অশুভ ভবিষ্যদ্বাণী করার প্রবণতা, ব্যাখ্যা করল পিট।
খোশ মেজাজে কাঁধ ঝাঁকাল অ্যাল। আমি শুধু নির্ভেজাল অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছিলাম।
বিধ্বস্ত একটা প্লেন থেকে কীভাবে বোমাটাকে বের করব আমরা? জানতে চাইল পিট। ফাটাবোই বা কীভাবে?
দুজনের হাতেই একটা করে ফোল্ডার ধরিয়ে দিলেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। ফটো, ডায়াগ্রাম ও নির্দেশ, সব মিলিয়ে প্রতিটি ফোল্ডারে চল্লিশটা করে পাতা। ওগুলোর ভেতর সব দেওয়া আছে। এখান থেকে ড্রপ জোনে পৌঁছুতে সময় লাগবে, সেই ফাঁকে পড়ে নিতে পারবে।
প্রায় পঞ্চাশ বছর পানিতে পড়ে রয়েছে বোমাটা, দোমড়ানো মোচড়ানো একটা প্লেনের ভেতর। কীভাবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব, এখনো ওটা ফাটবে?
পিরামিড়ার স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ফটোতে দেখা গেছে, ফিউজিলাজটা সম্পূর্ণ অক্ষত। তার মানে বোমাটারও কোনো ক্ষতি হয় নি। প্রয়োজনে দীর্ঘদিন পানিতে ফেলে রেখে, ব্যবহার করার সময় ভোলা হবে, এ কথা ভেবেই বোমাটার ডিজাইন করা হয়েছিল। ওটার ব্যালিস্টিক কেসিং-এর আর্মারড উপাদানগুলো এমনভাবে বাছাই করা হয়েছে, ভেতরে যাতে পানি ঢুকতে না পারে। ওটা যারা তৈরি করেছিল, তাদের মধ্যে দু একজন আজও বেঁচে আছে, তারা কসম খেয়ে বলছে, সাগরের তলায় আরও পাঁচশো বছর থাকলেও ফাটবে ওটা।
মুখ হাঁড়ি করে জানতে চাইল অ্যাল, একটা টাইমার থাকবে, আশা করি?।
বিস্ফোরণের আগে এক ঘণ্টা সময় পাবে তোমরা, জবাব দিলেন স্যানডেকার। বিগ জনের চেয়ে বিগ বেন-এর গতি বাড়ানো হয়েছে। বিস্ফোরণের ধাক্কা এড়ানোর জন্যে যথেষ্ট দূরে আসতে পারবে তোমরা।
যথেষ্ট দূরে মানে কত দূরে? জানতে চাইল পিট।
বারো কিলোমিটার।
শেষ ফলাফল কী?
ধারণাটা হলো, সাগরের তলায় পুরানো অ্যাটমিক বোমাটার সাহায্যে একটা কৃত্রিম ভূমিকম্প সৃষ্টি করা। ভূমিকম্পের ফলে সাগরের তলায় কিছু ঘটনা বা বিপর্যয় ঘটবে, ঠিক যে ধরনের ঘটনা বা বিপর্যয় উইনাকে ধ্বংস করেছিল।
তাতে সোসেকি দ্বীপের কি এমন ক্ষতি হবে? জানতে চাইল পিট।
কয়েক মিলিয়ন বছর আগে সোসেকি দ্বীপ তৈরি হয়েছে একটা আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে। আগ্নেয়গিরিটা বিস্ফোরিত হয়েছিল জাপানের উপকুল ঘেঁষে, লাভা বিস্তৃত হয় সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত। এক সময় এই বিশাল লাভা জাপানের মেইনল্যান্ডের একটা বাহু ছিল, পানির ওপর দুশো মিটার পর্যন্ত জেগে ছিল। তবে লাভার নিচে রয়েছে প্রাচীন নরম পলি নরম পলিতে ডেবে যেতে শুরু করে লাভার বিস্তৃতি, এক সময় শুধু চুড়াটা ছাড়া বাকিটুকু তলিয়ে যায় পানির তলায়।
সেই চুড়াই আজ সোসেকি দ্বীপ?
হ্যাঁ।
তার মানে আমরা ধরে নিচ্ছি, শক ওয়েভ ও ভুমিকম্প দ্বীপের নিচের পলিমাটিকে দুর্বল করে তুলবে, দ্বীপটা বসে যাবে আরো নিচের দিকে?
