জানি, বলল পিট। সে জন্যেই তো জিঞ্জির ও ব্রাকেট কাটার পর ওটাকে তুলব ভেবেছি।
একটু অপেক্ষা করো, বললেন অ্যাডমিরাল। আমি চেক করে দেখে বলছি তোমাকে।
ঠিক আছে।, পাট মিনিট পর অ্যাডমিরাল আবার যোগাযোগ করলেন, পিট?
বলুন।
বোমাটাকে খসে পড়তে দাও।
আবার বলুন।
জিঞ্জির ও ব্রাকেট কাটো, বোমাটা নিচে পড়ে যাক। বড় ধরনের ধাক্কা হজম করার ক্ষমতা আছে ওটার।
ডকুমেন্টারি ফিল্মে দেখা অ্যাটম বোমা বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়া ভেসে উঠল পিটের চোখের সামনে। ওর মাত্র কয়েক ফুট দূরে সে ধরনের একটা বোমা রয়েছে। ওটা যদি জিঞ্জির মুক্ত হয়ে নিচে পড়ে, তারপর ফেটে যায়?
লাইনে আছ তুমি, পিট? জানতে চাইলেন অ্যাডমিরাল, গলার আওয়াজে চাপা উত্তেজনা।
যা বলছেন তা কি ফ্যাক্ট, নাকি গুজব?
হিস্টোরিক্যাল ফ্যাক্ট।
বোমাটা যদি ফাটে, আমার আজকের দিনটাই মাটি হবে, কৌতুক করল পিট। তারপর বড় করে শ্বাস নিল, ছাড়ল, বন্ধ করল চোখ, সবিশেষে কাটিং ডিস্কটাকে জিঞ্জির কাটার কাজে লাগিয়ে দিল। এতো বছর পানির তলায় থাকায় শিকলে মরচে ধরে গেছে, বিচ্ছিন্ন হতে বেশি সময় নিল না। প্রকাণ্ড বোমাটাবন্ধ বম্ব বে-র দরজার ওপর পড়ল। বিস্ফোরণ ঘটলো শুধু কাদায়।
নিঃসঙ্গ কয়েকটা মুহূর্ত কেটে গেল। বোধহীন, অসাড় লাগছে নিজেকে পিটের। গোলা পানি ধীরে ধীরে স্বচ্ছ হলো আবার, আবার দেখা গেল বোমাটাকে।
আমি তো কোনো বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনলাম না, অদ্ভুত শান্ত গলায় বললেন অ্যাডমিরাল।
পাবেন, বলল পিট, দ্রুত সামলে নিচ্ছে নিজেকে। অবশ্যই শুনতে পাবেন।
৭০. বিস্ফোরণ ঘটতে বাকি
৭০.
সবার মনেই কি হয় না হয় ভাব। বিস্ফোরণ ঘটতে বাকি আছে আর প্রায় দুঘণ্টা, ম্যানিপুলেটলের লম্বা বাহুতে অ্যাটম বোমটাকে আটকে নিয়ে সাগরের মেঝে ধরে এগিয়ে চলেছে বিগ বেন। যতোই ঘনিয়ে আসছে সময় সি-ফাইভ গ্যালাক্সি ও হোয়াইট হাউসের ভেতর উত্তেজনায় ধনুকের ছিলার মতো টান টান হয়ে উঠছে পরিবেশ।
শিডিউলের চেয়ে আঠারো মিনিট এগিয়ে আছে ও, নরম সুরে বলল অ্যাল। এখনও কোন বিপদে পড়ে নি।
মনে মনে ওর জন্যে প্রার্থনা করো, নির্দেশ দিলেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। গভীর সাগরের তলায় কয়েক লক্ষ মানুষের প্রাণ একা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে কাঁধে করে। যে-কোন মুহূর্তে ছাই হয়ে যেতে পারে ও, মৃত্যু মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার দূরে।
ওর সাথে থাকা উচিত ছিল আমার, তিক্ত কণ্ঠে বলল অ্যাল।
সবাই আমরা জানি, চিন্তাটা তোমার মাথায় প্রথম এল। তুমিও ওকে আটকে রেখে একা যেতে চেষ্টা করতে।
হয়তো, বিড়বিড় করল অ্যাল। কি জানি, অত সাহস আমার আছে কিনা। তবে পিট সাথে থাকলে মৃত্যুকে আমি পরোয়া করি না।
চার্টের দিকে তাকালেন অ্যাডমিরাল। লাল একটা রেখা চলে গেছে বি টোয়েনটিনাইনের দিকে, সেখান থেকে ডিটোনেশন সাইটে পিটের কোর্স। দায়িত্ব নিয়ে আজ পর্যন্ত পিট আমাদেরকে কখনো হতাশ করে নি। কাজটা ঠিকই করবে ও, প্রাণ নিয়ে ফিরেও আসবে। মৃত্যুকে ফাঁকি দেওয়া অভ্যেস হয়ে গেছে ওর।
.
