.
সাগর যেন পাগলা ঘোড়া হয়ে উঠেছে। রাতের আকাশে মাথাচাড়া দিল সুনামি, দ্বীপের কাছাকাছি মগ্ন চড়ায় বাধা পেয়ে আরো উঁচু হলো, প্রায় আশি ফুট। মাতাল সাগর গর্জন করছে, আওয়াজগুলো সোনিক বুম-এর মতো। এরই মধ্যে দ্বীপটার উঁচু বাঁধ ডুবে গেছে, পাহাড় চূড়ার আকৃতি পেয়ে সেটার ওপর আছড়ে পড়ল জলোচ্ছ্বাস।
সমস্ত গাছপালা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। দ্বীপের প্রতিটি দালান মিশে গেল মাটির সঙ্গে, খড়কুটোর মতো ভেসে গেল প্রবল স্রোতে। প্রকৃতির বা মানুষের তৈরি কোনো কিছুই সুনামির তুলনা রহিত শক্তিকে এক পলকের বেশি ঠেকাতে পারল না। সহস্র কোটি টন পানি পথের সামনে যা পেল সবই ধ্বংস করে দিল। দ্বীপটাকে যেন একা দানবের হাত চাপ দিয়ে আরো নামিয়ে দিল নিচের দিকে।
তারপর ধীরে ধীরে পানির নিচে তলিয়ে গেল আজিমা দ্বীপ, আর কোনোদিন মাথা তুলবে না।
মাত্র আট মিনিট হলো পানির নিচের পরমাণু বোমা, মায়ের নিঃশ্বাস বিস্ফোরিত হয়েছে। শেষ হয়ে গেছে ড্রাগন সেন্টার। কেইটেন প্রজেক্টের কোনো অস্তিত্ব নেই আর।
.
৭৩.
সোসেকি দ্বীপ নেই, ড্রাগন সেন্টার ধ্বংস হয়েছে, খবরটা শুনে ক্লান্ত হাসি হাসলেন ওঁরা।
প্রেসিডেন্ট সিচুয়েশন রুমে নেমে এলেন রেইমন্ড জর্ডান ও ডোনাল্ড কানকে অভিনন্দন জানাবার জন্যে। ভারি খুশি তিনি, সদ্য তৈরি সোনার মেডেলের মতো চকচক করছে মুখ।
তোমার লোকজন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে, বললেন তিনি, জর্ডানের হাতটা নির্মমভাবে পিষছেন। জাতি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ।
মেইট দলের কৃতিত্ব, সমস্ত প্রশংসা তাদেরই প্রাপ্য, বললেন ডোনাল্ড কার্ন। সত্যি, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ওঁরা।
সে জন্যে মূল্যও কম দিতে হয় নি, নরম সুরে বিড়বিড় করলেন রেইমন্ড জর্ডান। জিম হানামুরা, মার্ভিন শওয়াল্টার এবং ডার্ক পিট। আমি বলব, বিশেষ করে মি. ডার্ক পিটের কথা স্মরণ করে, অনেক চড়া মুল্যই দিতে হয়েছে।
ডার্ক পিটের কোনো খবর নেই? জানতে চাইলেন প্রেসিডেন্ট।
মাথা নাড়লেন ডোনাল্ড কার্ন।
তার ও বিগ বেন-এর পরিণতি সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সিসমিক ভূমিধসে চাপা পড়ে গেছে। চাপা পরে গেছে চিরকালের জন্যে।
স্যাটেলাইটও তাঁর বা বিগ বেন-এর কোনো চিহ্ন খুঁজে পায় নি?
বিস্ফোরণের পর প্রথমবার যখন স্যাটেলাইট ওদিক দিয়ে গেল, পানিতে এতো আলোড়ন ছিল যে ডীগ সী মাইনিং ভেহিকেলের কোন ছবি তুলতে পারে নি ক্যামেরা।
হয়তো পরের বার ওদিক দিয়ে যাবার সময় ছবি পাওয়া যাবে, বললেন প্রেসিডেন্ট। ডার্কের বেঁচে থাকার সামান্যতম সম্ভাবনাও যদি দেখা যায়, আমি চাই তাঁকে উদ্ধারের জন্যে ফুল-স্কেল রেসকিউ মিশন পাঠানো হোক। আমরা বেঁচে আছি এখনো, দুনিয়াটা রক্ষা পেয়েছে, সেটা তার কৃতিত্ব, কাজেই আমরা তাঁকে পিঠ দেখাতে পারি না।
এদিকটা আমি দেখব, প্রতিশ্রুতি দিলেন রেইমন্ড জর্ডান, তবে এরই মধ্যে অন্যান্য প্রজেক্ট নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেছেন তিনি।
অ্যাডমিরাল জেমস স্যানডেকারের খবর কী?
