চাঁদের আলোয় সি-ফাইভ গ্যালাক্সিকে পরিষ্কার চিনতে পারল ও, বিগ বেনকে ঘিরে চক্কর দিচ্ছে। অ্যাডমিরাল টয়লেট থেকে অ্যালকে বের করেছেন কিনা ভাবল। মনে মনে হাসল ও, অসহায় বোদ করা ছাড়া আর কিছু করার নেই অালের।
আকাশ থেকে পানির দূরত্ব মাপা দিনের বেলা অত্যন্ত কঠিন, রাতে প্রায় অসম্ভব। তবে ঢেউয়ের মাথার চাঁদের আলো প্রতিফলিত হতে দেখে পিট আন্দাজ করল আর পনেরো সেকেন্ডের মধ্যে পানিতে পড়বে ও। সিটটা কাত করে নিল, অতিরিক্ত প্যাডের ওপর স্থির হলো সেটা। সি-ফাইভের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল একবার, যদিও জানে প্লেন থেকে কেউ ওকে দেখতে পাচ্ছে না।
অকস্মাৎ ঝাঁকি খেল বিগ বেন, জোড়া ঢেউয়ের মাঝখানে পড়ল। সাগরের পানিতে বেশ বড় একটা গর্ত তৈরি হলো, পাঁচিলগুলো গোলাকার। তারপরই পানির নিচে ডুব দিল বিগ বেন।
প্যারাসুট থাকায় আশঙ্কার চেয়ে কমই লাগল ধাক্কাটা, পিটের কোনো হাড় ভাঙল না বা কোথাও সরেও গেল না। সিটটাকে খাড়া করে নিল ও, প্রতিটি পাওয়ার সিস্টেম চেক করল। ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলে সবুজ আলো জ্বলছে দেখে খুশি হয়ে উঠল মন। কমপিউটার মনিটর জানিয়ে দিল, কোথাও কোনো যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয় নি। বাইরের আলো জ্বালাল, আলোটাকে তাক করল ওপর দিকে। দুটো প্যারাসুট মেলা অবস্থায় রয়েছে, তৃতীয়টা মোচড় খেয়ে জড়িয়ে গেছে লাইনের সঙ্গে।
কমপিউটর স্ক্রীনের ওপর চোখ, নির্দিষ্ট বোতামে চাপ দিয়ে নামার গতি জেনে নিল পিট। স্ক্রীনের ওপর দিয়ে মিছিল করে এগিয়ে গেল সংখ্যাগুলো, জ্বলে উঠল লাল ওয়ার্নিং সিগন্যাল। প্রতি মিনিটে একষট্টি মিটার নামছে বিগ বেন। কিন্তু নামার গতি হিসেবে করা হয়েছিল, খুব বেশি হলে বিয়াল্লিশ ছাড়াবে না। প্রতি মিনিটে উনিশ মিটার দ্রুত নামতে বিগ বেন।
এতে ব্যস্ত যে কথা বলতে পারবে না? পিটের এয়ারফোনে অ্যাডমিরালের যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর।
ছোট্ট একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে, জবাব দিল পিট।
প্যারাসুট? জানতে চাইলেন অ্যাডমিরাল, কী শুনতে হবে ভেবে উদ্বেগ বোধ করলেন।
একটা লাইনের সাথে জড়িয়ে গেছে, ফলে নামার গতি বেড়ে গেছে আমার।
স্পীড?
একষট্টি।
নট গুড।
সব কথা শুনতে চাই আমি।
ল্যান্ডিং সাইটটা বেছে নেওয়া হয়েছে জায়গাটা সমতল এবং নরম পলিমাটি দিয়ে তৈরি বলে। তোমার গতি বেশি হলেও, পানিতে নামার সময় যেরকম ধাক্কা খেয়েছ তারচেয়ে কমই লাগবে।
ধাক্কার কথা ভাবছি না, বলল পিট, তাকিয়ে আছে কমপিউটার মনিটরে। ভাবছি ত্রিশ টন বিগ বেন দশ মিটার নরম কাদায় না ডুবে যায়। বিগ জনের মতো এটার স্কুপ নেই যে মাটি খুঁড়তে পারবে।
আমরা তোমাকে মাটি খুঁড়ে বের করে আনব, প্রতিশ্রুতি দিলেন অ্যাডমিরাল।
কিন্তু অপারেশনের কী হবে?
