ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর জর্জ পিট এবং সুসান পিটের সন্তান ডার্ক, ক্যালিফোর্নিয়ার নিউপোর্ট বীচে জন্মগ্রহণ করেন। এয়ারফোর্সে নাম লেখান এবং বারোতম স্থান অধিকার করে গ্রাজুয়েশন করেন। পাইলট হিসেবে একটানা দশ বছর চাকরিতে ছিলেন তিনি, মেজর পদে উন্নিত হন পরে। পরবর্তীতে অ্যাডমিরাল জেমস স্যানডেকারের অনুরোধে নুমার সঙ্গে পাকাপাকিভাবে যুক্ত হয়ে পরেন।
অ্যাডমিরাল জানিয়েছেন, ডার্ক পিট ছিলেন অত্যন্ত সফল এবং গর্বিত মানুষ। তিনি তাঁর জীবনে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অ্যাডমিরাল নিজেও আছেন, আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মেক্সিকো উপকূলের একটা ঘটনা ছিলো সেটা। তার দৃষ্টিতে, ডার্ক পিটের বৈশিষ্ট্য ছিল ক্রিয়েটিভিটি। কোনো কাজকেই তিনি অসম্ভব বা কঠিন বলে মনে করতেন না।
তিনি এমন একজন মানুষ যাকে ভোলা যায় না।
পিটের হ্যাঙ্গারে রয়েছেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার, একটা প্রাচীন গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের লেখাটা পড়লেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন তিনি, পিটের জীবনে সাফল্যের পরিমাণ এতো বেশি যে এই অল্প কটা কথায় ওর জীবনী তুলে ধরার চেষ্টাটাকে অন্যায় ও অবিচার বলে মনে হয়।
তাঁর সামনে পায়চারি করছে অ্যাল, চেহারায় কোনো ভাব নেই। পিট নেই, এ আমি ভাবতে পারছি না। কথাটা শান্ত সুরে বলা হলেও, শোনাল হুমকির মতো।
কারো ধারণা ছিল না, এ-ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। অ্যাডমিরালের মনে হচ্ছে তিনি তার সন্তানকে হারিয়েছেন। আর অ্যালের মনে হচ্ছে সে তার ভাইকে।
বিগ বেন-এ ওর সাথে আমারও থাকা উচিত ছিল, আবার বলল অ্যাল।
মুখ তুলে তাকালেন অ্যাডমিরাল। তাহলে তোমারও কোনো খোঁজ পাওয়া যেত না। তুমিও মারা যেতে।
ওর সাথে আমার না থাকতে পারাটা একটা অপরাধ, নিজেকে আমি কোনোদিন ক্ষমতা করতে পারব না।
পিট সাগরে মারা গেছে। সবসময় তাই চাইতো সে সাগরে মৃত্যু।
আজ এ মুহূর্তে এখানে দাঁড়িয়ে থাকত পিট, বিগ বেন-এর ম্যানিপুলেটরে যদি কাটিং টুল-এর বদলে স্কুপ ফিট করা থাকত, আবার হুমকির মতো শোনাল অ্যালের কণ্ঠস্বর।
উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে অ্যালের দিকে তাকিয়ে ক্লান্তভাবে মাথা নাড়লেন অ্যাডমিরাল। তোমার উদ্ভট কল্পনা পিটকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।
মুখ তুলে পিটের অ্যাপার্টমেন্টের দিকে তাকালো অ্যাল। আমার মনে হচ্ছে, শুধু নাম ধরে চিৎকার করলেই হবে, সিঁড়ি বেয়ে তর তর করে নেমে আসবে পিট।
অ্যাডমিরাল স্বীকার করলেন, সে-কথা আমারও মনে হয়েছে, কেন জানি না।
হঠাৎ করে খুলে গেল অ্যাপার্টমেন্টের দরজা, মুহূর্তের জন্যে আড়ষ্ট হয়ে গেল ওরা, তারপরই ঢিল পড়ল পেশীতে। খোলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো তোশি কুদো, হাতের ট্রেতে কাপ ও টিপট। সাবলীল ভঙ্গিতে পাচানো লোহার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো সে, আল আর জেমস স্যানডেকারের দিকে যেন উড়ে এলো।
ভুরু কুঁচকে অ্যালের দিকে তাকালেন অ্যাডমিরাল আমার কাছে এটা একটা বিস্ময়, তোশিকে নিজের কাছে রাখার অনুমতি কীভাবে তুমি জর্ডানের কাছ থেকে আদায় করলে?