ড্রাগস সেন্টার থেকে মিসাইল ছোঁড়া হয়েছিল, পাইলট হুইল-আপ ল্যান্ডিং করতে সমর্থ হয়েছেন ওকিনাওয়ার নাহা এয়রফিল্ডে।
হতাহতের রিপোর্ট পাও নি?
কেউ নিহত বা আহত হয় নি। দু একজন সামান্য ব্যথা পেয়েছে।
সন্তুষ্টচিত্তে মাথা ঝাঁকালেন প্রেসিডেন্ট। জানা গেল কেন ওরা যোগাযোগ রাখতে পারে নি।
সেক্রেটারি অভ স্টেটস, ডগলাস ওটস্ সামনে এগিয়ে এলেন। আরো সুখবর আছে, মি, প্রেসিডেন্ট। রুশ ও ইউরোপিয়ান সার্চ টিম নিজেদের এলাকার প্রায় সবগুলো গাড়ি-বোমার হদিস বের করে ফেলেছে।
আরও ছটা গাড়ি বোমা পাওয়া গেছে। নিঃশব্দে হাসলেন জাতীয় নিরাপত্তা কমিশন ডিরেক্টর। এখন যেহেতু নিঃশ্বাস ফেলার সময় পেয়েছি, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে ধীরে সুস্থে বাকিগুলোও খুঁজে বের করা হবে।
কোরোরি ইয়োশিশু ও ইচিরো সুবোই?
ধারণা করা হচ্ছে, ডুবে গেছে তারা।
সবাইকে ধন্যবাদ, বললেন প্রেসিডেন্ট।
বিপদ কেটে গেছে, কিন্তু এরইমধ্যে অন্য আরো অনেক বিপদ মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। সেদিন বিকেলেই জানা গেল, তুরস্ক ও ইরানের মধ্যে তুমুল গোলাগুলি বিনিময় হয়েছে। এক ঘণ্টা পর রিপোর্ট এলো, একটা মার্কিন কমাসিয়াল এয়াররাইনকে গুলি করে নামিয়েছে কিউবার একটা মিগ-টোয়েনটিফাইভ।
নানা ঝামেলা ও ব্যস্ততার মধ্যে একজন লোককে খুঁজে বের করার পরিকল্পনা ধামাচাপা পড়ে গেল। স্যাটেলাইটের ইমেজ টেকনলজি তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপুর্ণ ছবি তুলতে ব্যস্ত। জাপান সাগরের দিকে আসতে আরো প্রায় চার সপ্তাহ সময় লাগল পিরামিডার স্যাটেলাইটের।
তবে বিগ বেন-এর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না।
.
পঞ্চম পর্ব
শোক সংবাদ
১৯ নভেম্বর, ১৯৯৩ দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট
৭৪.
নুমা অর্থাৎ ন্যাশনাল আন্ডার ওয়াটার অ্যান্ড মেরিন এজেন্সির হেডঅফিস থেকে আজ ঘোষণা করা হয়েছে ডার্ক পিট, স্পেশাল প্রজেক্ট ডিরেক্টর, জাপান সাগরে নিখোঁজ হয়েছেন। ধারণা করা হয়েছে, একটা দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনি।
তিনি একজন দুঃসাহসিক অভিযাত্রী ছিলেন। বিশেষ করে সাগরের তলা থেকে প্রাচীন জাহাজ উদ্ধারে অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দেন তিনি। গুপ্তধন আবিষ্কারে তার সাফল্যও বিস্ময়কর। তিনি সেরাপিস নামে প্রি-কলাম্বিয়ান বাইজেন্টিন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন গ্রীনল্যান্ড থেকে; আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের অবশিষ্টাংশও উদ্ধার করেন তিনি। এছাড়াও, কিউবার লা ডোরান্ডা গুপ্তধন, এবং টাইটানিক জাহাজ উত্তোলনের পেছনেও তার অবদান ছিল।