আমরা সবাই আসলে ডার্কের প্রতি ঋণী।
মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে নিল লরেন। তার ধারনা ছিল, পিটের মৃত্যু সংবাদ পাবার পর পুরো দুটো দিন এতো কান্নাই কেঁদেছে যে চোখের পানি বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই, কিন্তু হঠাৎ শুধু নামটা শুনেই আবার ভিজে উঠল চোখ দুটো।
মুখের হাসি নিভে গেল স্টেসির, লরেনের দিকে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো সে। ভাবল কিছু বলবে না। কিন্তু চুপ করে থাকাও সম্ভব হলো না। নিচু স্বরে বলল, পিট আমাকে বলেছে, তোমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলে।
আমাদের সম্পর্কে উত্থান-পতন ছিল কিন্তু কখনোই একে অপরের থেকে খুব বেশি দূরে ছিলাম না।
কখনো বিয়ের জন্যে ভেবেছিলে? স্টেসি জানতে চায়।
মাথা নাড়লো লরেন। ডার্ক এমন এক মানুষ যাকে বেঁধে রাখা যায় না। সাগর ছিল ওর প্রেমিকা; আর তাছাড়া আমার ক্যারিয়ার নিয়ে আমি ভীষণ ব্যস্ত।
তুমি সত্যিই ভাগ্যবতী মেয়ে। ওর হাসিটা ছিল অসাধারণ, আর ওই সবুজ চোখ যে কোনো মেয়েকে বশ করে ফেলতে পারে। স্টেসি বলে।
হঠাৎ নার্ভাস দেখাল লরেনকে। কী যেন বলতে চায়, কিন্তু বলতে পারছে না।
কী ব্যাপার? জিজ্ঞেস করল স্টেসি।
আমাকে তোমার ক্ষমা করতে হবে। কী যে হয়েছে আমার। কিন্তু আমাকে জানতে হবে। হাতের তালু দুটো পরস্পরের সঙ্গে ঘষছে সে, ইতস্তত ভাবটা কাটিয়ে উঠতে সময় নিচ্ছে।
লরেনের চোখে সরাসরি তাকাল স্টেসি। কি জানতে চাইছে অনুমান করতে পারছি। উত্তরটা হলো, না। মিথ্যে বলছে স্টেসি। একরাতে তার ডেরায় যেতে হয়েছিল আমাকে। কিন্তু সেটা রেইমন্ড জর্ডানের নির্দেশ নিয়ে যাওয়ার জন্যে। বিশ মিনিট পর চলে আসি আমি। কখনোই কাজ ছাড়া কোনো কিছু হয় নি ওর সাথে।
জানি, অদ্ভুত লাগবে শুনতে। লরেন বলে চলে, কিন্তু আমি আর ডার্ক অনেক সময়ই অন্যান্যদের নিয়ে সময় কাটিয়েছি। সবসময় জানতাম, শেষমেষ আমার কাছেই ফিরে আসবে ও।
নিজেও জানো না, কতোটা ভালোবাসো ওকে। তাই না?
হালকা করে মাথা নেড়ে সায় দেয় লরেন। হ্যাঁ। অনেক দেরি হয়ে গেল। বুঝতে বুঝতে।
অন্য কেউ আসবে তোমার জীবনে, স্টেসি একটু তরল গলায় বলে।
জানি, কিন্তু ডার্কের মতো কেউ নয়।
ওদের ড্রিঙ্ক নিয়ে ফিরে এলো ওয়েটার। নিজের গ্লাসটা উঁচু করে ধরল স্টেসি। ডার্ক পিট– একজন অসামান্য মানুষের স্মরণে।
দুটো গ্লাস পরস্পরকে চুল।
চোখ ভরা পানি, লরেন বলল, হ্যাঁ, সত্যি একজন অসামান্য মানুষ… ছিল। ডার্ক।
.
৭৫.