এর মধ্যে কোনো রহস্য নেই, নিঃশব্দে হেসে বলল অ্যাল। এ ধরনের চুক্তিকে বলা হয়, বিনিময় ব্যবসা। ওকে আমি উপহার হিসেবে পেয়েছি, বদলে কেইটন প্রজেক্ট সম্পর্কে চুপ থাকতে হবে আমাকে।
তোমার ভাগ্য ভালো যে ড্রামে ভরে নদীতে ফেলে দেয় নি।
সব কথা রিপোর্টারদের বলে দেব, এই এক লাইনের একটা হুমকি। দিয়েছিলাম। হুমকি না বলে বলা উচিত ধোকা।
রেইমন্ড জর্ডান ডামি নন, বললেন অ্যাডমিরাল। তিনি তা জানেন।
ঠিক আছে, তাহলে ধরে নিতে হবে আমার কাজে খুশি হয়ে উনি আমাকে উপহারটা দিয়েছেন।
অ্যাডমিরালের পাশে, গাড়ির বনেটে ট্রেটা নামিয়ে রাখল তোশি কুদো। চা, জেন্টেলমেন?
হ্যাঁ, ধন্যবাদ, বললেন অ্যাডমিরাল।
অ্যাল বলল, ওর গাড়িগুলো আমি নিজে দেখাশোনা করব। যততদিন বেঁচে। আছি, হ্যাঙ্গারের ভেতরটা ঠিক এরকমই থাকবে। পিট জানবে, ওর একটা উপকার করছি আমি।
তুমি এমনভাবে কথা বলছ পিটের যেন পুনর্জন্ম ঘটবে, খসখসে গলায় বললেন স্যানডেকার।
ও মরে নি, বিড়বিড় করল অ্যাল। তার মন পাথরের মতো শক্ত, তবু চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠছে।
.
ওয়াশিংটনে এটা খুব নাম করা একটা রেস্তোরাঁ। টুয়েন্টি ওয়ান ফেডারেল। ভিড়ের মধ্যে স্টেসি ফক্সকে দেখতে পেয়ে টেবিল থেকে হাত নাড়ল কংগ্রেস সদস্য লরেন স্মিথ। মাথার পিছনে চুলগুলো শক্ত করে বেঁধেছে স্টেসি, তার ওপর জড়িয়েছে একটা বড় স্কার্ফ। পরনের পোশাক আনুষ্ঠানিক বলা যাবে না প্যান্টের সঙ্গে ম্যাচ করা কাশ্মিরী টার্টলনেক সোয়েটার, নিচে গ্রে উলের শার্ট।
উলের তৈরি একটা চেক জ্যাকেট লরেনের গায়ে, ব্লাউজটা খাকি, স্কাটটাও উল। চেয়ার ছেড়ে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিল স্টেসির দিকে, শুধু স্টেসি বলেই। তুমি আসতে পারায় সত্যি আমি খুশি হয়েছি।
আন্তরিক হেসে লরেনের হাতটা ধরল স্টেসি। এখানে খাওয়ার খুব শখ ছিল আমার সুযোগ পেয়ে সত্যি আমি কৃতজ্ঞ।
তোমার জন্যে কী বলব? স্টেসি বসার পর জানতে চাইল লরেন।
বাইরে যে ঠাণ্ডা, মার্টিনি হলে মন্দ হয় না।
ওদের ওয়েটার অপেক্ষা করছিল, অর্ডার নিয়ে চলে গেল সে। ন্যাপকিন নিয়ে কোলের ওপর রাখল লরেন। ওয়েক দ্বীপে তোমাকে ধন্যবাদ জানানোর তেমন সুযোগ পাই নি আমি। সবাই আমরা খুব ব্যস্ত ছিলাম।