মাসুজি কোয়োমা, ডিফেন্স ডিটেকশন সম্পর্কে সুমার এক্সপার্ট টেকনিশিয়ান, সার্ভেইল্যান্স রাডার ডিসপ্লে অপারেটরের পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, হাত তুলে একটা টার্গেট দেখালো তার চারপাশে দাঁড়ানো দলটাকে। দলে রয়েছে কোরোরি ইয়োশিশু, ইচিরো সুবোই ও তাকেদা কোরোজিমা।
অত্যন্ত বড় আকারের আমেরিকান এয়ার ফোর্স ট্রান্সপোর্ট ওটা, ব্যাখ্যা করল সে। সি-ফাইভ গ্যালাক্সি, বিরাট ভার নিয়ে অনেক দূরে যেতে পারে।
তুমি বলছ প্লেনটা অদ্ভুত আচরণ করছে? জানতে চাইল ইচিরো সুবোই।
মাথা ঝাঁকাল মাসুজি কোয়োমা। আমরা লক্ষ রাখছিলাম, হঠাৎ দেখি কি একটা জিনিস খসে পড়ল প্লেনটা থেকে।
কী হতে পারে জিনিসটা?
মাথা নাড়ল মাসুজি কোয়োমা। শুধু এটুকু বলতে পারি, জিনিসটা ধীর ধীরে পড়েছে, যেন একটা প্যারাসুট ছিল।
আন্ডারওয়াটার সেনসিং ডিভাইস হতে পারে? কেদা কোরোজিমা জিজ্ঞেস করল।
হতে পারে, তবে সোনিক সেনসরের তুলনায় জিনিসটা অনেক বড় ছিল।
অদ্ভুত ব্যাপার, মন্তব্য করল ইচিরো সুবোই।
তারপর থেকে, বলল মাসুজি কোয়োমা, এলাকায় চক্কর মারছে প্লেনটা।
ঝট করে তার দিকে তাকাল ইচিরো সুবোই। কতক্ষণ হলো?
প্রায় চার ঘণ্টা।
ভয়েস ট্রান্সমিশন শোনার চেষ্টা করেছ?
সংক্ষিপ্ত কিছু সিগন্যাল পেয়েছি, তবে ইলেকট্রনিক্যাল শব্দজট বাধা দেয়ার অর্থ উদ্ধার করতে পারি নি।
স্পটার প্লেন! হঠাৎ একটা ঝাঁকি খেল মাসুজি কোয়োমা।
স্পটার প্লেন মানে? ভুরু দুটো কুঁচকে আছে ইচিরো সুবোইর।
সফিসটিকেটেড ডিটেকশন ও কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট আছে প্লেনটায়, ব্যাখ্যা করল মাসুজি কোয়োমা। সামরিক অভিযান চালাবার সময় কমান্ড স্টোপর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ওদের প্রেসিডেন্ট এক নম্বর মিথ্যেবাদী। হিস হিস করে বলল ইচিরো সুবোই। আমাকে ধোঁকা দিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, সোসেকি দ্বীপে হামলা চালাবার পাঁয়তারা কষছেন উনি।
কিন্তু এতোটা প্রকাশ্যে কেন? জানতে চাইলেন কোরোরি ইয়োশিশু। ওই রেঞ্জে টার্গেট ডিটেক্ট করার যোগ্যতা আমরা রাখি, এ তথ্য মার্কিন ইন্টেলিজেন্স জানে।
রাডার ডিসপ্লেতে প্লেটাকে দেখছে কোয়োমা। ওরা কি ইলেকট্রনিক্যালি আমাদের ডিফেন্স ধ্বংস করতে চায়?