহূর্তে ফিরে আসবে। সবাই যে খুব আতঙ্কিত অবস্থায় পালিয়েছে, বোঝ যায়।
মেইন কনসোলটা পরীক্ষা করলেন অসকার। জাহাজটা পুরোপুরি অটোমেটেড, এন্ডারসনকে বললেন তিনি।
এঞ্জিনিয়ারের চোখে মুগ্ধ দৃষ্টি। ওয়ান্ডারফুল। ভয়েস অপারেটেড কন্ট্রোল। কোন লিবার ধরে টানা-হেঁচড়া করতে হয় না, হেলমসম্যানকে দিতে হয় না কোর্স ইট্রাকশন।
অসকার পাশে দাঁড়ানো সাকাগাওয়ার দিকে তাকালেন। এটাকে তুমি অন করতে পারবে? দেখো তো, কথা বলতে পারো কিনা।
কমপিউটরাইজড কনসোলের দিকে ঝুঁকে কয়েক সেকেন্ড নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকল সাকাগাওয়া। তারপর দ্রুত হাতে দুটো বোতামে চাপ দিল। কনসোল আলোকিত হয়ে উঠল, শোনা গেল মৃদু যান্ত্রিক গুঞ্জন। ঠোঁটে ক্ষীণ হাসি নিয়ে ভেনসমের দিকে তাকাল সে। আমার জাপানি মরচে ধরা, তবে এটার সাহায্যে কমিউনিকেট করতে পারব বলে মনে হয়।
জাহাজের স্ট্যাটাস রিপোর্ট করতে বলো।
ছোট একটা রিসিভারের দিকে মুখ নামিয়ে কথা বলল সাকাগাওয়া, তারপর প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষায় থাকল। কয়েক মুহূর্ত পর একটা পুরুষ কণ্ঠ, স্টষ্টভাবে সাড়া দিল। জবাব শেষ হতে চীফ অফিসারের দিকে তাকাল সাকাগাওয়া, চেহারায় হতভম্ব ভাব। কমপিউটর বলছে সী ককগুলো খোলা, এঞ্জিনরূপে ফ্লাড লেভেন দুমিটার ছুঁই ছুঁই করছে।
বন্ধ করার নির্দেশ দাও! কঠিন সুরে বললেন অসকার স্টিন।
অল্প কিছুক্ষণ বাক্য বিনিময়ের পর মাথা নাড়ল সাকাগাওয়া। কমপিউটর বলছে, সী কক আটকে গেছে, ইলেকট্রনিক কমান্ডের সাহায্যে ওগুলো বন্ধ করা যাবে না।