আমি শুনছি, বললেন প্রেসিডেন্ট, গলার স্বরে চাপা উত্তেজনা।
জাপানী মালিকানাধীন কোনো কোম্পানি আপনারা জাতীয়করণ করতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় কোনো রকম বাধা দেওয়া যাবে না।
কোনো বিদেশি কোম্পানি জাতীয়করণ করা হচ্ছে না। রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও অবাধে চলছে, কোন রকম বাধা দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।
আপনি ঘোষণা করবেন, যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার সময় জাপানিদের পাসপোর্ট লাগবে না।
এ ব্যাপারে কংগ্রেসের সাথে লড়তে হবে আপনাদের।
ঠাণ্ডা সুরে বলে চলছে ইচিরো সুবোই, জাপানি পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা যাবে না, শুল্ক বাড়ানোর যাবে না।
আর আপনারা?
আমরা কী করব সেটা আমাদের ব্যাপার, বলল ইচিরো। এ ব্যাপারে আপনাদের সাথে আমরা কোনো আলোচনায় বসব না। যথেষ্ট সঙ্গত কারণেই আপনাদের পণ্য জাপানিরা পছন্দ করে না।
বলে যান, নির্দেশ দিলেন প্রেসিডেন্ট।
হাওয়াই রাজ্য জাপানের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।
প্রেসিডেন্টকে আগেই সাবধান করা হয়েছে, এ ধরনের দাবি করা হতে পারে। আপনি একটা পাগল।
শুধু হাওয়াই নয়, ক্যালিফোর্নিয়াও।
মৃদু হাসলেন প্রেসিডেন্ট। নিজেকে আপনি বোকা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন কেন বুঝলাম না।
যেহেতু আমাদের টাকায় আপনাদের অর্থনীতি চাঙা রয়েছে, তাই মন্ত্রিপরিষদের আমাদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে স্টেট, ট্রেজারি ও কমার্স ডিপার্টমেন্টে।
প্রতিনিধি নির্বাচন করবে কে? আপনি, কোরোরি ইয়োশিশু, নাকি জাপান সরকার?
মি. কোরারি ও আমি।
আপনার দাবি বা প্রস্তাব হজম করতে খানিকটা সময় দিন আমাকে, বলে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন প্রেসিডেন্ট। তারপর বললেন, না, বড় বেশি গুরুপাক। দুঃখিত, মি. ইচিরো। জাতি হিসেবে আমরা কারো কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারি না। আপনার দাবি মেনে নিলে আমেরিকানরা হবে ক্রীতদাস। এ ধরনের অন্যায় ও উদ্ভট দাবি মেনে নেয়ার জন্যে ভোট দিয়ে আমাকে প্রেসিডেন্ট বানানো হয় নি।
ঊনিশশো পঁয়তাল্লিশে আপনারা যে সব শর্ত দিয়েছিলেন আমাদেরকে, সেগুলোর তুলনায় আমাদের দাবি অনেক নরম। তবে মানা না মানা আপনার ব্যাপার। আজ বিকেল তিনটে পর্যন্ত সময় হয়ে হলো আপনাকে। উপদেষ্টা ও কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করুন। ওদেরকে জানান, আলোচনার মুহূর্তে ওয়াশিংটনের জনবহুল এলাকায় দুটো গাড়ি বোমা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কথাও শেষ হলো, সেই সঙ্গে স্ক্রীন থেকে মুছে গেল ইচিরো সুবোইর ছবি।
দেয়াল-ঘড়ির দিকে তাকালেন প্রেসিডেন্ট। নটা বাজে। বাকি আছে আর ছঘণ্টা। ঠিক ছঘণ্টা পর ডার্ক পিটও পুরানো অ্যাটম বোমাটা ফাটিয়ে সাগরের তলায় একটা সুনামি ঘটাবে।
হায় ঈশ্বর, খালি কামরার ভেতর আপন মনে বিড়বিড় করলেন তিনি। পিট যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে কী হবে?
.
