রাগে থরথর করে কাঁপছে ইচিরো সুবোই, টকটকে লাল হয়ে উঠছে চেহারা। এখুনি আমি ওদের প্রেসিডেন্টের সাথে যোগাযোগ করব, বলব আমাদের পানি থেকে ওটাকে সরিয়ে নিতে হবে।
না, আমার কাছে আরো ভালো একটা বুদ্ধি আছে, বললেন কোরোরি ইয়োশিশু। এমন একটা মেসেজ পাঠাব, প্রেসিডেন্ট সেটার মর্ম অনায়াসে উপলব্ধি করতে পারবেন।
কী বুদ্ধি? জানতে চাইল ইচিরো সুবোই।
সহজ বুদ্ধি, কোরোরি ইয়োশিশু জবাব দিলেন। প্লেনটাকে আমরা উড়িয়ে দেব।
.
ছ মিনিটের মাথায় এক জোড়া ইনফ্রায়েরড সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সি-ফাইভের দিকে ছুটলো, প্লেনের আরোহীরা কিছুই জানলো না, কারণ অ্যাটাক ওয়ার্নিং সিস্টেম বলে কিছু নেই ওটায়। আগের মতোই বিগ বেন-এর গতিবিধি মনিটর করছে ওরা চক্কর দিচ্ছে আকাশে।
হোয়াইট হাউসে স্ট্যাটাস রিপোর্ট পাঠানোর জন্যে কমিউনিকেশন কমপার্টমেন্টে ঢুকলেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। অ্যাল ওদের অফিসে রয়েছে, ডেস্কের পিছনে দাঁড়িয়ে মেরিন জিওলজিস্টের রিপোর্টে চোখ বুলাচ্ছে সে, রিপোর্টে দেখানো হয়েছে কোন পথে আন্ডারসী ট্রেঞ্চ পেরিয়ে নিরাপদ জাপানি উপকূলে পৌঁছুবে পিট। দূরত্বটা মাপার চেষ্টা করছে অ্যাল, এ সময় প্রথম মিসাইলটা আঘাত হানল। শক ও প্রেসার ওয়েভ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল তাকে ডেকে! হতভম্ব অ্যাল কয়েক সেকেন্ড স্থির পড়ে থাকল, তারপর কনুইয়ে ভর দিয়ে ওঠার চেষ্টা করল, এ সময় আঘাত হানল দ্বিতীয় মিসাইল। লোয়ার কার্গো হোড চুরমার হয়ে গেল, ফিউজিলাজে তৈরি হলো বিরাট একটা গর্ত।
সমাপ্তটা হত দ্রুত ও দর্শনীয়, কিন্তু প্রথম মিসাইলটা সঙ্গে সঙ্গে ফাটে নি প্লেনের ওপরের কোমর পেরিয়ে একজোড়া বাল্কহেডের মাঝখান দিয়ে ছুটে গেল সেটা, উল্টোদিকের এয়ারফ্রেমের পাঁচরে লেগে বিস্ফোরিত হলো। বিস্ফোরণের বেশির ভাগ ধাক্কা লাগল রাতের বাতাসে, ফলে ছিন্নভিন্ন হওয়া থেকে রক্ষা পেল প্লেন।
ধাক্কাটা সামলে ওঠার চেষ্টা করছে অ্যাল, ভাবছে প্লেনটা যে-কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরিত হবে অথবা ঝাঁপ দেবে সাগরে। পর পর দুটো মিসাইলের আঘাত খেযে বাতাসে ভেসে থাকা সম্ভব নয়। তবে ওর হিসেবে ভুল হয়েছে। প্রকাণ্ড গ্যালাক্সি সহজে বরণ করবে না মৃত্যুকে। প্লেনটায় এখনো আগুন লাগে নি, আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাত্র একটা ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম। বড় একটা গর্ত তৈরি হওয়া সত্ত্বেও দিব্যি ভেসে থাকল বাতাসে।
পঙ্গু প্লেনটাকে নিয়ে ডাইভ দিল পাইলট। সাগর যখন আর মাত্র ত্রিশ মিটার নিচে, প্লেন সিধে করল সে, সোসেকি দ্বীপকে পেছনে রেখে দক্ষিণ দিকের কোর্স ধরল। এঞ্জিনগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে, তবে গর্ত দিয়ে বাতাস ঢোকায় থরথর করে কাঁপছে প্লেনের গোটা কাঠামো।
ফ্লাইট এঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে সামনের দিকে এগোলেন অ্যাডমিরাল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্যে। কার্গো বে-তে দেখতে পেলেন অ্যালকে, হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে, হাঁ করে তাকিয়ে আছে গর্তটার দিকে।
নিচে লাফ দিলে নির্ঘাত মারা যাব, বাতাসের গর্জনকে ছাপিয়ে উঠল তার কণ্ঠস্বর।
আমারও লাফ দেয়ার কোনো ইচ্ছে নেই, পাল্টা চিৎকার করলেন স্যানডেকার।
ক্ষয়ক্ষতি দেখে বিস্ফোরিত হয়ে গেল ফ্লাইট এঞ্জিনিয়ারের চোখ। মাই গড! কী ঘটল কী!