এতো নিচু গলায় কথা বললেন অ্যাডমিরাল, কোনো রকমে শুনতে পেল পিট, অপারেশন বাতিল করা হবে।
হোল্ড অন! অকস্মাৎ বাধা দিল পিট। মনিটরে সাগরের তলা দেখতে পাচ্ছি।
অন্ধকার থেকে কালো কুৎসিত তলদেশ দ্রুতবেগে উঠে আসছে। স্পঞ্জ থেকে একটা আঙুলের মতো করে ডুবে গেল বিগ বেন। ঠাণ্ডা কালো পানিতে ফুলে-ফেঁপে উঠল একটা বিশাল মেঘ, অন্ধকার হয়ে গেল চারদিক।
সি-ফাইভে কালো হয়ে গেল অ্যাডমিরাল ও অ্যালের চেহারা, ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে ওরা পিটের গলা শোনার জন্যে।
বিগ বেন কাদার ভেতর পুরোপুরি চাপা পড়ে গেছে কিনা বুঝতে পারল না পিট। ও শুধু দৃঢ় একটা চাপ অনুভব কর। চারদিকের সমস্ত দৃশ্য অদৃশ্য হয়েছে। ক্যামেরা ও বাইরের আলোয় শুধু বাদামি ও খয়েরি কাদা দেখা গেল। ভাগ্য ভালো যে প্যারাসুটগুলো স্রোতের টানে বিগ বেন-এর একপাশে সরে গেছে। বোতাম টিপে শুটের লাইনে আটকানো হুকগুলো খুলে নিল পিট। তারপর নিউক্লিয়ার পাওয়ার সিস্টেম চালু করল, যাতে সিধে হয়ে সামনে এগোতে পারে বিগ বেন। কাপুনিটা অনুভব করল ও, বিশাল ট্রাক্টর বেল্ট মাটি কামড়ে ঘুরতে শুরু করেছে। বেল্ট ঘুরছে, তবে বিগ বেন সামনে বাড়ছে বলে মনে হলো না।
কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল। তারপর হঠাৎ ঝাঁকি খেল বিগ বেন, কাত হয়ে পড়ল ডান দিকে। কন্ট্রোল অ্যাডজাস্ট করে বাহনটাকে সিধে করে নিল পিট। অনুভব করল, একটু একটু করে সামনে এগোচ্ছে। ক্রমশ বাড়ছে গতি।
হঠাৎ করেই কাদার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে দ্রুত বেগে ছুটল বিগ বেন। চারপাশের পানি খোলা। আরো পঞ্চাশ মিটার এগোবার পর দৃষ্টিসীমা বাড়তে শুরু করল, ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে আসছে পানি।
পেশী ঢিল করে দিয়ে বসে আছে পিট, আপন গতিতে এগিয়ে চলছে বিগ বেন। খানিক পর অ্যাডমিরাল ও অ্যালের সঙ্গে যোগাযোগ করল ও। জানাল, ডেনিংস ডেমনস-এর দিকে রওনা হয়ে গেছে।
.
৬৮.
সকাল দশটার দিকে জেমস স্যানডেকারের মেসেজ নিয়ে হোয়াইট হাউসে ঢুকলেন রেইমন্ড জর্ডান। শাওয়ার সেরে কাপড় পাল্টে এইমাত্র বেডরুমে ঢুকেছেন প্রেসিডেন্ট। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাইয়ের নট বাঁধছেন, সিচুয়েশন রুম থেকে খবর এল।
বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত, মি. প্রেসিডেন্ট, সবিনয়ে বললেন রেইমন্ড জর্ডান। ভাবলাম শুনে খুশি হবেন যে অপারেশনটা সুন্দরভাবে শুরু হয়েছে। বিগ বেনকে নিয়ে ডেনিংস ডেমনস-এর দিকে রওনা হয়ে গেছেন ডার্ক পিট।