বয়স চৌত্রিশ, যদিও দেখে আরও অনেক কম মনে হয়। এক সময় ক্যালিফোর্নিয়া সৈকতে সোনালি মেয়ে বলে খ্যাতি অর্জন করেছিল সে, মডেল হিসেবে তার সাফল্য রীতিমত ঈর্ষা করার মতো। তখনই সৌখিন ফটোগ্রাফারদের দলে নাম লেখায়। লেখাপড়া শেষ করার পর একদল মেরিন ফটোগ্রাফারের সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বেরুল, পানির তলায় এমন সব জায়গার ছবি তুলবে যেখানে আগে কখনও কোন ক্যামেরা পৌঁছায়নি। ফটোগ্রাফার হিসেবে ওল্ড গার্টে তার উপস্থিতি আসলে একটা কাভার।
গম্বুজের ডানদিকের সিটটায় বসল সে, সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়িয়ে একটা বোতামে চাপ দিলেন প্লাঙ্কেট। ক্রেন অপারেটর ধীরে ধীরে পানিতে নামিয়ে দিল সাবমারসিবলকে।
ঢেউগুলো এখন এক কি দেড় মিটার উঁচু। একটা ঢেউয়ের মাথায় নেমে নিচের দিকে কাত হয়ে পড়ল ওল্ড গার্ট। লিফট কেবল ইলেকট্রনিক সঙ্কেতের সাহায্যে রিলিজ করা হল। শেষবারের মতো বাইরে থেকে সাবমারসিবলকে চেক করল কয়েকজন ড্রাইভার।
পাঁচ মিনিট পর জিমি নক্স, সারফেস কন্ট্রোলার, পাঙ্কেটকে রিপোর্ট করলেন, পানি নিচে এখন নেমে যেতে পারে ওল্ড গার্ট। ভরা হলো ব্যালাস্ট ট্রাঙ্ক, পানির ওপর থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল সাবমারসিবল। শুরু হলো অভিযান।
অত্যাধুনিক হলেও, পুরানো ও প্রচলিত পদ্ধতিতেই নিচে নামতে হয় ওল্ড গার্টকে ব্যালাস্ট ট্যাঙ্ক পানিতে ভরে। ওঠার সময় বিভিন্ন আকারের ভারী লোহা পানিতে ফেলে দেয়া হয়। অস্বাভাবিক গভীরতায় পানির চাপ এত বেশি যে চলতি পাম্প টেকনলজি কোন কাজে আসবে না।
তরল জগতে দীর্ঘ পতন, সম্মোহন তুল্য একটা ঘোরের ভাব এনে দেয় স্টেসির মনে। সারফেসে ছড়িয়ে থাকা আলোয় প্রথম দিকে সব কয়টা রঙই দেখতে পাওয়া যায়, তারপর এক এক করে বিদায় নেয়, ওগুলো, থাকে শুধু নিখাদ কালো।
গম্বুজের সামনে প্রত্যেকের আলাদা কন্ট্রোল কনসোল ছাড়াও, গম্বুজের বাইরের দৃশ্য একশো আশি ডিগ্রি পর্যন্ত দেখার জন্যে স্বচ্ছ পলিমার ও টাইটেনিয়াম মোড়া একটা জানালা রয়েছে। কালো পানিতে মাঝে মধ্যে দুএকটা আলোকিত মাছ দেখা যাচ্ছে, যদিও সেদিকে কোন খেয়াল নেই ড. স্যালাজারের। সাগরের তলায় কি দেখতে পারবেন, সেটাই তার একমাত্র চিন্তা। প্লাঙ্কেট গভীরতা ও লাইফ-সাপোর্ট ইন্সটুমেন। মনিটর করছেন। চাপ প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে, সেই সঙ্গে কমে যাচ্ছে তাপমাত্রা।