মেরিল্যান্ড, শহরের বাইরে একটা সেফ হাউস। হিদেকি সুমার সঙ্গে লাঞ্চ সারছেন রেইমন্ড জর্ডান। আর কিছু করার আছে আমার, যে কদিন আছেন এখানে দিনগুলো যাতে আরো আরামে কাটে? জানতে চাইলেন তিনি।
কয়েক চামচ নুডল সুপ খেয়ে হাঁসের মাংসে কামড় বসাল হিদেকি সুমা, তাকিয়ে আছে সোনালি ক্যাভিয়ারের দিকে।
হ্যাঁ, একটা উপকার করতে পারেন, বলল সে।
বলুন, কী উপকার?
দরজায় দাঁড়ানো সিকিউরিটি গার্ড আর তার সঙ্গীর দিকে ইঙ্গিত করল হিদেকি সুমা, দ্বিতীয় লোকটা ওদেরকে পরিবেশন করছে। আপনার লোকেরা শেফ-এর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে না। তার রান্নার হাত খুব ভালো, আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানাতে চাই।
নিউ ইয়র্কের নামকরা সব জাপানি রেস্তোরাঁয় কাজ শিখেছে মেয়েটা। ওর নাম নাটালি, সরকারের বিশেষ দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু না, দুঃখিত, আপনার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
রেইমন্ড জর্ডান সুমার মুখভাব পরীক্ষা করলেন, সেখানে রাগ বা শত্রুতার চিহ্নমাত্র নেই, কড়া পাহারায় বন্দী করে রাখা হয়েছে বলে হতাশ নয় সে। যে কোনো পরিতৃপ্ত একজন মানুষের সঙ্গে বদলে নেওয়া যাবে তার চেহারা। অল্প মাত্রার ড্রাগ দেওয়া হয়েছে তাকে, চার সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বারো ঘন্টা করে ইন্টারোগেট করা হয়েছে, তবে চেহারায় তার কোন ছাপ নেই। এরকমই হবার কথা কারণ জর্ডানের এক্সপার্ট ইন্টারোগেটররা পোস্টহিপনোটিক সাজেশন দেয়ায় জেরার কথা কিছুই মনে নেই তার, জানে না নিজের অজান্তে কৌতূহলী একদল বিজ্ঞানী ও এঞ্জিনিয়ারকে যে-সব টেকনিক্যাল ডাটা দান করেছে তার দাম হবে কয়েকশো কোটি ডলার। পেশাদার চোরের মতো সিঁধ কেটে তার মাথা থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে মুল্যবান সমস্ত তথ্য।
সত্যি দুঃখ পেলাম, কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল সুমা। ভেবেছিলাম ফেরার সময় ওকে আমি সাথে করে নিয়ে যাব।
তা সম্ভব হবে না, বললেন রেইমন্ড জর্ডান। সুপ শেষ করে আবার মাংসে কামড় দিল সুমা। সাধারণ একজন ক্রিমিন্যালের মতো বেশিদিন আমাকে আপনারা আটকে রাখতে পারনে না। আমি একজন চাষা নই, যাকে নর্দমা থেকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। আর দেরি না করে আমাকে মুক্তি দিলে নিজেদেরই উপকার করবেন আপনারা।
জোরাল কোনো দাবি নয়, প্রচ্ছন্ন হুমকি। সুমা জানে না তার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতা বলতে যা ছিল সবই হারিয়েছে সে। জাপানে তার আত্মার শান্তির জন্যে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। কোরোরি ইয়োশিশু ও ইচিরো সুবোইর মৃত্যু সংবাদও শোনানো হয় নি তাকে। ড্রাগ সেন্টার যে নেই, তা-ও তাকে বলা হয় নি। তার জানা মতে, কেইটেন প্রজেক্টের গাড়ি-বোমাগুলো এখনো বিভিন্ন দেশে নিরাপদ জায়গায় লুকানো আছে।
যে অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন, ঠাণ্ডা সুরে বললেন রেইমন্ড জর্ডান, উচিত ছিল আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠন করে মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার দায়ে আপনার বিচার করা। আপনি আসলে ভাগ্যবান।