এক জোড়া গ্রাউন্ড-টু-এয়ার মিসাইল চুমো খেয়েছে, জবাব দিল অ্যাল।
হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে এলো সে, অ্যাডমিরাল কে নিয়ে ককপিটের দিকে এগোল। প্লেনের নিচের পেটে কী ক্ষতি হয়েছে দেখার জন্যে চলে গেল ফ্লাইট এঞ্জিনিয়ার।
ক্যাপটেন সম্পূর্ণ শান্ত, গভীর মনোযোগ দিয়ে কন্ট্রোল সামলাতে ব্যস্ত। ককপিটের মেঝেতে নেতিয়ে পড়ল অ্যাল, বেঁচে আছে বলে ভাগ্যের প্রতি কৃতজ্ঞ। প্লেনটা এখনো উড়ছে, এ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল সে। ডিজাইনারকে চুমো খাবার কথা মনে করিয়ে দেবেন।
দুই পাইলটের মাঝখানে মাথা গলিয়ে দিয়ে কনসোলের দিকে তাকালেন জেমস হ্যামলটন, ক্ষয়ক্ষতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়ার পর জানতে চাইলেন, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু?
ইলেকট্রিকাল ও খানিকটা হাইড্রোলিক পাওয়ার এখনো আছে আমাদের, চীফ পাইলট জবাব দিল। তবে মেইন ফুয়েল ট্যাংক থেকে বেরিয়ে আসা লাইন বোধহয় কেটে গেছে। মিনিট দুই আগে গজের কাঁটা নেমে এসেছে।
মিসাইল রেঞ্জের বাইরে থাকলাম, তবে এলাকা ছেড়ে নড়লাম না, সম্ভব?
অসম্ভব।
আমি যদি অসম্ভবকে সম্ভব করার নির্দেশ দিই? কঠিন সুরে বললেন অ্যাডমিরাল।
মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল পাইলট। আপনার অসম্মান করছি না, অ্যাডমিরাল, তবে জেনে রাখুন যে-কোনো মুহূর্তে আমাদের এই প্লেন টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। আপনার যদি মরার ইচ্ছে জাগে, সেটা আপনার ব্যাপার। তবে আমার দায়িত্ব প্লেন ও আরোহীদের রক্ষা করা। আপনি একজন পেশাদার নৌ-অফিসার, কাজেই আমি কি বলছি আশা করি আপনি তা বুঝতে পারছেন।
আপনার প্রতি আমার সহানুভূতি আছে, তবে নির্দেশটা বহাল থাকল।
প্লেনটা যদি ভেঙে না পড়ে, আর যদি ফুয়েলে কুলায়, চীফ পাইলট বলল, তাহলে আমরা হয়তো ওকিনাওয়ার নাহা এয়ারফিল্ডে পৌঁছুতে পারব। ওটাই সবচেয়ে কাছের বড় একটা রানওয়ে।
ওকিনাওয়া বাদ, তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললেন অ্যাডমিরাল। দ্বীপটার ডিফেন্স সিস্টেম থেকে নিরাপদ দূরে থাকব আমরা, থাকব আমার প্রজেক্ট ডিরেক্টর ডার্ক পিটের অবস্থা জানার জন্যে কমিউনিকেশন রেঞ্জের ভেতর। গোটা দুনিয়াকে রক্ষা করার জন্যে কাজ করছে ও, ওকে আমরা একা ফেলে চলে যেতে পারি না। যতক্ষণ পারেন আকাশে ভাসিয়ে রাখুন আপনি আমাদের। অবস্থা যদি আরো খারাপের দিকে যায়, প্লেনটাকে সাগরে নামিয়ে দেবেন।