জরুরি অবস্থার জন্যে ইনভিনসিবল-এ দ্বিতীয় কোন সাবমারসিবল নেই। সাগরের তলায় অনেক রকম বিপদ ঘটতে পারে। ওল্ড গার্ট পাথরের ফাটলে আটকা পড়তে পারে, যন্ত্রপাতিতে ত্রুটি দেখা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে পানির ওপর উঠে আসতে পারবে না ওরা। এরকম কোন বিপদে পড়লে বাঁচার একমাত্র উপায় কন্ট্রোল গম্বুজটাকে ছাড়িয়ে আলাদা করে নেয়া, বিরাট একটা বুদ্বুদের মত ওপরে ভেসে উঠবে সেটা। তবে পদ্ধতিটা জটিল, হাইপ্রেশার কন্ডিশনে কখনও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। পদ্ধতিটা যদি কোন কারণে ব্যর্থ হয়, উদ্ধার পাবার কোনই আশা নেই, অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবে সবাই।
ঈলের মতো লম্বা একটা আলোকিত মাছ দেখে ভিডিও ক্যামেরা চালু করল স্টেসি। ভাবতে পারেন, বিশ ফুট লম্বা ওটা! খানিক পর বোতাম টিপে বাইরের আলো জ্বালাল সে, পালিয়ে গেল কালো অন্ধকার, তার জায়গায় সবুজ একটা আভা ছড়িয়ে পড়ল পানিতে। ওল্ড গার্ট-এর বাইরে গভীর সাগর সম্পূর্ণ খালি, প্রাণের কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। ব্যাটারির শক্তি বাঁচানোর জন্যে আলোটা নিভিয়ে দিল স্টেসি।
গুম্বজের ভেতর ঠাণ্ডা লাগছে ওদের। হাতের রোম খাড়া হচ্ছে, দেখতে পেল স্টেসি। দুহাতে কাঁধ আঁকড়ে ধরে শীতে কেঁপে ওঠার একটা ভঙ্গি করল সে। সংকেতটা বুঝতে পেরে ছোট একটা হিটিং সিস্টেম চালু করলেন প্লাঙ্কেট, যদিও তীব্র শীত তাড়াবার জন্যে যথেষ্ট নয় ওটা।
সাগরের তলায় পৌঁছাতে দুঘণ্টা লাগবে ওদের। যে যার কাজে ব্যস্ত না থাকলে সময়টা কাটানো কঠিন হত। সোনার মনিটর ও ইকো সাইন্ডারের দিকে তাকিয়ে আছেন, প্লাঙ্কেট, একটা চোখ রেখেছেন ইলেকট্রিক্রাল ও অক্সিজেন লেভেল গজ-এর ওপর। তলায় পৌঁছাবার পর কিভাবে অনুসন্ধান চালাবেন, তার একটা নকশা তৈরি করছেন ড. রাউল স্যালাজার। স্টেসি নিজের ক্যামেরা ইকুইপমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত।
ইনভিনসিবল থেকে জিমি নক্স, সারফেস কন্ট্রোলারের গলা ভেসে এল আন্ডার ওয়াটার আকুটিকস টেলিফোনে, ভৌতিক লাগল ওদের কানে। দশ মিনিটের মধ্যে তলায় পৌঁছে যাবেন আপনারা, বললেন তিনি।
হ্যাঁ, জবাব দিলেন প্লাঙ্কেট। সোনার তা বলছে।
কাজ থেকে মুখ তুলে সোনার স্ক্রীনে তাকাল স্টেসি, তাকালেন স্যালাজারও। স্ত্রীন থেকে পানির দিকে, তারপর আবার স্ক্রীনের দিকে চোখ ফেরালেন প্লাঙ্কেট। সোনার ও কমপিউটারের ওপর বিশ্বাস আছে তার, তবে নিজের চোখের চেয়ে বেশি নয়।
সাবধান হোন, সর্তক করে দিলেন জিমি নক্স। এটা ক্যানিয়ন ওয়াল-এর পাশে নামছেন আপনারা।
দেখতে পেয়েছি, জানালেন প্লাঙ্কেট। পাঁচিলটা চওড়া একটা উপত্যকার দিকে ঢালু হয়ে নেমে গেছে। হাত বাড়িয়ে একটা বোতামে চাপ দিলেন, খালি হয়ে গেল একটা ব্যালাস্ট, ওদের নামার গতি খানিকটা কমল। তলা থেকে ত্রিশ মিটার উপরে রয়েছে, আরেকটা ব্যালাস্ট খালি করা হলো। প্রায় স্থির হয়ে গেল সাবমারসিবল।