ম্যানিপুলেটরের বাহু নিচু করে বোমাটাকে নরম পলিতে নামাল পিট, রিলিজ করল গ্রিপার। ম্যানিপুলেটরের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিল, শিট-মেটাল দিয়ে তৈরি কঁটি দিয়ে বোমার টেইল প্যানেল কাটতে হবে, মেইন ফিউজিং কমপার্টমেন্টটাকে ঢেকে রেখেছে ওটা।
ভেতরে রয়েছে চারটে রাডার ইউনিট ও একটা ব্যারোমেট্রিক প্রেশার সুইচ। বোমাটা যদি পরিকল্পনা অনুসারে ফেলা হতো, গ্রাউন্ড টার্গেট এগিয়ে আসছে দেখলে প্রতি সঙ্কেত পাঠাতে রাডারগুলো। তারপর, আগেই নির্ধারিত নির্দিষ্ট অলটিচ্যুডে পৌঁছে, রাডারের দুটো ইউনিট ফিউজিং সিস্টেমকে ফায়ারিং সঙ্কেত পাঠাতো। ব্যারোমেট্রিক সুইচটা হলো দ্বিতীয় আর্মিং সিস্টেম, ওটাও নির্দিষ্ট অলটিচ্যুডে ফায়ারিং সার্কিট বন্ধ করার জন্যে সেট করা আছে।
তবে প্লেন সচল থাকা অবস্থায় ফায়ারিং সিগন্যাল সার্কিটগুলো বন্ধ করা যাবে না। ওগুলো বন্ধ করতে হবে। ক্লক-অপারেটেড সুইচ ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু সুইচগুলোর নাগাল পেতে হলে বম্ব-বে থেকে বোমাটাকে যথেষ্ট দূরে সরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে কেউ ফাটাবার আগেই ফেটে যাবে বোমাটা।
প্যানেল সরাবার পর বাম দিকের ম্যানিপুলেটরের শেষ মাথায় একটা মিনিয়েচার ভিডিও ক্যামেরা বসাল পিট। ব্যারোমেট্রিক আর্মিং সুইচ খুঁজে নিয়ে দ্রুত ওটার ওপর ফোকাস করল। পিতল, তামা ও ইস্পাত দিয়ে তৈরি খানিকটা মরচে ধরলেও এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। এরপর ম্যানিপুলেটরের অপর বাহুতে সরু একটা সাড়াশি জোড়া লাগালো ও, সাঁড়াশিটা একটা হাতের মতো, ভাজ হয়ে ফিরে এসেছে বিগ বেন-এর সামনের দিকে। ভারী টুল বক্স থেকে অদ্ভুত দর্শন একটা সিরামিক বস্তু তুলে নিল হাতটা, বাতাসবিহীন ছোট ফুটবলের মতো দেখতে। চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই জিনিসটা কি। ওটা আসলে প্রেশারাইজড কন্টেইনার, ভেতরে আছে পুটিং-এর মতো দেখতে মিশ্র পদার্থ, প্লাস্টিক ও অ্যানিড দিয়ে তৈরি। ব্যারোমেট্রিক ফায়ারিং সুইচে নিখুঁতভাবে ফিট করবে সেরামিক কন্টেইনার। ফলে ওটা একটা ওয়াটার টাইট সীর-এর পরিণত হবে।
ম্যানিপুলেটরের হাত সচল করল পিট, সুইচের চারধারে কন্টেইনারটা আটকাল, তারপর সাবধানে খুলে নিল একটা পাগ। এবার ধীরে ধীরে পানি চুঁইয়ে ভেতরে ঢুকলে কন্টেইনারে। লবণ পানির সংস্পর্শে ভেতরের নিষ্ক্রিয় কমপাউন্ড সক্রিয় হয়ে উঠবে, হয়ে উঠবে জোরালো ক্ষার। তামার প্লেট খেয়ে ফেলার পর ব্যারোমেট্রিক সুইচের তামার ওপর হামলা চালাবে অ্যাসিড কম্পাউন্ড, ফলে এক সময় একটা, ইলেকট্রিক্যাল চার্জ তৈরি হবে। ওই ইলেকট্রিক্যাল চার্জই ফায়ারিং সিগন্যাল পাঠাতে ও বোমাটা বিস্ফোরণ ঘটাতে সাহায্য করবে। তামার প্লেট এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, অ্যাসিড কম্পাউন্ড ওটাকে এক ঘণ্টার আগে খেয়ে ফেলতে পারবে না।
ম্যানিপুলেটরের বাহুগুলো সরিয়ে আনল পিট। ধীরে ধীরে পিছিয়ে আনছে বিগ বেনকে। কাদার ওপর ভীতিকর ও ভৌতিক একটা আকৃতি নিয়ে পড়ে রয়েছে। বোমাটা। চট করে একবার ইনস্টমেন্ট কনসোলে তাকাল ও, ডিজিটাল ঘডিতে সময় দেখল।
শুরু হলো প্রাণ বাঁচানোর প্রতিযোগিতা। ফাটতে সাতচল্লিশ বছর দেরি করলেও, এবার নির্দিষ্ট একটা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, বোমাটাকে আজ ফাটতেই হবে।
.
