জাপানকে রক্ষা করা আমার পবিত্র দায়িত্ব, ভারী গলায় বলল সুমা।
নিজেদের রক্ষা করার জন্যে আপনারা অন্যের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলবেন, এ কেমন কথা? আপনার সঙ্গী ব্যবসায়ীদের মধ্যে নীতির কোনো বালাই নেই।
জাপানি সমাজ অন্য যে-কোনো সমাজের চেয়ে সেরা। আমাদের শক্তিকেও খাটো করে দেখবেন না। সামরিক যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক যুদ্ধের মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। যুদ্ধে আবার নীতি কী?
মনে মনে হাল ছেড়ে দিলেন রেই জর্ডান, হিদেকি সুমাকে যুক্তি দিয়ে বোঝানো তার কর্ম নয়। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালেন তিনি, বললেন, এবার আমাকে যেতে হয়।
মুখ তুলে তাকাল সুমা। এডো সিটিতে কখন ফিরছি আমি? জানতে চাইল সে।
এক মুহূর্ত তার দিকে চিন্তিতভাবে তাকিয়ে থেকে রেইমন্ড জর্ডান বললেন, কাল।
ধন্যবাদ, স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল সুমা। প্লীজ, লক্ষ রাখবেন এয়ারপোর্টে যেন আমার প্রাইভেট একটা প্লেন অপেক্ষা করে।
ঠিক আছে।
গুড ডে, মি. জর্ডান।
গড ডে, মি. সুমা। আশা করি কোনো রকম কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন।
সুমার ঠোঁট দুটো পরস্পরকে চেপে ধরল। আধবোজা চোখে রেইমন্ড জর্ডানকে দেখল সে। না, মি. জর্ডান, আপনাকে ক্ষমা করতে পারব না। এ-ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, আমাকে বন্দী করার জন্যে চড়া মূল্য দিতে হবে আপনাদেরকে। হাত নেড়ে প্রতিপক্ষকে বিদায় করে দিল সে, ন্যাপকিনে মুখ মুছে কাপে চা ঢালল।
সেফ হাউসের আরেক কামরায় অপেক্ষা করছিলেন কার্ন। রেইমন্ড জর্ডানকে ভেতরে ঢুকতে দেখে জানতে চাইলেন, কেমন হলো লাঞ্চ?
খাবারগুলো ভালই ছিল, সঙ্গীটি ছিল উন্মাদ। তোমার লাঞ্চ?
কিচেনে বসে খাবার সময় সুমার বক্তব্য শুনলাম। নাটালি আমাকে হ্যামবার্গার খাইয়েছে।
ভাগ্যবান।
সুমাকে দেখে কী মনে হলো?
ওকে বলেছি কাল ছেড়ে দেব।
শুনেছি। সুটকেস গোছানোর কথা মনে থাকবে তার?
হাসলেন রেইমন্ড জর্ডান। আজ রাতের ইন্টারোগেশন সেশনে চিন্তাটা ওর মাথা থেকে মুছে ফেলা হবে।
ধীরে ধীরে মাথা ঝাঁকালেন ডোনাল্ড কার্ন। আর কতদিন ইন্টাররোগেট করা হবে ওকে?
যতদিন না সে যা জানে আমরাও তা জানতে পারি।
তাতে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে।
লাগল।
তাকে ছিবড়ে বানাবার পর?
মানে?
চিরকাল তাকে আমরা লুকিয়ে রাখতে পারি না। আবার ছেড়ে দিয়ে যদি জাপানে চলে যেতে দিই, নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা হবে।
চেহারায় কোনো পরিবর্তন নেই, তোনান্ডের দিকে তাকিয়ে থাকলেন রেইমন্ড জর্ডান। সুমার যখন আর নতুন কিছু বলার থাকবে না, নাটালি তার নুডল সুপে কিছু একটা মেশাবে।
.