৬৯.
উনসত্তর ঘণ্টায় পনেরো কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে বিগ বেন, পেছনে মাথাচাড়া দিচ্ছে কাদার বিশাল একটা মেঘ। ভিউয়িং স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আছে পিট, লেয়ার সোনার ইউনিটের সঙ্গে সংযুক্ত ওটা। সাগরের তলায় মরুভূমিতে রয়েছে ও, তেমন কোনো বিস্ময় ওর জন্যে অপেক্ষা করছে না।
সাতচল্লিশ মিনিট পর বি-টোয়েনটিনাইনের কাঠামোটা দেখতে পেল পিট। ধীরে ধীরে আকারে বড় হলো ওটা, এক সময় পুরো মনিটর দখল করে ফেলল। বিগ বেন-এর গতি কমিয়ে ভাঙাচোরা প্লেনটাকে ঘিরে চক্কর দিতে শুরু করল ও। ডেনিংস ডেমনস এক মিটারের কিছু বেশি কাদায় ডুবে আছে। একটা এঞ্জিন নিখোঁজ, মোচড় খেয়ে পেছন দিকে ভাজ খেয়ে রয়েছে স্টারবোর্ড উইং। তিনটে অবশিষ্ট প্রপেলারের বেড়গুলো ও ভাঁজ খেয়ে গেছে।
তিনতলা উঁচু টেইল সেকশনে শেল ফায়ারের চিহ্ন দেখা গেল। গানারস ডুবিয়ে দিয়েছে কাদায়। ত্রিশ মিটার লম্বা অ্যালুমিনিয়াম ফিউজিলাজে শ্যাওলা ও কাদা জমেছে, তবে বো কে ঘিরে থাকা জানালার কাঁচ এখনো পরিষ্কার।
টার্গেট দেখতে পাচ্ছি, সি-ফাইভে খবর পাঠাল পিট।
কী অবস্থা ওটার? সঙ্গে সঙ্গে জানতে চাইলেন জেমস স্যানডেকার।
একটা ডানার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। টেইল সেকশনও ভেঙে গেছে। তবে ফিউজিলাজ অক্ষত।
বোমাটা আছে ফরওয়ার্ড বম্ব বে-তে। বিগ বেন-কে এমন পজিশনে নিয়ে যেতে হবে, তুমি যাতে প্লেনের ছাদ কেটে ভেতরে ঢুকতে পারো।
ভাগ্য আজ লক্ষ্মী মেয়ে, বলল পিট। স্টারবোর্ড উইং ভেঙে যাওয়ায় পজিশন নেওয়ার জায়গা পাব। পাশ থেকে বাল্কহেড কাটব।
বিগ বেন-এর মেটাল কাটিং মেশিনকে কাজে লাগালো পিট। মেশিনটার একটা বাহুর সঙ্গে ক্যামেরা আছে, কি কাটা হচ্ছে না হচ্ছে সবই পিট দূর থেকে স্ক্রীনে দেখতে পারবে। মেশিনটার ধারালো হুইলগুলো যান্ত্রিক গুঞ্জন তুলে ঘুরতে শুরু করল, এয়ারফ্রেমের অ্যালুমিনিয়াম কাটা চলছে।
চার মিটার লম্বা, তিন মিটার চওড়া হলো ফাঁকটা। ভেতরে বোমাটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। একটা বড় জিঞ্জিরের সঙ্গে ঝুলছে। বোমাটা নয় ফুট লম্বা, ডায়ামিটারে পাঁচ ফুট। ওটা আনতে যাচ্ছি, রিপোর্ট করল পিট।
তুলে আনতে দুটো ম্যানিপুলেটরই লাগবে তোমার, বললেন অ্যাডমিরাল। ওটার ওজন পাঁচ টন।
জিঞ্জির ও ব্রাকেট কাটতে একটা ম্যানিপুলেটর আর্ম লাগবে আমার।
কিন্তু একটা আর্ম বোমটার ভার সহ্য করতে পারবে বলে মনে হয় না।