কোনো খবর পেলে? ওভাল অফিস থেকে উদ্বিগ্ন প্রেসিডেন্ট জানতে চাইলেন।
যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে। কেন, তার কোনো ব্যাখ্যা পাই নি, সিচুয়েশন রূম থেকে ডরিপোর্ট করলেন রেইমন্ড জর্ডান।
অ্যাডমিরাল স্যানডেকারকে তুমি হারিয়েছে?
সে রকমই ভয় করছি, মি. প্রেসিডেন্ট। সম্ভাব সব রকম চেষ্টা করেও তার প্লেনের সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি আমরা।
এক মুহূর্ত কথা বললেন না প্রেসিডেন্ট। আশঙ্কায় অস্থির মনটাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। কোথায় কী ভুল হলো?
আমরা শুধু অনুমান করতে পারি। সর্বশেষে স্যাটেলাইট রিপোর্ট হলো, বিগ বেন-এর সাথে যোগাযোগ কেটে দিয়ে ওকিনাওয়া দ্বীপের দিকে যাচ্ছে সি-ফাইভ।
এর কোনো অর্থ হয় না। ডেনিংস ডেমনস থেকে বোমাটা নামিয়ে আনতে সফল হয়েছে ডার্ক পিট, এরপর কেন ওকে ত্যাগ করবেন অ্যাডমিরাল?
ত্যাগ করার তো করা নয়, যদি না ডার্ক পিট গুরুতর কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে। এমন হতে পারে অ্যাডমিরাল নিশ্চিতভাবে বুঝেছেন যে বোমাটা ফাটানো ওর দ্বারা সম্ভব নয়।
তার মানে সব শেষ হয়ে গেল, হতাশ গলায় বললেন প্রেসিডেন্ট।
এক সেকেন্ড দেরি করে, ভারী গলায় জবাব দিলেন রেইমন্ড জর্ডান, অ্যাডমিরাল আবার যোগাযোগ না করা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।
গাড়ি-বোমাগুলোর শেষ খবর?
আরো তিনটে গাড়ি-বোমা নিউট্রালাইজ করেছে এফবিআই টাস্ক ফোর্স, সবগুলোই মেট্রোপলিটান শহরে।
ড্রাইভাররা?
সবাই তারা সুমা ও ড্রাগনের অন্ধভক্ত, স্বেচ্ছায় প্রাণ দিতে রাজি অথচ গ্রেফতার হবার সময় কেউ তারা বাধা দেয় নি বা গাড়ি-বোমা ফাটিয়ে দেয়ার কোনো চেষ্টা করে নি।
এতোটা নিরীহ সাজার কারণ?
ওদের ওপর নির্দেশ আছে, ড্রাগন সেন্টার থেকে কোডেড সিগন্যাল পাবার। পরই শুধু বোমাগুলো ফাটাবে ওরা।
আমাদের শহরগুলোয় আর কটা গাড়ি-বোমা লুকানো আছে?
উত্তেজনাকর বিরতি, তারপর ধীরে ধীরে রেইমন্ড জর্ডান বললেন, অনেক, দশটার কম নয়।