আমি দুঃখিত, মি. প্রেসিডেন্ট। আমার হাত-পা বাঁধা।
কনফারেন্স রুমে রয়েছেন ওঁরা, টেবিলের উল্টো দিকে বসা শক্ত-সমর্থ মানুষটার দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকালেন প্রেসিডেন্ট। শক্ত-সমর্থ ও বেঁটে, সফল রাজনৈতিক নেতা হলেও দেখে মনে হবে সামরিক কর্মকর্তা।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রীয় সফরে ওয়াশিংটনে এসেছেন। সফরসঙ্গী হিসেবে এসেছেন দুজন মন্ত্রী, পাঁচজন উপদেষ্টা। তার দুপাশে বসেছেন তাঁরা।
দুঃখিত আমিও, মি. প্রাইম মিনিস্টার, বললেন প্রেসিডেন্ট। তবে যদি ভেবে থাকেন গত কয়েক হপ্তার ঘটনা ধামাচাপা দেয়া সম্ভব, মারাত্মক ভুল করবেন। আপনি। ইচ্ছে করেই কুটনৈতিক ভাষা পরিহার করেছেন তিনি।
হিদেকি সুমা, ইচিরো সুবোই ও কোরোরি ইয়োশিশু যদি অন্যায় কিছু করে থাকে, সেজন্যে শুধু তারাই দায়ী। ওদের সাথে জাপান সরকার বা জনসাধারণের কোনো সম্পর্ক নেই বা ছিল না। আপনি বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের ও গভীর সাগরে নিউক্লিয়ার বোমা ফাটিয়েছে ওরা। সে রকম যদি কিছু ঘটে তাকে, আমি বলব, গোপনে নিজেদের সর্বনাশ করেছে ওরা। জাপান সরকার সে জন্যে দায়ী নয়।
মিটিংটা জটিল হয়ে উঠছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ও তার উপদেষ্টারা নিরেট পাঁচিলের ভূমিকা নিয়েছিলেন। প্রথমে তারা অভিযোগগুলোকে অবাস্তব ও বানোয়াট বলে অভিহিত করেছিলেন। আধ ঘণ্টা আলোচনার পর খানিকটা নরম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে যা ঘটেছে তার দায়-দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে নিতে রাজি নন।
আপনার সাথে একা কথা বলতে চাই আমি, বললেন প্রেসিডেন্ট। মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের বলুন তারা যেন পাশের কামরায় অপেক্ষা করেন। শুধু আপনার ইন্টারপ্রেটার থাকুক।
অনুরোধটা অনুবাদ করার পর প্রধানমন্ত্রীর চেহারা লালচে হয়ে উঠল। ব্যাপারটা তার পছন্দ হয় নি। প্রেসিডেন্ট হাসছেন, তবে তাঁর চোখে হাসি নেই। আপনার অনুরোধ আরেকবার বিবেচনা করুন, বললেন প্রধানমন্ত্রী। উপদেষ্টারা উপস্থিত থাকলে আমাদের দুপক্ষেরই সুবিধে।
দেখতেই পাচ্ছেন, ইঙ্গিতে কিডনি আকৃতির টেবিলটা দেখালেন প্রেসিডেন্ট, আমার সঙ্গে কেউ নেই।
উপদেষ্টা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে নিচু স্বরে কিছুক্ষণ আলাপ করলেন প্রধানমন্ত্রী, তারপর প্রেসিডেন্টের দিকে ফিরে বললেন, আপনার অনুরোধ স্বাভাবিক প্রোটোকল ক্ষুণ্ণ করছে। আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
অনুবাদ শোনার পর প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট কণ্ঠে জানিয়ে দিলেন, এখানে আমরা খেলা করতে বসি নি, মি. প্রাইম মিনিস্টার। হয় আপনার লোকজন কামরা থেকে বেরিয়ে যাবেন, নয়তো আমি।
ঝাড়া তিন সেকেন্ড চিন্তা করার পর প্রধানমন্ত্রী ছোট্ট করে মাথা ঝাঁকালেন। বেশ। আবার তিনি কথা বললেন উপদেষ্টাদের সঙ্গে।