হ্যাঁ।
কিন্তু ব্যাপারটা অতিরিক্ত সহজ বলে মনে হচ্ছে।
মাথা নাড়লেন স্যানডেকার। আরো ব্যাপার আছে। শুধু শক ওয়েভে কাজ হবে না। সে জন্যেই ফাটাবার আগে প্লেন থেকে খানিক দূর সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে বোমাটাকে।
সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে কোথায়?
দ্বীপের সাথে সমান্তরালভাবে এগিয়েছে একটা গভীর ট্রেঞ্চ, সেই ট্রেঞ্চের চালে। সাবওশেন শক সৃষ্টি করা ছাড়াও, আমরা আশা করছি অ্যাটমিক বিস্ফোরণের ফলে ট্রেঞ্চের পাঁচিলও বেশ খানিকটা ভেঙে পড়বে। কয়েক মিলিয়ন টন পলিমাটির ধস আর শক ওয়েভ, দুটো মিলে প্রচণ্ড একটা ধ্বংসাত্মক শক্তি তৈরি করবে।
অর্থাৎ একটা সিসমিক সী ওয়েভ তৈরি হবে, বলল পিট।
সিসমিক শকে দ্বীপটা ডুবতে শুরু করবে, বলে চলছেন অ্যাডমিরাল, তারা ওটাকে ধাক্কা দেবে জলোচ্ছ্বাস। কমপিউটার থেকে জানা গেছে, দশ মিটার উঁচু হবে ওটা, গতি হবে ঘণ্টায় চারশো কিলোমিটার। সোসেকি দ্বীপের সারফেসে যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে, সব ডুবে যাবে ড্রাগন সেন্টার সহ।
দৈত্যটাকে মুক্ত করব আমরা? জানতে চাইল অ্যাল। আমরা দুজন?
তোমরা দুজন আর বিগ বেন। ওটাকে মডিফাই করা হয়েছে।
চার্টের দিকে তাকিয়ে দূরত্বটুকু আন্দাজ করার চেষ্টা করল পিট। আন্ডারওয়াটার ট্রেঞ্চের ঢাল, যেখানে বোমাটা ফাটানো হবে বলে চিহ্ন এঁকে রাখা হয়েছে, সেখান থেকে বম্বারটার দূরত্ব হবে আটাশ কিলোমিটার। প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছরের পুরানো একটা অ্যাটম বোমাকে অচেনা ও দুর্গম সাগরের তলা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া সহজ বা ঝুঁকিবিহীন কাজ হবে না।
বোমাটা ফাটল, তারপর কী হবে? জানতে চাইল পিট।
বিগ বেনকে নিয়ে কাছাকাছি তীরে চলে আসবে তোমরা, ওখানে একটা। স্পেশ্যাল ফোর্স টিম তোমাদেরকে উদ্ধার করার জন্যে অপেক্ষা করবে।
বড় করে শ্বাস নিল পিট।
আর কোনো প্রশ্ন, পিট? জানতে চাইলেন অ্যাডমিরাল।
পিটের চোখে সংশয় ও সন্দেহ। এরকম উদ্ভট অপারেশনের কথা জীবনে কখনো শুনি নি আমি। এ যেন স্বেচ্ছায় মরতে চাওয়া।
.
৬৬.
সি-ফাইভ গ্যালাক্সি প্রতি ঘণ্টায় চারশো ষাট কিলোমিটার বেগে ছুটছে। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে সন্ধ্যে নেমে এলো। কার্গো বে-তে বিগ বেন-এর ইলেকট্রনিক ও পাওয়ার সিস্টেম চেক করছে অ্যাল। স্যানডেকার কাজ করছেন অফিস কমপার্টমেন্টে, সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করছেন, সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও জর্ডানের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন রেডিওতে। হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে গলদঘর্ম হচ্ছেন তাঁরা। সী ফ্লোর জিওলজি সম্পর্কে নতুন তথ্য পাবার জন্যে জিওফিজিসিস্টদের সঙ্গে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন অ্যাডমিরাল। ওদের সঙ্গে পার্সিভাল ন্যাশও আছেন। প্লেনটা থেকে বোমাটা কীভাবে সরাবে, তারপর কীভাবে ফাটাবে, সে সম্পর্কে পিটের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন ভদ্রলোক।